জুমবাংলা ডেস্ক : সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি (বিনিয়োগ) কয়েক মাস ইতিবাচক ধারায় থাকলেও এতে আবারও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সর্বশেষ গত নভেম্বর মাসে নিট বিক্রি প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণাত্মক হয়েছে। অর্থাৎ ওই মাসে কেনার চেয়ে ভাঙানোর চাপ বেশি ছিল। ফলে নিট বিক্রি বড় ধরনের ঋণাত্মক হয়।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত নভেম্বরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণে চাহিদা অনুযায়ী সঞ্চয় করতে পারেনি। আবার গত জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ধনী গোষ্ঠীর অনেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন। এ ছাড়া আমানত ও সরকারের বিল-বন্ডের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগের একটি বড় অংশ ব্যাংক ও বিল-বন্ডে স্থানান্তর হয়েছে। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগে ওই মাসে ভাটা পড়েছে। তবে জানুয়ারি থেকে সুদহার বাড়ানোর কারণে আগামীতে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ার আশা করছেন তারা।
উল্লেখ্য, সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি তথা বিনিয়োগ সরকারের ঋণ হিসেবে গণ্য হয়। এটা বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যবহার করে সরকার। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকার নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে নিট বিক্রি ঋণাত্মক ছিল এক হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময় তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের নিট বিক্রি ঋণাত্মক বেড়েছে এক হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। গত বছরের জুলাইতে দুই হাজার ১৮৭ কোটি টাকা, আগস্টে দুই হাজার ৩৬ কোটি এবং সেপ্টেম্বরে চার হাজার ১০৯ কোটি টাকা নিট বিক্রি ইতিবাচক ছিল। নভেম্বর মাসে নিট বিক্রি নেতিবাচক হলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ (জুলাই-নভেম্বর) মাসে নিট বিক্রি ইতিবাচক ছিল। এ সময় নিট বিক্রি দাঁড়ায় এক হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময় নিট বিক্রি ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা ঋণাত্মক ছিল।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, মানুষের গড়পত্তা আয় কমে গেছে। ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের যে পরিমাণ আয় রাখার কথা, তা রাখতে পারছেন না। আরও অনেকে জমানো টাকা ভেঙে ফেলছেন তাদের দৈনন্দিন ব্যয় মেটানোর জন্য। অন্যদিকে সম্পদশালীদের মধ্যে যারা নামে-বেনামে এক সময় সঞ্চয়পত্রে বিপুল বিনিয়োগ করতেন, তাদেরও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের আগ্রহ কমেছে। সবমিলিয়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
গত অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। তবে বিক্রি ধারাবাহিক কমতে থাকায় সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৭ হাজার ৩১০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি। উল্টো পুরো অর্থবছরে নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক হয়েছিল প্রায় ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।