তসলিমা নাসরিন, ফেসবুক থেকে : একটি মেয়ে তার স্ফীত উদর উদোম করে একটি পুরুষের গায়ে হেলান দিয়ে সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে আছে। এই ফটোটির বিরুদ্ধে বলছে রক্ষণশীল লোকেরা, পক্ষে বলছে প্রগতিশীল লোকেরা। পক্ষে বলতে গিয়ে কেউ কেউ এটিকে মহান এবং পবিত্র বলছে। কেন বলছে? যেহেতু মেয়েটি গর্ভবতী, তাই।
আমার চোখে ফটোটি শ্লীলও নয় অশ্লীলও নয়। গর্ভবতী বলে তার শরীর পবিত্র এবং মহান, এ আমি মানিনা। গর্ভবতী বলেই ছবিটি গর্ভহীন ছবির চেয়ে বেশি সুন্দর, এ আমি মানি না। মেয়েটি যদি গর্ভবতী না হতো, সে যদি তার উদর উদোম করে ফটো তুলতো, সেটি একই রকম অথবা তারও চেয়ে বেশি সুন্দর হতো। কেউ মানুক বা না মানুক গর্ভবতী অবস্থায় শারীরিক অনেক সমস্যার মুখোমুখি মেয়েদের হতে হয়। শারীরিক সমস্যাগুলো সুন্দর নয়, মহানও নয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই মেয়েদের গর্ভবতী হতে হয়, সন্তান জন্ম দিতে হয়।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের বংশ রক্ষা করার জন্যই মেয়েদের সন্তান বিশেষ করে পুত্র সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য করা হয়। আসলে বেশির ভাগ সময় মেয়ে যে বন্ধ্যা নয়, তা প্রমাণ করার জন্যই সন্তান জন্ম দিতে হয় মেয়েদের। তা না হলে মেয়েদের নিরন্তর গঞ্জনা সইতে হয়। সমাজ তো আমাদের এমনই।
এমন বৈষম্যের সমাজে একটি মেয়ের গর্ভবতী হওয়াটা এমন কী মহৎ ঘটনা? যে সন্তান জন্ম নেবে, সে সন্তানকে পরিচিত হতে হবে পিতার পরিচয়ে, সে সন্তানের নামের পদবী হবে পিতার পদবী, সে সন্তান হয়ে উঠবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আরও একটি ধারক এবং বাহক। জন্ম দেওয়া ছাড়া, সন্তান লালন পালন ছাড়া মেয়েদের আর কোনও ভূমিকাই নেই। যৌ নবস্তু আর সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র ছাড়া পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মেয়েদের আর কিছু বলে মনে করে না।
এই নষ্ট সমাজে বিয়ে না করা, গর্ভবতী না হওয়া, সন্তান জন্ম না দেওয়াই মেয়েদের সবচেয়ে সুন্দর কাজ, সবচেয়ে মহান কাজ, সবচেয়ে পবিত্র কাজ বলে আমি মনে করি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।