জুমবাংলা ডেস্ক : মেহেরপুরের রাস্তার ধারে সারিসারি গাছ। এসব গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে হলুদ রংয়ের কমলা। শীতের শুরুতেই এসব কমলা বাগানের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষকের স্বপ্ন দোল খাচ্ছে।
মেহেরপুরের মাটি ধান,গম, সরিষার পাশাপাশি সব ধরণের ফসল চাষের উপযুক্ত হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে কিছু কৃষক সবুজ মাল্টাসহ চায়না কমলা চাষ শুরু করেছেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় এটি বেশ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই ইতোমধ্যে মেহেরপুরের সমতলে পাহাড়ি এ কমলা চাষে ঝুঁকছেন। শিক্ষিত বেকার, শিক্ষার্থীরাও শুরু করেছেন চায়না কমলার আবাদ। আর একাজে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে তাদের সব ধরনের সহযোগীতা অব্যাহত রেখেছে মেহেরপুর কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় চায়না-৩ জাতের কমলার চাষ শুরু করেছেন অনেকে। এ জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে বর্তমানে ১১০ হেক্টর জমিতে চায়না কমলা লেবুর বাগান রয়েছে। ইতোমধ্যে ৭৫ থেকে ৮৫ হেক্টর জমির বাগান থেকে চাষিরা ফল সংগ্রহ শুরু করেছেন। পুষ্টিগুণে ভরপুর ও রোগীর পথ্য হিসেবে পরিচিত চায়না কমলা চাষ বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হওয়ায় অনেক ঝুঁকে পড়েছেন এই ফল উৎপাদনে।
গাংনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী চঞ্চল বলেন, ইউটিউব থেকে একদিন এক সফল উদ্যক্তার কমলা চাষ দেখি। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিয়ে কমলা চাষের সিদ্ধান্ত নেই। কারণ লেখাপড়া করতে বাড়ি থেকে খরচ নিতে হয়। অনেক সময় টাকা জোগাড় করতে বেশ কষ্ট হতো। এজন্য কিছু একটা করার চিন্তা থেকে কমলা চাষ শুরু করি। তিন বছর আগে চুয়াডাঙ্গা থেকে ১০ হাজার টাকার কমলার চারা সংগ্রহ করে এক বিঘা জমিতে চাষ শুরু করি। ১০০ গাছে তিন বছরে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে ৯০টি গাছে কমলা ধরেছে। প্রতিটি গাছ থেকে ৪০ থেকে ৫০ কেজি কমলা পাবো। এতে আমার খরচ বাদ দিয়েও অনেক টাকা লাভ হবে। ইচ্ছা আছে লাভের টাকা দিয়ে কমলার বাগান আরো সম্প্রসারণ করার।’
গাংনী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন,‘অবসর সময় কাটানোর জন্যই বাড়ির অদূরে দুই বিঘা জমিতে চায়না কমলার চাষ শুরু করেছি। ৪ বছর আগে ২০০টি চারা সংগ্রহ করে রোপণ করি। গত ৪ বছরে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এবছর প্রায় ১০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।’
তিনি আরো বলেন,‘সমতলে কমলা চাষে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী ও বেকার যুবক পরামর্শ নিচ্ছেন কমলা চাষের জন্য। শিক্ষার্থীরা যদি বাসায় বসে না থেকে অবসর সময়ে খালি জায়গায় কমলা অথবা অন্য ফসল উৎপাদন শুরু করেন তাহলে তারা যেমন লাভবান হবেন জাতিও উপকৃত হবে।
গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের কলেজ ছাত্র আব্দুস সালাম জানান,‘বন্ধু চঞ্চল ইতোমধ্যে এক বিঘা জমিতে কমলা চাষ করে সফলতা পেয়েছে। তার দেখা-দেখি আমিও কমলা চাষ শুরু করার চিন্তা করছি।’
কমলা চাষে আগ্রহী গাংনী উপজেলার কসবা গ্রামের শিক্ষক কামাল বলেন, ‘অন্য ফসল আবাদে খরচ ওঠে না। কিন্তু কমলা চাষে শ্রম এবং খরচ কম আবার লাভ বেশি। তাই চাইনা কমলা চাষের বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছি।’
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শংকর কুমার বলেন, ‘মাল্টা ও কমলা চাষে শ্রম ও খরচ কম হওয়ায় অনেকেই আগ্রহী হয়ে চায়না জাতের কমলা চাষ করছেন। এই ফলটির স্থানীয় বাজারে চাহিদাও আছে। কমলা চাষে আগ্রহীদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।