জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং গঠিত হতে যাওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বেশকিছু দাবি রেখেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। বুধবার (৭ আগস্ট) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে এসব দাবি জানান তিনি।
সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোটা সংস্কার অন্দোলনের ন্যায্যতা নিয়ে দেশের ছাত্র-জনতা যে আন্দোলন করেছে তাদের সঙ্গে আমিও একত্মাতা প্রকাশ করে সোচ্চার ছিলাম। ছাত্র-জনতার ওপর কোনো গুলি না চলে এ আহ্বান আমারও ছিল। অন্যায় এবং অন্যায্যতার বিপরীতে ছাত্র-জনতার বিজয় অর্জিত হয়েছে। এ আন্দোলনে ছাত্র-ছাত্রীসহ অনেক নিরীহ মানুষকে হারিয়েছি। এখনো অনেক মানুষ চিকিৎসাধীন। কিন্তু বিজয় পরবর্তী দেশজুড়ে নানা প্রতিহিংসামূলক এবং সুযোগ সন্ধানীদের তাণ্ডব দেখে লাখো-কোটি মানুষের মতো আমিও ব্যথিত।
সোহেল তাজ দেশের মানুষের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, এ হত্যাযজ্ঞ এবং ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের জন্যই কী ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমেছিল? দেশের সম্পদ এবং ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে আমরা কী বার্তা দিচ্ছি? একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি তীব্র নিন্দা জানাই, যারা ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ভবনে আগুন দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে দিয়ে আমাদের কতটুকু লাভ হলো?
তিনি বলেন, যেসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্যায় করেছে তার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। কিন্তু সবাইকে কেন প্রতিহিংসার মুখোমুখি করছি। মনে রাখতে হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া কোনো সভ্য সমাজ পরিচালনা করা সম্ভব না।
দেশের বর্তমান ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতিতে থেকে সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষা করতে গঠিত হতে যাওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, গত বেশ কয়েকদিন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির, গির্জায় আক্রমণ চালানো হয়েছে। অনেকের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেক মানুষ নিহত এবং আহত হয়েছেন। চারদিকে এমন থমথম পরিবেশে আমরা কী করে বসবাস করবো?
সোহেল তাজ বলেন, সরকার প্রশাসনসহ আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী হত্যা, গুমের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তার পাশাপাশি একজন নিরীহ কর্মীরও এ দেশে বাঁচার অধিকার আছে। যেসবের জন্য আন্দোলন হয়েছিল তার দিকে নজর দিতে হবে। ভিন্নমতকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে।
তিনি বলেন, অন্দোলনকারী ছাত্রদের মতো আমারও দাবি দেশে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। সাম্য এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইনের শাসন নিশ্চিত করা জরুরি।
বিচার ব্যবস্থা, পুলিশ বাহিনী, জনপ্রশাসনকে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখার আহ্বান জানিয়ে সোহেল তাজ বলেন, সব বাহিনীকে পেশাদার বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মেধাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাস্তব উপযোগী করতে হবে। দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক ব্যবহারমুক্ত রাখতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নিশ্চিত করতে হবে। গুম, হত্যার রাজনীতি বন্ধে আন্তরিক হতে হবে।
তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে দেশ এক গভীর সংকটের সম্মুখীন হবে। গত কয়েকদিনে যেসব ক্ষতি হয়েছে তা কোনোদিন পূরণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু এখনই সব প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে একটি বার্তা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের কোনো শাসকই ইচ্ছা-খুশিমতো দেশে চালাতে পারবে না। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে আবারও তারুণ্য গর্জে উঠবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার তারুণ্যদীপ্ত যেন আমরা মনে রাখি। কোনো শাসকের অন্যায় দাবি মেনে নেবে না বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা। আসুন আমরা সব হানাহানি ভুলে গিয়ে নতুন করে আমাদের দেশকে গড়ে তুলি। বাংলাদেশ আমাদের সবার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।