লাইফস্টাইল ডেস্ক : বাংলাদেশে ভূমি মালিকানা সংক্রান্ত একটি বহুল আলোচিত ও বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন হলো—“সকল প্রকার রেকর্ড খতিয়ান বাতিল”। অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এই ভেবে যে, যদি খতিয়ান বাতিল হয় তাহলে জমির মালিকানা কিভাবে নির্ধারিত হবে? নামজারি কিংবা খাজনা প্রদান কিভাবে সম্পন্ন হবে? আজকের প্রতিবেদনে আমরা এই বিষয়গুলোর বাস্তবতা, ব্যাখ্যা এবং প্রাসঙ্গিক আইনসমূহ তুলে ধরছি।
Table of Contents
খতিয়ান বাতিল: বাস্তবতা বনাম গুজব
প্রথমেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিষ্কার করা জরুরি—বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার কোনো আইনের মাধ্যমে “সকল প্রকার খতিয়ান বাতিল” ঘোষণা করেনি। বরং, প্রতিটি খতিয়ানের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই ভূমির মালিকানা যাচাই করা হয়।
বর্তমানে যে সব খতিয়ান মালিকানা প্রমাণে ব্যবহৃত হয়, সেগুলো হলো:
সিএস (Cadastral Survey)
এসএ (State Acquisition)
আরএস (Revisional Survey)
বিএস (Bangladesh Survey)
বিডিএস (Bangladesh Digital Survey)
প্রতিটি খতিয়ানই একটি নির্দিষ্ট সময়কালের প্রতিনিধিত্ব করে এবং জমির মালিকানা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত।
খতিয়ানের ইতিহাস: কোথা থেকে শুরু?
সিএস খতিয়ান শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনামলে, ১৮৮৮ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত। এরপর পাকিস্তান আমলে এসএ খতিয়ান (১৯৫৬-১৯৬২) এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর আরএস ও বিএস খতিয়ান প্রবর্তিত হয়। ২০২৫ সাল পর্যন্ত, সিএস খতিয়ান প্রায় ১৩৭ বছরের পুরনো।
যদি কোনো ব্যক্তি তার পূর্বপুরুষের জমি বিক্রি করে থাকেন এবং সেই জমি পরবর্তীতে নামজারি করে ক্রেতা দখল করে থাকেন, তাহলে সেই পুরনো খতিয়ান ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারীদের জন্য প্রাসঙ্গিকতা হারায়। তবে একে “আইনগতভাবে বাতিল” বলা সঠিক নয়, বরং “অকার্যকর” বলা যায়।
কখন খতিয়ান কার্যকারিতা হারায়?
যে ব্যক্তি জমি বিক্রি করেছেন, তার নামে থাকা খতিয়ান তার উত্তরাধিকারীদের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে না। তবে, জমি যিনি কিনেছেন, তার পক্ষে সেই খতিয়ান একটি শক্তিশালী দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে।
অর্থাৎ, ক্রয়-বিক্রয়ের ধারাবাহিকতার প্রমাণই আসল। পুরনো খতিয়ান তখনই মূল্যহীন হয়ে পড়ে যখন পরবর্তী মালিকদের দখল ও দলিলের অস্তিত্ব থাকে।
বিডিএস জরিপ ও স্মার্ট খতিয়ান: আধুনিক মালিকানা পদ্ধতি
বর্তমানে সরকার বিডিএস (Bangladesh Digital Survey) এর মাধ্যমে একটি ডিজিটাল মালিকানা ব্যবস্থা চালু করেছে। এখানে প্রতিটি জমির মালিকানা একক ও স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে। মালিকানা স্মার্ট কার্ডে সংরক্ষিত থাকবে এবং সেই স্মার্ট খতিয়ানে জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ‘যোগ’ এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ‘বিয়োগ’ হবে।
এই পদ্ধতির সুবিধা:
মালিকানার তথ্য থাকবে ডিজিটাল স্মার্ট কার্ডে
প্রতারণার সুযোগ কমে আসবে
জমির ইতিহাস হবে স্বচ্ছ ও যাচাইযোগ্য
বিডিএস কি পুরনো খতিয়ানকে বাতিল করে?
না। বিডিএস জরিপ পুরনো খতিয়ান যেমন সিএস, এসএ, আরএস, বিএস খতিয়ানকে বাতিল করে না। বরং, এই ডিজিটাল খতিয়ান তৈরি হচ্ছে পূর্ববর্তী খতিয়ানগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে। ফলে পুরনো দলিল এখনও প্রাসঙ্গিক।
বিডিএস জরিপ অনুযায়ী, আগামী ১০০ বছরে নতুন কোনো খতিয়ান প্রস্তুত করার প্রয়োজন হবে না।
কিছু ব্যতিক্রম: পার্বত্য ও সিলেট অঞ্চল
পার্বত্য জেলা এবং সিলেট অঞ্চলে সিএস খতিয়ান প্রস্তুত হয়নি। সেখানে এসএ খতিয়ানই মালিকানা নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। এই ব্যতিক্রমগুলো ভূপ্রকৃতি ও প্রশাসনিক বাস্তবতার কারণে বিদ্যমান।
উপসংহার: খতিয়ান বাতিল নয়, বরং আধুনিকীকরণ
সরকার আইন করে সকল খতিয়ান বাতিল ঘোষণা করতে পারে না, এবং এখন পর্যন্ত তেমন কিছু ঘটেওনি। মালিকানা যাচাই হয় খতিয়ানের ধারাবাহিকতা ও দলিলপত্রের মাধ্যমে।
বিডিএস স্মার্ট খতিয়ান একটি আধুনিক পদ্ধতি, তবে এটি পুরনো খতিয়ান বাদ দিয়ে এককভাবে কার্যকর নয়।
আপনি যা করবেন:
আপনার পুরনো খতিয়ান সংরক্ষণ করুন
দলিল, দখল ও নামজারির ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন
বিডিএস স্মার্ট খতিয়ান প্রস্তুত হলে তা সংগ্রহ করুন
যারা চিন্তিত হচ্ছেন “সকল খতিয়ান বাতিল?”—তাদের জন্য আশার খবর হলো, যদি আপনার বৈধ খতিয়ান, দলিল ও নামজারি থাকে তাহলে আপনি চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন। সরকার খতিয়ান বাতিল করেনি, বরং সেটিকে স্মার্ট ও আধুনিক রূপে রূপান্তর করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।