রাজধানী ঢাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুনের ঘটনায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। সোমবার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে অগ্নিসংযোগের পর মঙ্গলবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।

সোমবার সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত রাজধানীর অন্তত ৯টি জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ ও ৩টি জায়াগায় বাসে আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া যায়। এরপর সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চারটি বাস ও একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
পাওয়া গেছে ককটেল বিস্ফোরণের খবরও।সূত্রাপুরে যাত্রীবাহী বাসে আগুন : মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুরোনো ঢাকার সূত্রাপুরে ফায়ার সার্ভিসের গেটের সামনে মালঞ্চ পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টার দিকে মালঞ্চ পরিবহনের একটি বাসে আগুন লাগে। দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ৬টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনার সময় বাসটি দাঁড়ানো ছিল।’সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের গেটের সামনে বাসটি পার্কিং করা অবস্থায় ছিল। চালক ও হেলপার খেতে যায়। এই ফাঁকে দুর্বৃত্তরা বাসটিতে আগুন দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
এতে হতাহতের কোনো ঘটনা নেই। দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
ধানমন্ডিতে ককটেল বিস্ফোরণ : রাজধানীর ধানমন্ডির ১১/এ এলাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) তদন্ত সংস্থা কার্যালয়ের সামনে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
ধানমন্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার ভোররাত পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী, ভাটারা ও উত্তরা এলাকায় পার্কিং করা অবস্থায় তিনটি বাস ও একটি প্রাইভেটকারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
অগ্নিকাণ্ডের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ। তিনি জানান, মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত চারটি পৃথক স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সব যানবাহনই তখন পার্কিং অবস্থায় ছিল। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
রাত ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকায় রাজধানী পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর রাত ২টা ৮ মিনিটের দিকে যাত্রাবাড়ীর ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে রাইদা পরিবহনের আরেকটি বাসে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট প্রায় আড়াইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাত ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে ভাটারা এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর সর্বশেষ ভোর ৪টার দিকে উত্তরার সোনারগাঁও জনপদের খালপাড় এলাকায় রাইদা পরিবহনের আরেকটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এর আগে, সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আগারগাঁও, মিরপুর, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। মেরুল বাড্ডা, শাহজাদপুর ও সায়েন্সল্যাব এলাকায় তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর বাইরেও দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে এমন ঘটনা। ঢাকায় এসব ঘটনায় হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় বাসে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে একজন চালকের মৃত্যু হয়েছে।
চলতি নভেম্বর মাসের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত রাজধানীর ১৫টি স্থানে ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৭টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া গত দুই দিনে ৯টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
মঙ্গলবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করছে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায়।
তিনি জানান, গত কয়েকদিনে বিভিন্ন স্থানে ককটেল সদৃশ বস্তু নিক্ষেপ এবং যানবাহনে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও আইন-শৃঙ্খলা বিনষ্টের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
তার ভাষায়, ১ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫টি স্থানে ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গত দুই দিনেই ৯টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় ১৭টি মামলা হয়েছে এবং ২৪ ঘণ্টায় ৫০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে।
আগামী বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করবেন। এই ঘটনাকে ঘিরে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘১৩ তারিখ নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য সহিংসতা বা নাশকতার কোনও গোয়েন্দা তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটি-দুটি ককটেল মোটরসাইকেলে এসে ছুড়ে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) ডেমরায় বাসে আগুন দেওয়ার সময় আমরা একজনকে হাতেনাতে ধরেছি। আশা করছি, মোটরসাইকেলে ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যাওয়া অবস্থায়ও আমরা তাদের ধরতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘১৩ তারিখ নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। রাজধানীবাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একসঙ্গে থাকলে কোনও ধরনের নাশকতা সফল হবে না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



