বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : তথাকথিত ‘মিরাকল ম্যাটিরিয়াল’ দিয়ে বানানো সৌর প্যানেল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের নতুন উপায় খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যা এমন সৌর প্যানেলের ব্যবহার ব্যপক হারে বাড়িয়ে দিতে পারে।
ধারণা করা হচ্ছে, ‘পেরোভস্কাইট’ নামে পরিচিত এ উপাদানটি নবায়নযোগ্য শক্তির খাতে বড় বিপ্লব বয়ে আনবে। তবে, গবেষণাগারে সৌর প্যানেল তৈরির ক্ষেত্রে উপাদানটি ‘রেকর্ড ভাঙা’ সাফল্য দেখালেও, স্থায়িত্ব ও নির্ভরযোগ্যতা সংশ্লিষ্ট ত্রুটির কারণে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন এখনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
এ প্রযুক্তির সম্ভাব্য উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ে বড় গবেষণার ফলাফল হিসেবে উঠে এসেছে ‘ভ্যাকুয়াম-ভিত্তিক’ একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে পরবর্তী প্রজন্মের সৌর প্যানেল উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
জার্মানির ‘কার্লসরুয়ে ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (কেআইটি)’ ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল রিনিউএবল এনার্জি ল্যাবরেটরি (এনরেল)’ নেতৃত্বাধীন গবেষণা দলটি খুঁজে পেয়েছে, ভ্যাকুয়াম বা বায়ুশূন্য প্রক্রিয়া, যা স্মার্টফোন থেকে এলইডি সকল খাতেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে, গবেষণাগারে সৌর প্যানেল তৈরির বেলায় অন্যান্য দ্রাবক-ভিত্তিক পদ্ধতির চেয়ে তা বেশি সুবিধাজনক।
“বেশ কয়েক দশক ধরেই এ শিল্পে ভ্যাকুয়াম পদ্ধতির নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণিত, ” বলেন কেআইটি’র ‘ইনস্টিটিউট অফ মাইক্রোস্ট্রাকচার টেকনোলজি’ ও ‘লাইট টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’-এর অধ্যাপক উলরিচ ডব্লিউ প্যাজোল্ড।
“সৌর প্যানেলের বাণিজ্যিকীকরণ প্রক্রিয়ায় এটি বড় পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা দেখালেও তা এতদিন উপেক্ষিত ছিল।”
নিজেই সারিয়ে নেবে ক্ষয়, এমন সৌর প্যানেল বানালেন বিজ্ঞানীরা
এ গবেষণায় যেসব সৌর প্যানেলে পেরোভস্কাইট ও সিলিকন সমন্বিত করা হয়েছে, সেগুলোতে গতানুগতিক সিলিকন কোষের তুলনায় সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা বেশি।
গত বছরের নভেম্বরে পেরোভস্কাইট ও সিলিকনের মিশ্রণে তৈরি সৌর কোষে ৩৩ দশমিক নয় শতাংশ কার্যকারিতা দেখাতে পেরেছিলেন চীনা সৌর প্রযুক্তি কোম্পানি ‘লংগি’র গবেষকরা, যা শীর্ষ পর্যায়ের সিলিকন কোষের চেয়েও ৩০ শতাংশ বেশি কার্যকর, যেখানে এ কৃতিত্ব অর্জন করতে গিয়ে নতুন এক বিশ্ব রেকর্ডও সৃষ্টি হয়েছে।
তাত্ত্বিকভাবে, পরবর্তী প্রজন্মের কোষে কার্যকারিতার সীমা সিলিকন কোষের ২৯ শতাংশ সীমার চেয়ে ৪৩-৫০ শতাংশ বেশি হতে পারে। তবে, এগুলো বাণিজ্যিক পরিসরে চালু হওয়ার সম্ভাবনা কম।
গত বছর চীনের এক স্টার্টআপ কোম্পানি বলেছিল, সিলিকন-পেরোভস্কাইটের মাধ্যমে তৈরি সৌর কোষ যে যুগান্তকারী সাফল্য দেখিয়েছে, তা দেখে তারা এর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে ইচ্ছুক। এর জন্য চীনের জিয়াংজু প্রদেশে একটি কারখানা নির্মাণেরও পরিকল্পনা করছে কোম্পানিটি।
এদিকে, জার্মানিতে একটি কারখানা নির্মাণ করে এ প্রযুক্তি বাণিজ্যিকীকরণের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্টার্টআপ কোম্পানি ‘অক্সফোর্ড পিভি’।
এ যুগান্তকারী সাফল্যের বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে ‘ভেপার ফেইজ ডিপোজিশন অফ পেরোভস্কাইট ফটোভোল্টাইকস: শর্ট ট্র্যাক টু কমার্শিয়ালাইজেশন’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে, যা প্রকাশ পেয়েছে ‘এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স’ জার্নালে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।