বিনোদন ডেস্ক : সীমা সচদেব খান। সাধারণ মানুষের কাছে এই নামটা অতটা পরিচিত না হলেও বলিউড পাড়ায় অতি পরিচিত। সেলিম খানের ছেলে তথা সুপারস্টার সালমান খানের ছোট ভাই সোহেল খানের স্ত্রী সীমা। পাশাপাশি তিনি বলিউডের একজন নামকরা ফ্যাশন ডিজাইনার। সীমা এখন অবশ্য পরিচিত নাম সোহেলের সঙ্গে বিচ্ছেদের কারণেও।
সংসার সামলানোর পাশাপাশি মুম্বাই এবং দুবাইয়ে থাকা পোশাক সংস্থার দায়িত্বও দু’হাতে সামলেছেন সীমা। ২০২২ সালে সোহেল খানের সঙ্গে বিচ্ছেদের জেরে তিনি খবরের শিরোনামে উঠে আসেন। অনেক দিনই তাদের সম্পর্কে বনিবনা হচ্ছিল না বলে জল্পনা ছিল। তারপরই তাদের বিচ্ছেদের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
শোনা যায়, ছয় বছর ধরে স্বামী সোহেলের সঙ্গে ঘর করছিলেন না সীমা। দীর্ঘদিন ধরেই ছেলেকে নিয়ে আলাদা থাকছিলেন তিনি। তবে সোহেল-সীমার বিয়ের পরিণতি বিচ্ছেদ হলেও তাদের প্রেম কাহিনি হার মানাবে যে কোনো প্রেমের সিনেমার গল্পকেও।
দিল্লির মেয়ে সীমা ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে নিজের কিছু পরিচিতের ভরসায় জীবন গড়ার একরাশ স্বপ্ন নিয়ে চলে আসেন মুম্বাই। মুম্বাই এসে সীমার ঠাঁই হয় সম্পর্কে কাকা অভিনেতা চাঙ্কি পাণ্ডের বাড়িতে। চাঙ্কির দৌলতে বেশ কিছু কাজও জুটে যায় সীমার।
এদিকে চাঙ্কির তখন প্রেম চলছিল বর্তমান স্ত্রী ভাবনার সঙ্গে। বেশ কিছু দিন চুটিয়ে প্রেম করার পর প্রেমিকা ভাবনাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন চাঙ্কি। সেই বিয়েতে চাঙ্কির বাড়িতে বসে চাঁদের হাট। নামি পরিচালক থেকে শুরু করে বড় বড় অভিনেতা উপস্থিত ছিলেন সেই বিয়েতে! ছিলেন সোহেলও।
এই বিয়েবাড়িতেই একে অপরের সঙ্গে দেখা হয় সোহেল এবং সীমার। প্রথম দেখাতেই একে অপরের প্রেমে পড়েন তারা। চাঙ্কি-ভাবনার বিয়ের পরও বেশ কিছু দিন তাদের সঙ্গেই থাকতেন সীমা। এই সময় সোহেলের আমন্ত্রণে খান পরিবারের বাড়ি ‘গ্যালাক্সি’তে যান সীমা। সোহেলের বোন অর্পিতা এবং আলভিরার সঙ্গেও ভালো আলাপ জমে সীমার। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে খান পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গেও।
এর পরই সোহেল এবং সীমা বিয়ে করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বিয়ে করব বললেই তো আর করা যায় না। সোহেলকে বিয়ে করবেন শুনে বেঁকে বসে সীমার পরিবার। কারণ? হিন্দু মেয়ে সীমার সঙ্গে মুসলিম ছেলে সোহেলের বিয়েতে মত দিলে তো সমাজে নাক কাটা যাবে! পাশাপাশি তখন আবার বিভিন্ন কারণে বেশ কিছু বদনাম কুড়িয়েছেন সোহেলের বড় ভাই সালমান।
কাজেই, ওই বাড়িতে মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেয় সীমার পরিবার। পরিবারকে অনেক বুঝিয়েও যখন কাজ হলো না, তখন সোহেলের সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সীমা। রাতের অন্ধকারে সোহেলের হাত ধরে বাড়ি ছাড়েন তিনি। সোজা উপস্থিত হন খান পরিবারের বাড়ি গ্যালাক্সিতে।
