বিনোদন ডেস্ক : এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে সুখী তারকা দম্পতিদের বিবাহবিচ্ছেদ হয় এবং তাঁরা একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যান। কেন তাসের ঘরের মতো একের পর এক ভেঙে পড়ছে তারকাদের সংসার?
বলিউডের কিং খান শাহরুখের প্রেম থেকে পরিণতি সবকিছুই যেন সিনেমার মতো রঙিন। সেই রঙিন জীবনে হঠাৎই ছন্দপতন হয়েছিল। বলিউডের বাদশাহ শাহরুখ খান এবং বলি অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার প্রেম একসময় বি-টাউনের অন্যতম চর্চিত বিষয় ছিল। বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতার কারণেই বিবাহবিচ্ছেদের পর্যায়ে চলে এসেছিল শাহরুখ-গৌরীর সম্পর্ক। অবশ্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিল শাহরুখ-গৌরী। আবার তিন দশক ধরে দুজন একসঙ্গে থাকলেও একটা সময় ছিল গৌরী শাহরুখকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন। ২০০৫ সালে গৌরী খান হৃত্বিক রোশানের প্রাক্তন স্ত্রী সুজান খানের সঙ্গে কফি উইথ করণে উপস্থিত হন। যেখানে সঞ্চালক করণ জোহর আলাপচারিতায় জানান, গৌরী একবার শাহরুখ খানকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন। গৌরী খান সে সময় দাবি করেন, তিনি নিজের মতো থাকতে চেয়েছিলেন। কিছুক্ষণের জন্য এই কাজটি করেছিলেন। পরবর্তীতে শাহরুখ খানের কাছেই ফিরে গেছেন। এসআরকে ১৮ বছর বয়সে গৌরীর প্রেমে পড়েন। তখন গৌরীর বয়স ছিল মাত্র ১৪। একটি পার্টিতে দুজনের দেখা হয়েছিল। দীর্ঘদিন সম্পর্কে থাকার পর এই জুটি ২৫ অক্টোবর ১৯৯১ সালে বিয়ে করেন।
একসময় বলিউড তারকা আমির খান ও কিরণ রাওয়ের বিবাহবিচ্ছেদের খবরে তাঁদের ভক্ত, দর্শকরা চমকে উঠেছিলেন। যদিও নিজেরা বেশ গুছিয়েই এ বিচ্ছেদের খবর প্রকাশ করেছিলেন। নিজেদের যৌথ বিবৃতিও মানুষ জেনেছে। সবাই জেনেছেন শান্তিপূর্ণ ও সচেতনভাবেই আলাদা হয়েছিলেন তাঁরা। অন্যদিকে, সন্তানদের দেখাশোনাও তাঁরা একসঙ্গে করবেন বলে সম্মত হয়েছিলেন। অবশ্য তাঁদের বেশ আগে থেকেই বলিউডে এই ধীরস্থির, সচেতন বিচ্ছেদের রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। হৃত্বিক রোশান-সুজানা খান, ফারহান আখতার-অধুনা ভবানি, রণবীর শোরে-কঙ্কনা সেনশর্মা ভেবেচিন্তে, গুছিয়ে তাঁদের বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন।
১৩ বছরের বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি টানার পরও হৃত্বিক-সুজানা তাঁদের ছেলেদের জন্য সুযোগ পেলেই এখনো একত্রিত হন। এমনকি ভারতে লকডাউনের সময় সন্তানদের যেন বাইরে যেতে না হয়, তাই সুজানা হৃত্বিকের বাসায়ও উঠেছিলেন।
২০১৪ সালে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন কারিশমা কাপুর ও সঞ্জয় কাপুর। এরপর ২০১৬ সালে বলিউডের এ তারকা দম্পতির আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়। এ বিচ্ছেদের আইনি প্রক্রিয়ায় যুক্ত একজন আইনজীবী বলেছিলেন, সঞ্জয়ের বাবার বাড়িটি কারিশমার নামে করে দেওয়া হয়েছিল। বলিউডের আরেক তারকা দম্পতি সাইফ আলী খান ও অমৃতা সিং আলাদা হয়েছিলেন উভয়ের সম্মতিতেই। মুখ্য বিষয় না হলেও বিচ্ছেদের সঙ্গে আর্থিক ব্যাপারটি ঘনিষ্ঠভাবেই জড়িত থাকে। তা ঠিকঠাক মতো পালিত না হলেই বেরিয়ে আসে নানা কথা। ফারহান আখতার ও অধুনা ভবানির বিচ্ছেদ হয় ২০১৬ সালে। শোনা যায় ফারহান অধুনাকে এককালীন মোটা অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করেছিলেন। সঙ্গে মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় ১০ হাজার বর্গফুটের বাংলোটিও পান অধুনা।
