ধর্ম ডেস্ক : আল্লাহর কসম! যদি অন্তর পরিষ্কার হয় তাহলে আমাদের জীবন থেকে কত সময় চলে গেছে সে জন্য খুব কষ্ট অনুভব করতাম এবং কান্নায় ভেঙে পড়তাম। একটু চিন্তা করলেই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে, আমাদের জীবন থেকে কত ঘণ্টার পর ঘণ্টা বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে অথচ আমরা সময়ের উপকার থেকে বঞ্চিত। সময় থেকে উপকৃত হচ্ছি না কিন্তু সময় আমাদের থেকে চলে যাচ্ছে অথচ জীবন ও সময় অর্থের চেয়েও দামি। সোনা, রুপা হারিয়ে গেলেও তা অন্য কিছু দিয়ে বদল করা যায়; কিন্তু জীবন ও সময় কোনো কিছু দিয়ে বদল করে নেওয়া সম্ভব নয়। যখন সময় চলে যায় তখন তা আমাদের স্ব-স্ব জীবন থেকে চিরদিনের জন্য চলে যায় আর ফিরে আসে না। অথচ এই সময় একদিন আমাদের আফসোসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। মহান আল্লাহ বলেন, যখন বান্দার নির্ধারিত সময় এসে যাবে তখন আল্লাহ কোনো প্রাণকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত (মোনাফিকুন-১১)।
যখন কারও মৃত্যু আসে তখন সে বলে, হে আমার রব! আমাকে ফেরত পাঠান, যেন আমি সৎকাজ করতে পারি, যা আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম। কখনো নয়, এখান থেকে ফেরার আর কোনো সুযোগ নেই। এটা তার কথার কথা মাত্র। তাদের সামনে বারজাখ থাকবে উত্থান হওয়ার দিন পর্যন্ত (মুমেনুন-৯৯-১০০)। সে আরও বলবে, হে আমার রব! আমাকে আরও কিছুকালের জন্য অবকাশ দিন আমি সাদকা দিতাম ও সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত হতাম মোনাফিকুন-১০)। দেখুন আমরা কিন্তু সময় পেয়েছি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর। সময় পেয়েছি সব ধরনের আনন্দফুর্তি এবং ভোগবিলাসের।
কিন্তু ইবাদতের ক্ষেত্রে আমরা সময় দিতে পারিনি। দিলে দিতে পারিনি। তাই হাশরের দিন যাতে সময় চাইতে না হয় সে বিষয়ে দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ ও রসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে চলতে হবে। সে জন্য হিসাবের অঙ্ক কষা উচিত। নতুন বছরের দিন ও বছর প্রাপ্তির পর থেকে প্রাপ্ত সময়ের সদ্ব্যবহার করা আবশ্যক।
তাই আসুন! সময় বের করে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০-৪৫টি কোরআন মজিদের আয়াত পাঠ করি। সময় করি সৎকর্ম করার জন্য ফজরের সালাতের কমপক্ষে আধা ঘণ্টা আগে উঠে তাহাজ্জুদের সালাতে দাঁড়াই। সালাতে সিজদায় আল্লাহর প্রশংসামূলক বাক্য পাঠের পর দু’আ করি এবং অতীতে কৃত পাপসমূহের জন্য আন্তরিকভাবে তওবা করি। এই সময় হচ্ছে ক্ষমা প্রাপ্তিসহ নিজের ও পরিবারের জন্য দু’আ করার উপযুক্ত সময়। কারণ এই সময় আল্লাহ নিচের আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন তোমরা কে কী চাচ্ছ- আমি যা কিছু চাচ্ছ তাকে তা দিয়ে দেব। কাজেই ফজরের আধা ঘণ্টা আগে উঠে মুসলিম হিসেবে আমাদের কারও এই অফুরন্ত প্রাপ্তির সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়। একটু চিন্তা করলেই দেখা যাবে আমাদের আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবের মধ্যে অনেকেই এ বছর নেই অথচ গত বছর আমাদের সঙ্গে ছিল। আল্লাহপাকের অসীম দয়ায় আমরা বেঁচে আছি তিনি আমাদের সুযোগ দিচ্ছেন তাই আমাদের আল্লাহপ্রদত্ত সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়।
তাই অতীতের ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে আমরা দীন ইসলামের পথে ফিরে আসি। সম্মানিত ভাই ও বোনেরা : যেহেতু আমাদের অন্তর সব সময় একই অবস্থায় থাকে না মানুষ হিসেবে আমাদের ভুলত্রুটি থাকবে সে জন্য অন্তর কখনো গাফেল থাকে, কখনো পাপিষ্ঠ, কখনো অন্তরে ইমানের স্বচ্ছতা থাকে না, তাই অন্তর ও ইমানের দৃঢ়তা ফিরে পেতে এবং মৃত অন্তরকে জীবিত করতে আসুন আমরা দাঁড়িয়ে যাই সালাতে সিজদারত থাকি এমনভাবে আল্লাহ আমার সম্মুখে উপস্থিত। আমি তাঁকেই সিজদাহ করছি তাহলেই ইবাদতে তুপ্তি পাওয়াসহ মন ইমানি শক্তিতে বলীয়ান হয়ে যাবে।
‘সারাদেশে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি হয় এমন কথা বলা ঠিক নয়’
আল্লাহপ্রদত্ত নতুন বছরের প্রারম্ভে অতীত জীবনে কী কী অন্যায় অপরাধ ও গুনাহ হয়েছে তার খাতওয়ারি হিসাব কাগজে লিপিবদ্ধ করে প্রতিটি অন্যায়-অনাচার ও পাপ স্মরণে এনে আল্লাহর কাছে তওবা করি। একই সঙ্গে ওই পথে আর যাব না এই মর্মে শপথ গ্রহণ করি। আল্লাহর ওই মহান বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলি, হে আল্লাহ তুমি তো বলেছ, আমার বান্দা যারা নিজের ওপর জুলুম করছে আল্লাহতায়ালার রহমত থেকে কখনো নিরাশ হইও না, আল্লাহতায়ালা অবশ্যই সমুদয় গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন (জুমার-৫৩)। তাই আমি আমার গুনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থী। আমাদের ক্ষমা করে দিন। আমিন…
সৈয়দ নজরুল ইসলাম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।