জুমবাংলা ডেস্ক : ফেনীর সোনাগাজীর পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ডে ভাতের হোটেল চালান আজহার মিয়া। হোটেলের বেচাকেনার ওপর নির্ভরশীল ৫ সদস্যের পরিবার। হোটেলের আয়ে খরচ বাদ দিয়ে হাতে যা থাকে, তা দিয়ে টেনেটুনে চলত পুরো মাস। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের চড়া দামে হোটেল ও পরিবার চালানো এক প্রকার অসম্ভব হয়ে উঠেছে তার।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হতাশার সুরে আজহার মিয়া বলেন, মাছ-মাংস, চাল, ডাল, তেল, ডিম, ধনে পাতা, সবজিসহ হোটেল চালানোর সব পণ্যের দাম বেড়েছে। কেজি ১০০ টাকা দরের সহজলভ্য ধনে পাতা কিনতে হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। বেশি দামে কিনে কাস্টমারের কাছে আগের দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ন্যায্য দাম চাইলে হোটেলে কাস্টমার আসে না। দাম না কমলে ভাতের হোটেল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া বিকল্প পথ নেই।
সবজি কেনার সময় পৌরসভার বাজারে কথা হয় অটো চালক হারুনের সাথে। তিনি হতাশার সুরে বলেন, আগের আয়ের চেয়ে এখনকার আয় অনেক কম। বাজারে এসে চোখে অন্ধকার দেখছি। জীবনটাকে কীভাবে চালাব বুঝতে পারছি না। পরিবারে সব খাতে ব্যয় কমিয়েছি তারপরেও টানাটানি। সবজি কিনব সেই অবস্থাও নেই। দাম শুনে মাথা ঘুরে যায়। এখন বাজারে আসার কথা শুনলেই মনটা বিষিয়ে ওঠে।
বাজার করতে আসার প্রবাসীর স্ত্রী নুর নাহার বলেন, দুই দিন আগেও সবজির যে দাম ছিল এখন তারচয়ে দাম বেশি। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে। করলা-পটল,কলমি শাক,পুঁইশাক, পেঁপে,বরবটি, কচুমুখী, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, মিষ্টিকুমড়াসহ সব সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। গত পরশু ধনে পাতার কেজি ৪০০ টাকা বিক্রি হলেও সেটা এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
আজহার, হারুন, নুর নাহারের মতো বাজার পরিস্থিতি নিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্তত আটজনের সঙ্গে কথা হয় এদিন।
তারা জানালেন, বাজারে মাঝারি মানের চালের কেজি ৭০ টাকা। ফার্মের ডিমের হালি ৫০-৫৫, বড় সাইজের চাষের পাঙাশ ২৪০-২৮০, রুই ৩৫০, চাষ ও নদীর চিংড়ি ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা। সব সবজির দামও আকাশছোঁয়া। কিন্তু আয় এক পয়সাও বাড়েনি। ধার দেনা কিংবা সঞ্চয় ভেঙে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো টানাপোড়েন কমাতে পারছে না।
নিজাম উদ্দিন নামে সবজি ব্যবসায়ী বলেন, দাম তো আমরা বাড়াই না। বেশি দামে কিনি, বেচতেও হয় বেশি দামে। আমরা কী করবো। আড়তদারদের কাছ থেকে চড়া দামে কিনতে হয়।
ধনে পাতার অত্যাধিক দামের বিষয়ে তিনি জানালেন, হোটেল ব্যবসায়ীদের কাছে ধনে পাতার চাহিদা রয়েছে। তাই সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়েছে আড়তদারেরা। ক্রেতার সাথে সারাক্ষণ তর্কাতর্কি করতে হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাসখানেক ধরে সব নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়েই চলেছে। চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ ছাড়াও সবজি, মাছ, মাংস, মুরগিসহ সব জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। বিশেষ করে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির বাজার সীমাহীন চড়েছে।
বাজারের ব্যবসায়ীরা জানালেন, সবজির দাম চড়া হওয়ায় এখন ক্রেতারা কিনছেনও কম। আগে যিনি এক কেজি কিনতেন, এখন তিনি এক পোয়া কিংবা আধা কেজি কিনছেন। অনেকেই আবার দাম শুনে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছেন। আগের চাইতে বেচাবিক্রি অনেক কমে গেছে। দাম বেশি দেখে মানুষ অল্প অল্প কেনে। বাজারে সবজির সরবরাহ কম, তাই দামও বেশি। তবে এবার সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
সোনাগাজী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ডাক্তার নুর নবী বলেন, নিম্ম ও মধ্যবিত্তের মাছ-মাংস কেনার সাধ্য ধীরে ধীরে ফুরিয়ে যাচ্ছে। শাকসবজি কেনার সাধ্য থাকলেও অস্বাভাবিক দামের কারণে এখন সেগুলোর ধারেকাছে ভেড়া কঠিন। নিত্যপণ্যের দাম অস্থিতিশীল হওয়ায় মানুষ ভীষণ কষ্টে আছেন। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে বাজারের সরবরাহব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।