জুমবাংলা ডেস্ক : বান্দরবানে সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখা ম্যানেজার মো. নেজাম উদ্দিনের অপহরণ ও উদ্ধার বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে র্যাব-১৫।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) সকালে পার্বত্য জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মইন।
তিনি জানান, গত মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) ৯টার দিকে বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে শতাধিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত কুকি-চীন সদস্যরা তাদের নিজস্ব পোশাক পরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। এসময় মারধর করে ও অস্ত্রের মুখে পুলিশ, আনসার এবং অন্য লোকজনদেরকে জিম্মি করে ফেলে। পরে সোনালী ব্যাংকের ডিউটিরত গার্ড কনস্টেবলসহ সর্বমোট ১০ জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ২টি এসএমজি ও ৬০ রাউন্ড গুলি, ৮টি চায়না রাইফেল ও ৩২০ রাউন্ড গুলি, আনসার সদস্যদের ৪টি শর্টগান ও ৩৫ রাউন্ড কার্তুজ লুট করে। এসময় সোনালী ব্যাংকের ভল্ট ভেঙ্গে টাকা লুটের চেষ্টা করে। টাকা না পেয়ে সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার মো. নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এ ঘটনাটি জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে র্যাবের একাধিক দল অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারসহ লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে অভিযান কার্যক্রম শুরু করে।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় র্যাব সদস্যরা অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ম্যানেজারের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কৌশলে বিভিন্ন চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা ম্যানেজারকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে সম্মত হয়। তবে ব্যাংক ম্যানেজারকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার সময় যেন পরিবারের অন্য সদস্যরা অপহরণের শিকার না হয় সে লক্ষ্যে র্যাবের সাদা পোশাকধারী সদস্যরা রুমা থানার বেথেল পাড়া এবং বড়ুয়া পাড়ার আশেপাশে অবস্থান নেয়। পরে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সন্ত্রাসীরা ম্যানেজারকে পরিবারে কাছে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়।
সন্ত্রাসীরা ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে হস্তান্তর করার পর র্যাব সদস্যরা তাদেরকে নিরাপত্তা দিয়ে র্যাব-১৫ এর বান্দরবান ক্যাম্পে নিয়ে আসে।
র্যাব কার্যালয়ে এসে নেজাম উদ্দিন সন্ত্রাসীদের অতর্কিতে হামলা এবং হামলার পরে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেন।
ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনের বরাত দিয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মইন বলেন, মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাতে রুমা সোনালী ব্যাংকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত শতাধিক সশস্ত্র কুকি-চীন সদস্যরা ব্যাংক ডাকাতির উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সোনালী ব্যাংক এবং আশপাশ এলাকায় ভীতি সঞ্চার করে তাকে খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে পার্শ্ববর্তী মসজিদে এশার নামাজ পড়ার সময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মসজিদে প্রবেশ করে নামাজরত প্রত্যেক মুসল্লিকে জিম্মি করে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন আয়ত্তে নিয়ে নেয়। পরে নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এসময় পরিচয় লুকিয়েও নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি নেজাম উদ্দিন। এ সময় সন্ত্রাসীদের সকলেই এক ধরনের সামরিক পোশাক পরা ছিল এবং প্রত্যেকের মুখমণ্ডল কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে জানায়, ম্যানেজারের কাছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা জানতে চেয়েছিল ব্যাংকে কত টাকা রক্ষিত আছে। সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে ম্যানেজারের নিকট ব্যাংকের ভল্টের চাবি চাইলে ম্যানেজার তাদেরকে কৌশলে ভল্টের চাবি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে সন্ত্রাসীরা ভল্ট ভাঙ্গতে চেষ্টা করলে নেজাম উদ্দিন তাদেরকে জানায় যে, ভল্টে আঘাত করলে সেন্সরের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যাপারটি সোনালী ব্যাংকের হেড অফিস জেনে যাবে।
তখন তারা ব্যাংকের ম্যানেজারকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছানো মাত্রই তার চোখ বেঁধে ফেলে। টানা দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা কোনো এক অপরিচিত পাহাড়ের ঝিরি পথে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সময় তার সঙ্গে ১০/১২ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ছিল। পথিমধ্যে তারা ম্যানেজারের চোখ খুলে দেয় এবং অন্ধকারে চলার সুবিধার্থে ম্যানেজারের হাতে একটি বাটন ফোন ধরিয়ে দেয়। পথে তারা কিছু সময়ের জন্য বিশ্রামের সুযোগ দেয়। এরপর আবার হাঁটায়। এ ভাবে রাত আনুমানিক আড়াইটার সময় অজ্ঞাত এক স্থানে তাকে নিয়ে ঘুমানোর সুযোগ দেয়। তবে তাকে পাহারায় রাখা হয়েছিল যাতে পালাতে না পারে এ জন্য।
ঘটনার পরদিন সকালে ব্যাংক ম্যানেজারকে সামান্য নাস্তা দিয়ে আবারও হাঁটিয়ে পাহাড়ি ঝিরি পথ দিয়ে অন্য একটি পাহাড়ের ঝিরিতে নিয়ে যায়। সেখানে প্রায় ৩০/৩৫ জনের মত সশস্ত্র সন্ত্রাসী অবস্থান করছিল। এ সময় তারা কলার পাতায় করে ম্যানেজারকে গরম ভাত, ডাল ও ডিম ভাজি খেতে দেয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে হাঁটিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে ম্যানেজারকে ১৫/২০ মিনিটের মত বিশ্রামের সুযোগ দেয়। সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দিকে তারা ধাপে ধাপে বিশ্রাম এবং হাঁটার পর ভিন্ন একটি জায়গায় গিয়ে পৌঁছালে আবারও তাকে গরম ভাত, ডাল ও ডিম খেতে দেয়।
র্যাব জানায়, অপহরণের পর সন্ত্রাসীরা ম্যানেজারকে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেয় এবং কোনো প্রশাসনিক বা আইনি সহায়তা যাতে না নেয় সেজন্য তার পরিবারকে সতর্ক করে দেয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।