জুমবাংলা ডেস্ক : খেয়েপরে জীবন বাঁচানোর তাগিদে অলস সময় কাটানোর যেন কোনো সুযোগ নেই চরাঞ্চলের মানুষের। নারী, পুরুষ সবাইকে কাজ করতে হয় মাঠে। বাদ যায় না শিশু কিশোররাও। স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি বাবা-মাকে তারা সঙ্গ দেয় ক্ষেত খামারসহ আনুষঙ্গিক কাজকর্মে। রোদে পুড়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে কাজের কাজী হয়ে ওঠে শিশু কিশোররা কবি সুকুমার রায়ের ‘পাকাপাকি’ কবিতার প্রতিচ্ছবি রূপে।
তেমনই এক সাত বছরের শিশুর দেখা মিললো গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেকরির চর গ্রামের শেষ প্রান্তে। নাম মো. সজিব মিয়া। মাত্র কুড়ি (২০) টাকা দিয়ে দোকান শুরু করায় তার নাম হয়েছে এখন ‘বিশ টাকার দোকানি।’
উপজেলা সদর থেকে তিস্তা বাজার হয়ে একটু পূর্ব দিকে গিয়ে সোজা উত্তর দিকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দুর্গম মেঠোপথ পাড়ি দিলে তবেই পাওয়া যাবে সজিব মিয়ার সেই কুড়ি টাকার দোকান।
কৃষি শ্রমিক বাবা আমজাদ হোসেনের বাড়ি ছিল হরিপুর ইউনিয়নের চর চরিতাবাড়ি গ্রামের হাজারির হাট এলাকায়। বারবার তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটেমাটি হারা হয়ে অবশেষে ঠাঁই নিয়েছেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেকরির চর ও কুড়িগ্রামের উলিপুরের চর বিরহিম সীমান্তের ধুধু বালুচরে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাট খড়ির ছাউনি ও বেড়া দিয়ে তৈরি সজিবের দোকান ঘর। তাতে নেই কোনো পাটাতন। মাটির মধ্যে রয়েছে চটি বিছানো, তাতে বসেই দোকানদারি করে সজিব। দোকানে পাওয়া যায়, পাউরুটি, বনরুটি, সিঙারা, সামুচা, ক্রিমবল, বালুশাসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারি পণ্য। দোকানে পান পাওয়া গেলেও মিলবে না কোনো বিড়ি, সিগারেট বা জর্দা। রয়েছে পানি পানের জন্য জগ ও গ্লাস। ক্রেতা বলতে ওই মাঠে কাজ করা কৃষক আর শ্রমিক। আশপাশে কোনো দোকান না থাকায় দৈনিক বিক্রি হয় প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।
দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া সজিব মায়ের দেওয়া টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে জমাতে পেরেছিল মাত্র ২০ টাকা। মাস কয়েক আগে সেই টাকা দিয়ে দোকান শুরু করা এই শিশুর বর্তমানে মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭০০ টাকা।
সজিব মিয়ার মা সুমি আকতার বলেন, ‘ভিটেমাটি নেই আমাদের। অন্যের দেওয়া একচিলতে মাটিতে বাড়ি করেছি। ঘর বলতে ওই একটি চালা আর রান্নার জন্য রয়েছে পলিথিন দিয়ে তৈরি একটি ছাউনি। স্বামীর মতো আমিও মানুষের জমিতে কাজ করি। কখনো কাজ পাওয়া যায় আবার কখনো তাও জোটে না। আমাদের কষ্টের জীবন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সজিব আমাদের একমাত্র সন্তান। সে খুব মিতব্যয়ী। টিফিনের টকা বাঁচিয়ে মাত্র কুড়ি টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে। এখন তা ৭০০ টাকা হয়েছে। সজিব পৃথিবীর কঠোর বাস্তবতা বুঝতে পেরে কিছু একটা করার চেষ্টা করছে এই শিশু বয়সে তাতে আমরা অনেক খুশি।’
দোকানে ক্যামেরা তাক করায় বেশ উৎফুল্ল মনে হলো সজিবকে। এসময় সজিব মিয়া বলেন, ‘মা-বাবার অভাব। মা-বাবাকে সাহায্য করতেই টিফিনের ২০ টাকা দিয়ে এ দোকান শুরু করছি। আমি প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে দোকানে বসি। এতে যা আয় হয় তা মায়ের হাতেই তুলে দেই। দোকান চালাতে আমাকে আমার মা অনেক সাহায্য করেন। তিনি আমাকে বিভিন্ন বিষয় শিখিয়ে দেন, মাঝেমধ্যে তিনিও দোকানে এসে বসেন।’
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সজিব প্রথম দিকে শুধু সিঙারা বিক্রি করতো। সেখান থেকে প্রতি পিস সিঙ্গারায় ১টাকা লাভ হতো তার। লাভের টাকা পরিবারের পরামর্শে আবারো ব্যবসায় বিনিয়োগ করে সে। এভাবে নিজের দোকানে বেকারি পণ্য বাড়াতে শুরু করে সজিব। এছাড়া চর অঞ্চলে কোনো দোকান না থাকায় কৃষি জমিতে কাজ করতে আসা কৃষকরা খিদে লাগলে সজিবের দোকানে নাস্তা করতে যায়। এতে সজিবের ভালো ইনকাম হচ্ছে।
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহীম খলিলুল্যাহ বলেন, ওই চরে বসবাসকারী সবাই নিম্নবিত্ত। আমি সজিবের দোকানের বিষয়ে শুনেছি। আমি এই বিষয়ে আরো খোঁজ খবর নিয়ে তাকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
সজিবকে সহায়তায় এগিয়ে আসুন
প্রিয় পাঠক, সজিবের প্রতি আপনিও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন। আপনার সামান্য সহযোগিতায় সে হয়তো আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। দারিদ্র্য এড়িয়ে সচল থাকবে তার পরিবার। আপনার মহানুভবতায় অটুট থাকবে সজলের ছাত্রজীবন। আমাদের বিশ্বাস পড়াশোনার পাশাপাশি সে তার পরিবারের পাশেও দাঁড়াতে পারবে আপনার মাধ্যমে। সহায়তা পাঠানো যাবে বিকাশের মাধ্যমে। নম্বর: ০১৭৭৯-২৮০২৭৯
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।