আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গ্রীষ্মের রৌদ্রতপ্ত আবহওয়ায় অস্থির জনজীবন। চারদিকে হাঁসফাঁস অবস্থা। প্রচণ্ড গরমে কোথায় গিয়েও শান্তি নেই। এবারের গরমে নাজেহাল অবস্থা ভারতে। রেকর্ড ব্রেকিং তাপমাত্রা দেখা গেছে দেশটিতে। ফলে তাপের তীব্রতা কমিয়ে গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে পুরোনো প্রথায় ফিরে গেল ভারত। প্রাচীনকালের মৃৎশিল্পের অভিনব পদ্ধতি ‘টেরাকোটাকে’ দিলো নতুন রূপ। অতিষ্ঠ দাবদাহে মাটির ‘এয়ারকুলারে’ কিছুটা হলেও আরাম পাচ্ছে অনেকে।
বাষ্পীভূত শীতলকরণের নীতির ওপর ভিত্তি করে পরিবেশ শীতল করা হয়। এ পদ্ধতিতে মাটির তৈরি পোড়ানো পাত্রগুলোকে উলটো করে মৌচাক আকৃতিতে দেওয়ালের সঙ্গে রাখা হয়। স্বাভাবিকভাবেই মাটির পাত্রে পানি ঠান্ডা থাকে। সেই চিন্তাকে কাজে লাগিয়েই পুনঃব্যবহৃত পানি পোড়ামাটির পাত্রগুলোর ওপর ঢালা হয়। এরপর পোড়ামাটির ভেতর পানি বাষ্পীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের পরিবেশ শীতল হয়ে ওঠে। বিবিসি।
মাটির পাত্র দিয়ে চারপাশ ঠান্ডা রাখার অভিনব কৌশলটি দিল্লির ‘অ্যান্ট স্টুডিও’ ফার্মের স্থপতি মনীশা সিরিপুরাপুরের মাথায় আসে। ২০১৪ সালে তার ক্লায়েন্ট এক ধরনের সমস্যায় পড়েছিলেন। তাদের প্রাঙ্গণে একটি ডিজেল জেনারেটর দুটি বিল্ডিংয়ের মধ্যবর্তী স্থানে অত্যধিক গরম বাতাস ছড়াচ্ছিল। ফলে এর থেকে নির্গত তাপ ভেতরে থাকা কর্মীদের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছিল।
সেসময় অনেকেরই মাথাব্যথা এবং বমি বমি ভাবসহ শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। তখনই মনীশার মাথায় টেরাকোটা নিয়ে কাজ করার বিষয়টি আসে। তিনি বলেন, ‘আমি চিন্তা করেছিলাম মাটির পাত্রে পানি স্বাভাবিকভাবেই শীতল হয়।
কেননা সেই পানি কিছুটা বাষ্পীভূত হয়ে পাত্রের তাপ শুষে নেয়। কিন্তু আমি যদি সেই প্রক্রিয়াটিকে উলটে দেই তাহলে কী হবে? এরপর মাথায় আসে এই প্রক্রিয়ায়ই চারপাশের বাতাসকে ঠান্ডা করা যেতে পারে।’ এ প্রক্রিয়ার জন্য ৮০০-৯০০টি পোড়ামাটির শঙ্কু তৈরি করা হয়েছিল। এরপর মৌমাছির চাকের মতো করে সাজানো হয়েছিল। এমনভাবে পাত্রগুলোর স্তূপ তৈরি করা হয়েছিল যা আশপাশের পৃষ্ঠকে সমভাবে শীতল করে। প্রথম এই মৌচাক বসানোর পর থেকে কোম্পানি পুনে থেকে জয়পুর পর্যন্ত সারা দেশে স্কুল, পাবলিক স্পেস, বিমানবন্দর এবং বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে ৩৫টি কুলিং টাওয়ার তৈরি করেছে।
বর্তমানে তারা মৌচাকের ডিজাইন নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে, যা বিভিন্ন আকারে পোড়ামাটির স্তূপীকরণ করে। এমনকি তারা এমনও প্রক্রিয়া আনতে চাচ্ছে যাতে একেবারেই পানির প্রয়োজন না। এরপর গবেষকরা পোড়ামাটির কুলিং প্রোটোটাইপ নিয়েও পরীক্ষা করেছেন। এরপর এই প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে ভারতের মহারাষ্ট্রের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্ররা একটি পোড়ামাটির এয়ার কন্ডিশনার তৈরি করেছিল। যাতে ভেজা পোড়ামাটির ওপর দিয়ে বাতাস বের করে দেওয়ার জন্য একটি পাখা ব্যবহার করা হয়েছিল।
মনীশা সিরিপুরাপুর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন স্থপতিরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন এবং আরও পরিবেশবান্ধব জীবনধারা তৈরি করার জন্য তাদের কঠোর প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তার মতে, যেহেতু এ বিষয়টির সঙ্গে আর্থিক অবস্থাও জড়িত, তাই কম খরচে কিভাবে পরিবেশের সঙ্গে যুতসই কোনো আবিষ্কার করা যায় তার দিকে স্থপতিদের অধিক মনোযোগী হওয়া উচিত।
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.