দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ না বইলেও প্রচণ্ড ঠান্ডায় ঢাকাসহ সারাদেশে জনজীবন পর্যুদস্ত। ভোর ও রাতের দিকে হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশার কারণে ঘর থেকে বের হওয়াই অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। হাটবাজার, নির্মাণকাজ এবং উন্মুক্ত স্থানে কাজ করা শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দেশে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পার্থক্য গত দু-তিন দিনে কমে গেছে। বাতাসের গতিবেগও বেড়েছে। সেই সঙ্গে ওপরের ঠান্ডা বাতাস ভূমির দিকে নেমে এসেছে– মূলত এই তিন কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। জানুয়ারিজুড়েই শীতের এই প্রকোপ থাকবে।
আবহাওয়াবিদরা আরও বলছেন, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আসে, সেখানে শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। পার্থক্য যদি ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে তবে শীতের অনুভূতি প্রকট থেকে প্রকটতর হয়। অর্থাৎ হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হয়।
গতকাল সোমবার বিভিন্ন জেলার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তুলনা করে দেখা গেছে, বেশির ভাগ অঞ্চলেই তাপমাত্রার পার্থক্য ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম। ঢাকায় এই পার্থক্য গতকাল নেমে এসেছে ১ দশমিক ৭ ডিগ্রিতে। বেশির ভাগ জেলাতেই সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীতের অনুভূতি বাড়ছে। কোথাও কোথাও তা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা।
নিয়ম অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আর ৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। ৪ ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
আপাতভাবে কিশোরগঞ্জের নিকলীই শুধু ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস আছে। শীতের তীব্রতা সারাদেশেই অনুভূত হচ্ছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাতাসের গতিবেগ। কুয়াশার কারণে সূর্যের আলো না পাওয়ায় মাটি গরম হচ্ছে না। এজন্য শীতের তীব্রতা বেশি।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, বাতাসের গতিবেগ তুলনামূলক একটু বেশি থাকার কারণে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং ঢাকার পশ্চিমাঞ্চল ও খুলনার ওপরের দিকে যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা– এসব অঞ্চলে শীতের অনুভূতি তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এ ছাড়া ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাস খুব ঠান্ডা হওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘জেড স্ট্রিম’ বা প্রচণ্ড গতিবেগসম্পন্ন বাতাস কখনও নিচে নেমে আসছে, কখনও ওপরে উঠে যাচ্ছে, যেটা ভাইব্রেট (কম্পন) হচ্ছে। অর্থাৎ ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাসের নিম্নমুখী বিচরণ হচ্ছে। এই নিম্নমুখী বিচরণও অনেক সময় শীতের অনুভূতিকে বাড়িয়ে দেয় বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ।
গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলীতে, ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
রাজধানীতে দিন দিন শীতের প্রকোপ বাড়ছে। গতকাল ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি। দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। ঠান্ডা বাতাসে নগরজুড়ে শীতের তীব্রতা অনুভূত হয়েছে। রাতের দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরেছে। ঢাকায় রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি কমে গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।