রাত তিনটার সময় এই যুগল যখন গ্যালাক্সিতে পৌঁছান, তখন সোহেলের বাবা সেলিম খান ঘুমাচ্ছিলেন। বাড়ির কাজের লোকের ডাকে তার ঘুম ভাঙে। সেলিমকে পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন সোহেল। সব কথা শোনার পর বেঁকে বসেন সেলিমও। তিনি জানান, সোহেল-সীমার বিয়ে হয়নি। তাই তিনি কিছুতেই সীমাকে বাড়িতে রাখতে পারবেন না।
শোনা যায়, সেই সময় সালমানের একাধিক সম্পর্ক নিয়ে যথেষ্ট সমস্যা চলছে। তা নিয়ে যথেষ্ট বিব্রতও ছিলেন সেলিম। তাই তিনি চাচ্ছিলেন না, তার ছোট ছেলেকে নিয়েও নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হোক। তবে সোহেলকে তিনি এও জানান যে, বিয়ে করার পর তারা একসঙ্গে থাকতে পারেন।
একে অপরকে ছেড়ে আর এক মুহূর্তও থাকতে রাজি ছিলেন না সোহেল-সীমা। সিদ্ধান্ত নেন সেই রাতেই বিয়ে করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। বন্ধুদের ফোন করে সোহেল বলেন, খুব তাড়াতাড়ি একজন মৌলবি জোগাড় করে আনতে। ভোররাতে কোনো মৌলবি না পেয়ে শেষমেশ এক মৌলবিকে অপহরণ করে আনেন সোহেলের বন্ধুরা। প্রথমে রেগে আগ্নিশর্মা হলেও পরে বিয়ে পড়ান মৌলবি।
তাদের বিয়ের পর দিনই সোহেল পরিচালিত প্রথম ছবি ‘প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। শোনা যায়, সেই কারণেই সোহেল প্রেমের পরিণতি এমন চেয়েছিলেন যাতে তার পরিচালিত সিনেমার নামের সঙ্গে তার প্রেমের মিল থাকে।
পরে হিন্দু মতেও বিয়ে করেন এই যুগল। নির্বাণ এবং ইয়োহান নামে দুই ছেলে রয়েছে সোহেল-সীমার। কিন্তু যে প্রেমিকের জন্য এক দিন পরিবার ছেড়েছিলেন, শেষমেশ তার সঙ্গেই কিনা বিচ্ছেদ হলো! কেন এই বিচ্ছেদ?
নেটফ্লিক্সে করণ জোহরের শোতে গিয়ে সীমা জানান, তিনি আর সোহেলের সঙ্গে এক বাড়িতে থাকেন না। সোহেল নিজের বাড়িতে থাকলেও তিনি একটি ফ্ল্যাটে ছেলেদের নিয়ে থাকেন। এর পরই একাধিক জল্পনা ভেসে ওঠে। তবে বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর সীমা জানিয়েছিলেন, তারা এক ঘরে না থাকলেও সোহেল রাতে তার কাছেই আসেন।
তবে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায়নি। শেষ পর্যন্ত বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েই যায় সোহেল-সীমার। বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে অনেকে অভিনেত্রী হুমা কুরেশিকে দায়ী করেন। কানাঘুষায় শোনা গিয়েছিল যে, হুমা কুরেশীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল সোহেলের। তা মেনে নিতে পারেননি সীমা।
তবে হুমা দাবি করেন, তার আর সোহেলের সম্পর্কের কথা জল্পনা ছাড়া আর কিছুই না। তিনি মুদস্সর আজিজের সঙ্গে প্রেম করছেন বলেও হুমা জানান। তাহলে ঠিক কী কারণে তাদের বিচ্ছেদ হলো? এই বিষয়ে সীমা বা সোহেল মুখ খোলেননি কখনোই।
মালাইকা আরোরার সঙ্গে মেঝো ভাই আরবাজ খানের বিচ্ছেদের পর সালমান খান চাননি সোহেলেরও বিবাহ বিচ্ছেদ হোক। নিজের তরফ থেকে বহু চেষ্টা করলেও ভাইয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ আটকাতে পারেননি ‘ভাইজান’। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে যে প্রেম পরিণতি পেয়েছিল, তার শেষ হয় কোর্টের কাগজে সই করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।