মতের অমিলে মূলত বিবাহবিচ্ছেদ হয়। যদিও তাঁরা আবার কয়েক মাস যেতে না যেতেই বিয়ে করে বসেন। তারকাদের কেউ বিয়ের পর কিংবা মা-বাবা হওয়ার পরও বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটেন। এ ছাড়াও নানা কারণ রয়েছে।
বলিউড বা দক্ষিণী তারকাদের বিয়ে যেন জাতীয় সংবাদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এই তো মাত্র কিছুদিন আগে ভিকি কৌশল ও ক্যাটরিনা কাইফ যখন সাত পাকে বাঁধা পড়লেন, তা নিয়ে উৎসাহ-উন্মাদনার কমতি ছিল না গসিপ ম্যাগাজিন, ট্যাবলয়েড নিউজপেপার থেকে শুরু করে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোরও। এমনকি এখনো পুরোপুরি রেশ কাটেনি সেই বিয়ের। কিন্তু একই সমান্তরালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে আরেকটি প্রশ্নও ঘুরেফিরে এসেছে অনেকবার-ভিক্যাটের বিয়েটা টিকবে তো? কিছুদিন পরই বিচ্ছেদের করুণ সুর বাজবে না তো তাঁদের আপাত স্বপ্নিল সম্পর্কে? এসব প্রশ্ন নিছক নয় সবসময়। বিভিন্ন কারণে তাসের ঘরের মতোই ভেঙে পড়ছে তারকাদের সংসার। কেন সুখের সংসার ভেঙে যায়? মতের অমিলে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। যদিও তারকারা কয়েক মাস যেতে না যেতেই আবার বিয়ে করে বসেন। কারণ, কেউই আসলে সঙ্গীহীন থাকতে পারেন না। আবার তারকাদের কেউ বিয়ের পর, আবার কেউবা মা-বাবা হওয়ার পরও বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটেন। সন্তান জন্মের পর বিচ্ছেদ সেই সন্তানের মানসিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কারণ, বিচ্ছেদের ফলে এসব সন্তান মা-বাবা থেকে আলাদা হয়ে যায়। আমরা বলিউড সিনেমায় হ্যাপি এন্ডিং বা সুখী সমাপ্তি দেখতেই অভ্যস্ত, যেখানে নায়কের সঙ্গে নায়িকার বিয়ে হয় এবং তারপর তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। কিন্তু সেলিব্রিটিদের বাস্তব জীবনে এমনটা সবসময় হয় না। সুখের সংসার করে একটা সময় বিভিন্ন কারণে বিচ্ছেদের পথে হেঁটেছেন আমির খান-রীনা দত্ত, সঞ্জয় দত্ত-রিয়া পিল্লাই, আদিত্য চোপড়া-পায়েল খান্না, প্রভু দেবা-রামলাথ, অনুরাগ কাশ্যপ-কাল্কি কাকেলানসহ অনেকেই।
এই ২০২১ সালেই যেমন ঘর ভেঙেছে সামান্থা রুথ-নাগা চৈতন্য, কীর্তি কুলহারি-সাহিল সেহগাল, হানি সিং-শালিনি সিং, নিশা রাওয়াল-করণ মেহতার মতো তারকা দম্পতিদের। আট বছর সংসার করার পর নিজ নিজ পথ বেছে নিয়েছেন ক্রিকেটার শিখর ধাওয়ান ও তাঁর স্ত্রী আয়েশা মুখার্জিও। তবে সবচেয়ে আলোচিত বিচ্ছেদটি ছিল নিঃসন্দেহে আমির খান ও কিরণ রাওয়ের। ১৫ বছরের সম্পর্কের ইতি টেনেছেন তাঁরা। তাই যে কারও মনেই প্রশ্ন জাগতে বাধ্য, কেন তাঁরা বিচ্ছেদের পথে হেঁটেছেন? এটির উত্তর এখনো অজানা। ঘর ভেঙেছে বলিউডের আলোচিত অভিনেত্রী রাখি সাওয়ান্তের। স্বামী রীতেশের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়। ব্যক্তি জীবনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো রাখঢাক না করে রাখি জানিয়েছেন, রীতেশ তাঁর সঙ্গে থাকতে চাননি। ২০১৯ সালে সাত পাক ঘুরলেও রাখি স্বামীকে দীর্ঘদিন জনসম্মুখে আনেননি। তাঁর স্বামীকে নিয়ে প্রশ্ন উঠলে রাখি জানান, পেশায় ব্যবসায়ী রীতেশের আগে একবার বিয়ে হয়েছে এবং তাঁর সন্তান আছে। কিন্তু সেই অতীতের কথা না জেনেই তাঁকে বিয়ে করেছিলেন এ অভিনেত্রী। একসময় মালাইকা অরোরা এবং আরবাজ খানের বিচ্ছেদ ছিল বলিউডের অন্যতম চর্চিত বিচ্ছেদ। ফারহান আখতার-অধুনা ভবানি, অমৃতা সিং-সাইফ আলী খানের বিচ্ছেদও ছিল সবার কাছে অবাক করা বিষয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।