ধর্ম ডেস্ক : রমজান মাস আল্লাহপ্রদত্ত এক বিশেষ ফজিলতের মাস। এই মাস সাওয়াব অর্জনের মাস। এ মাসেই কোরআন অবতীর্ণ হয়। এ মাসে প্রতিটা আমলে আল্লাহ ৭০ গুণ বেশি সাওয়াব দেন। এজন্য বিশেষ এই মাসে বেশি বেশি আমল করতে হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল আছে, যেগুলো পালনের মাধ্যমে জান্নাতের পথ সুগম হয়, আর জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
রোজার নিয়ত
রোজার নিয়ত করা আবশ্যক। ভোর রাতে সাহরি খেয়ে মুসলমানরা রোজার নিয়ত করেন। বহুল প্রচলিত রোজার একটি নিয়ত রয়েছে। তাহলো-
উচ্চারণ : ‘নাওয়াইতু আন আছুমা গাদান মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আংতাস সামিউল আলিম।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল তোমার পক্ষ থেকে পবিত্র রমজানের নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়ত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
বেশি বেশি ইসতেগফার পড়া-
দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় ছোট-বড় বিভিন্ন ভুলে জড়িয়ে যাই আমরা। এ জন্য এসব ভুল থেকে ক্ষমা মার্জনার জন্য আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করা জরুরী।
কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা ইস্তিগফারসংক্রান্ত অনেক আয়াত নাজিল করেছেন। কোনও আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইস্তিগফারের আদেশ করেছেন, কোথাও ইস্তিগফারকারীদের প্রশংসা করেছেন, কোথাও দ্রুত গতিতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার কথা বলেছেন।
যেমন সুরা বাকারার ১৯৯ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
সুরা আল ইমরানের ১৩৩ নং আয়াতে তিনি বলেন, ‘এবং নিজ প্রতিপালকের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও সেই জান্নাত লাভের জন্য একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হও, যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতুল্য। তা সেই মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’
সব নবী আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করতেন। সেসব নবীর ইস্তিগফারের কথা আল্লাহ তা’আলা কোরআনের অনেক আয়াতে বর্ণনা করেছেন।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করে থাকি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩০৭)
এমন দুটি ইস্তেগফার নিচে তুলে ধরা হলো :
১। আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহু আল-হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম
২। আলহামদুলিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিরাহমাতিকাল্লাতি ওয়াসিআত কুল্লা শাইয়িন আন তাগফিরলি
ইফতারের দোয়া
ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দোয়া পড়ে ইফতার শুরু করতেন বিশ্বনবি। হজরত মুয়াজ ইবনে যুহরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন, তখন এ দোয়া পড়তেন-
আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া আলা রিযক্বিকা আফত্বারতু
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্যে রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেওয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি। (আবু দাউদ মুরসাল, মিশকাত)
ইফতার করার পরও বিশেষ দোয়া পাঠ করতেন বিশ্বনবী। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার শেষ করতেন তখন বলতেন-
জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ
অর্থ : ‘ (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াব ও স্থির হলো ‘ (আবু দাউদ, মিশকাত)
কারও ঘরে মেহমান হয়ে ইফতার করলেও আছে বিশেষ দোয়া-
আকালা ত্বাআমাকুমুল আবরারু, ওয়া সাল্লাত আলাইকুমুল মালায়িকাতু, ওয়া আফত্বারা ইংদাকুমুস সায়িমুন (আবু দাউদ)
তারাবিহ নামাজের নিয়ত
রমজান এলেই অনেকে তারাবিহ নামাজের নিয়ত খুঁজতে থাকেন। নিয়ত আরবিতে করতে হবে এমন কোনও নিয়ম নেই। নিয়ত হলো নামাজ পড়ার জন্য মনের ইচ্ছা বা সংকল্প। এ ইচ্ছা বা সংকল্প আরবি কিংবা বাংলায় করা যায়। দুই দুই রাকাআতে তারাবিহ নামাজ আদায় করতে হয়। এভাবে নিয়ত করা যায়-
তারাবিহ-এর দুই রাকাআত নামাজ কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য (জামাআত হলে- এ ইমামের পেছনে) পড়ছি- আল্লাহু আকবার।
তারাবিহ নামাজের দোয়া
তারাবিহ নামাজের ৪ রাকাআত পর পর অনেকে একটি বহুল প্রচলিত দোয়া পড়ে থাকেন। যার অর্থও অনেক সুন্দর। তাহলো-
সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ
বহুল প্রচলিত এ দোয়াটি না পড়লে তারাবিহ নামাজ হবে না এমন নয়। যে কোনো দোয়াই পড়া যাবে। তবে এ সময়টিতে কুরআন-সুন্নাহর দোয়াগুলো পড়াই উত্তম।
তারাবিহ নামাজের মুনাজাত
তারাবিহ নামাজের বহুল প্রচলিত দোয়ার মতো অনেকে ৪ রাকাআত পরপর, অনেকে আবার নামাজ শেষ করে একটি নির্দিষ্ট দোয়া দ্বারা মোনাজাত করেন। মোনাজাতের এ দোয়াটি বহুল প্রচলিত। তাহলো-
আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন
রমজান মাসে চারটি আমল বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহর রাসুল (সা.)। হজরত সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এ মাসে তোমরা চারটি কাজ বেশি পরিমাণে করো। দুটি কাজ এমন, যা দিয়ে তোমরা তোমাদের প্রভুকে সন্তুষ্ট করবে। আর দুটি কাজ এমন, যা তোমাদের নিজেদেরই খুব প্রয়োজন।
যে দুটি কাজ দিয়ে তোমরা তোমাদের প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জন করবে তা হলো-১. কালেমায়ে তাইয়্যিবার সাক্ষ্যপ্রদান অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের সাক্ষ্যদান ২. আল্লাহর নিকট ইস্তেগফার করা অর্থাৎ নিজের গুনাহের জন্য তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা। আর যে দুটি বিষয় তোমাদের নিজেদেরই অধিক প্রয়োজন তা হলো-১. তোমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করবে ২. আর জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাইবে’ (ইবনে খুজাইমা : হাদিস ১৮৮৭; বায়হাকি : হাদিস ৩৬০৮)।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।