জুমবাংলা ডেস্ক : দিনের বেলায় কেউ বাসের হেলপার, কেউ ড্রাইভার, কেউ দোকানের কর্মচারী, কেউবা আবার নির্মাণশ্রমিক। অনেকে আবার পুরোনো জিনিসপত্র ক্রেতা, কেউ রাজমিস্ত্রী, কেউ সবজি বিক্রেতা। তবে সন্ধ্যা নামলেই তাদের পেশা বদলে যায়।
ভিন্ন পেশার আড়ালে তারা মোহাম্মদপুর ও তার আশপাশের এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করেন। তাদের প্রত্যেকের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। কারাভোগও করেছেন প্রত্যেকে। কারাগার থেকে বেরিয়ে আবারও জড়িয়েছেন ‘গ্যাং কালচার’-এ।
রাজধানীর মোহাম্মাদপুর, আদাবর, হাজারীবাগ এলাকায় ‘কিশোর গ্যাং’ এর বিভিন্ন গ্রুপের ছিনতাই, চাঁদাবাজি, বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৬ জনকে আটকের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
আজ দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় র্যাব-২ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এ কার্যালয়ের অধিনায়ক (সিও) ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান।
র্যাব জানায়, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে কিশোর গ্যাং ‘পাটালি গ্রুপ’-এর অন্যতম মূলহোতা সুজন মিয়া ওরফে ফর্মা সজিব এবং ‘লেভেল হাই’-এর অন্যতম মূলহোতা মো. শরিফ ওরফে মোহন ও ‘চাঁন গ্রুপ’, ‘মাউরা ইমরান গ্রুপ’সহ বিভিন্ন গ্রুপের সদস্য। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
মো. আনোয়ার হোসেন খান বলেন, সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। এসব ঘটনায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও মামলা হয়েছে। অতি সম্প্রতি মোহাম্মদপুর, আদাবর, হাজারীবাগ ও তার আশেপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য পেয়ে র্যাব টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করে।
তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে র্যাবের একাধিক দল মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের ৩৬ জনকে আটক করে।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব-১-এর অধিনায়ক বলেন, ‘পাটালি গ্রুপ’টি সুজন মিয়া ওরফে ফর্মা সজিবের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যাবত পরিচালিত হয়ে আসছে। নিজেদের মধ্যে অন্তঃকোন্দলের কারণে তারা ২/৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়। ‘লেভেল হাই’ গ্রুপটি শরিফের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন পরিচালিত হয়ে আসছে। গ্রেপ্তাররা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাঁধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত।
তিনি বলেন, তারা একাকী পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যায়। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত। মাদক সেবনসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত তারা।
আটকদের পেশা সম্পর্কে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন গাড়ির হেলপার ও ড্রাইভার, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণশ্রমিক, পুরোনো মালামাল ক্রেতা, সবজি বিক্রেতা ইত্যাদি পেশার আড়ালে তারা মূলত মোহাম্মদপুর ও তার আশেপাশের এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করত বলে জানা যায়।
তিনি বলেন, আটক সুজন মিয়া ওরফে ফর্মা সজিব ‘পাটালি গ্রুপ’-এর মূলহোতা। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ডিস ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ তৈরি করে। সে এই সন্ত্রাসী গ্যাং এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছিল। আটক রানা শিকদার, জুয়েল মিয়া ও সাগর আটক ‘ফর্মা সজিব’-এর সহযোগী।
আনোয়ার হোসেন খান বলেন, আটক ব্যক্তিরা ‘পাটালি গ্রুপ’-এর ফর্মা সজিবের নেতৃত্বে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন এলাকায় টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত ১১টির বেশি মামলা রয়েছে এবং এ সব মামলায় কারাভোগ করেছে।
তিনি বলেন, আটক শরিফ ওরফে মোহন (২১) ‘লেভেল হাই’ গ্রুপের মূলহোতা ও সন্ত্রাসী হায়াত ওরফে টাকলা হায়াতের অন্যতম প্রধান সহযোগী। আগে সে মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদকের ব্যবসা করত। সে টাকলা হায়াতের অন্যতম সহযোগী হিসেবে মোহাম্মদপুর ও তার আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি ও অপহরণসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে আসছিল। টাকলা হায়াতের অবর্তমানে সে গ্যাংটি পরিচালনা করে আসছিল।
সংবাদ সম্মেলনে কার্যালয়ের অধিনায়ক (সিও) ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান
র্যাব-২-এর অধিনায়ক বলেন, আটক দুলাল, সোহাগ ও তারেক তারা ‘লেভেল হাই’ গ্রুপের সদস্য। তারা আটক শরিফ ওরফে মোহনের নেতৃত্বে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো। শরিফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত ৮টির অধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় কারাভোগ করেছে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার সাকিব ওরফে রিয়াম ‘চাঁন গ্রুপ’-এর অন্যতম সহযোগী সদস্য। সে ২০১৮ সালে বরিশাল থেকে ঢাকায় এসে ঢাকা উদ্যান এলাকায় বসবাস শুরু করে। সে বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্টসে চাকরি করেছে। ২০২১ সালে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে চাকুরির সময়ে ‘চাঁন গ্রুপ’ নামে একটি ‘কিশোর গ্যাং’-এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে সে ‘চাঁন গ্রুপ’-এর অন্যতম সহযোগী। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত ৩টির অধিক মামলা রয়েছে এবং এ সব মামলায় কারাভোগ করেছে।
আনোয়ার হোসেন খান বলেন, আটক ইমরান ওরফে মাউরা ইমরান ‘মাউরা ইমরান গ্রুপ’-এর সদস্য। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ডিস ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ তৈরি করে। আগে সে মোহাম্মদপুর এলাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করত। ২০২১ সালে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরির সময়ে নিজেই একটি কিশোর গ্যাং ‘মাউরা ইমরান গ্রুপ’ গঠন করে। মাউরা ইমরান মোহাম্মদপুর এলাকায় চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও অপহরণের সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত ৪টির বেশি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় কারাভোগ করেছে।
ভরপুর রোমান্সের সঙ্গে দুর্দান্ত অ্যাকশন দৃশ্য, নেট দুনিয়ায় ঝড় তুললো এই ওয়েব সিরিজ
তিনি বলেন, ‘রাকিব ওরফে মুরগী রাকিবের জন্ম বরিশাল এলাকায়। সে বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্টসে চাকরি ও ডিসের লাইনে চাকরি করত। ২০২০ সালে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকরির সময় ‘‘লও ঠ্যালা গ্রুপ’’ যোগ দেয়। সে বিভিন্ন স্থান থেকে মাদক সংগ্রহ ও মাদক পৌঁছে দেওয়ার কাজ করত। বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত দুটির বেশি মামলায় কারাভোগ করেছে সে। আটকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।