লাইফস্টাইল ডেস্ক : আল্লাহতায়ালা মানুষ আর জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি মানুষ আর জিন জাতি সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য’ (সুরা আজ-জারিয়াত-৫৬)। আল্লাহতায়ালার এই ইবাদতের রূপরেখা ও একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে নাজিল করেছেন মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। আল্লাহর এই শাশ্বত বিধান যথাযথভাবে মেনে চলার মধ্যেই উভয় জাহানের কল্যাণ এবং চিরশান্তি ও মুক্তির ঠিকানা নিহিত। এই অনুভূতি সবার হৃদয়ে জাগিয়ে তুলতে দাওয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে লক্ষাধিক নবী-রসুল প্রেরণ করেছেন।
হজরত আদম (আ.) থেকে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সবার মিশন ছিল এক ও অভিন্ন। পথভোলা মানুষগুলোর দ্বারে দ্বারে গিয়ে সত্যের বাণী পৌঁছে দেওয়া এবং ইসলামেই রয়েছে চিরশান্তির সফলতা এই অনুভূতি জাগিয়ে তোলা তাবলিগের অন্যতম লক্ষ। রসুল (সা.)-এর জীবনে দীর্ঘ ২৩ বছর এই মিশন নিয়েই মানুষদের দাওয়াত দিয়েছেন। উম্মতের আত্মভোলা মানুষগুলোর জন্য এতটা উদ্বিগ্ন ছিলেন, যেন তিনি প্রাণ বিনাশ করে দেবেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতঃপর যদি তারা এই মর্যাদাপূর্ণ বাণীর ওপর ইমান না আনে, তাহলে আপনি তাদের জন্য দুঃখে আত্মা বিনাশ করে ফেলবেন?’(সুরা কাহাফ-৭)।
ঢাকার অদূরে বিখ্যাত তুরাগ নদের তীরে চলছে বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে তাবলিগ জামাতের জোড় কার্যক্রম। তাবলিগ জামাতের এই জোড় কার্যক্রম হলো আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার গঠনমূলক প্রস্তুতি। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মুসলিম উম্মাহর দাওয়াতি কার্যক্রমের শীর্ষ মিলনমেলা হিসেবে দুনিয়াজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে। বিশ্ব ইজতেমা মুসলিম জাহানে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এ দেশের মানুষ যে সত্যিকার অর্থেই ধর্মভীরু তা বিশ্ব ইজতেমার মাধ্যমেই প্রকাশ পেয়েছে। এ বছর যেসব মুসল্লি জোড়ে অংশগ্রহণ করেছেন এবং বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন তাদের প্রতি আমাদের মোবারকবাদ। রসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বকালের সেরা দাঈ। তিনি তাবলিগ করেছেন সর্বসাধারণের কাছে। দাওয়াতের এ দায়িত্ব নিয়ে তিনি ঘুরেছেন মরু প্রান্তরে সবার ঘরে ঘরে।
হেঁটেছেন অলিগলিতে, পাহাড়পর্বতে। এই দাওয়াতি চিন্তায় তিনি সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকতেন। সমগ্র জাতির দুর্দশা নিয়ে তিনি চিন্তা করতেন। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কর্মজীবনের বর্ণনায় এসেছে, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) সার্বক্ষণিক বিষণ্ন এবং সর্বদা চিন্তিত থাকতেন। তাঁর কোনো বিরাম ছিল না’ (সিরাতে রসুল)। মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রসুল ছিলেন, তিনি একজন দাঈ ছিলেন, বিশ্ব মুসলিমের জন্য আদর্শ শিক্ষক ও আত্মশুদ্ধির মূর্ত প্রতীক ছিলেন। পরিবারের কর্তা, আদর্শ সমাজসংস্কারক ও সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি মসজিদে নববির ইমাম ছিলেন। মিম্বারের খতিব ছিলেন। রণাঙ্গনের সেনাপতি ছিলেন। ছিলেন মুসলিম বিশ্বের শাসক।
আমরা যথাসাধ্য তাঁর সর্বজনীন আদর্শ অনুসরণের প্রচেষ্টা করতে পারি। আমাদের কেউ শিক্ষকতায় আত্মনিয়োগ করেছেন, কেউ দাঈ, লেখক বা আত্মশুদ্ধি ইত্যাদি ধর্মীয় কাজে নিয়োজিত আছেন। কারও কাজ ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। আমরা পরস্পর সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। সাধ্যানুযায়ী সব ক্ষেত্রে আত্মনিয়োগের মানসিকতা ত্বরান্বিত করতে পারি।
আধ্যাত্মিক কার্যক্রম ও ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করা দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে বেশি কার্যকরী হয়। এ পথে বাতিল মতবাদ অধিক হারে মানুষকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে। তাই এই প্ল্যাটফর্মে আমাদের বিচরণ করা ও ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করা কাম্য। দাওয়াতি আদর্শ ও দাওয়াতি কার্যক্রম সর্বমহলে প্রতিক্রিয়শীল হয়। অতি দ্রুত প্রভাব বিস্তার করে। বাতিল প্রতিরোধ ও ইসলাম প্রচার-প্রসারে দাওয়াতি কার্যক্রম খুবই গতিশীল ও কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাই আলেমদের নায়েবে রসুল হিসেবেই এ কাজে অধিক মনোনিবেশ করা জরুরি। মানুষকে সঠিক পথে উৎসাহিত করা এবং তাদের ভুল ধারণা নির্মূল করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা, সম্পর্ক করা ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রত্যেকের একটা কর্মসূচি হতে পারে। সমাজের বিশাল অংশ মহিলা মুসলিম। বর্তমানে অনেক বাতিল মতবাদ তাদের বিভ্রান্ত করার কাজে সক্রিয় হচ্ছে।
মহিলাদের মাধ্যমে পুরুষও প্রভাবিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই আমাদের নিজেদের মহিলাগণকে যথাযথভাবে দাওয়াতের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মাধ্যমে ব্যক্তিগত দাওয়াতি প্রক্রিয়া এবং প্রয়োজন ও সুযোগ অনুযায়ী সাপ্তাহিক বা মাসিক তালিমের ব্যবস্থা করতে পারি। গোটা বাংলাদেশে অগণিত ইমাম, মুয়াজ্জিন ও আলেম-উলামা রয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই আহলে হক, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত। তারপরও এই দেশে বাতিল মতবাদ কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে? তা আজ আমাদের ভাবনার বিষয়। চিন্তা করার প্রয়োজন আমাদের কী করণীয়। আমাদের ওপর অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমরা আপন আপন দায়িত্ব পালনে যত্নবান হই। জবাবদিহির প্রতি সচেতন হই।
মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।