জুমবাংলা ডেস্ক : গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ হন রিয়াজ হোসেন (২১)। নিহত রিয়াজ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার তারানগর ইউনিয়নের ছোট ভাওয়াল গ্রামের বাসিন্দা আসাব উদ্দিন ও শেফালী বেগম দম্পতির ছেলে। চার ভাই বোনের মধ্যে রিয়াজ সবার ছোট।
কেরানীগঞ্জের ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্র ছিলেন রিয়াজ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন তিনি। স্বপ্ন ছিল দেশ সেবার, পরিবারের দারিদ্র্য ঘুচাবার, সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার কিন্তু একটি গুলি কেড়ে নিলো তার সব।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই বিকেলে মিছিলে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যেই বাসা থেকে বের হন রিয়াজ। সেদিন অন্যান্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে বছিলা ব্রিজ পেরিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থান নেন। সেদিনই বিকেলে মোহাম্মদপুর র্যাব ক্যাম্প-২ এর সামনে মাথায় গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় রিয়াজ। কিন্তু পরিবার সে খবর পায়নি।
রাতে রিয়াজ বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করতে শুরু করেন। পরদিন রিয়াজের বন্ধু শুভ জানায়, রিয়াজের মাথায় গুলি লেগেছে এবং তাকে কোনো এক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এ খবর পেয়ে দিশেহারা বাবা আসাব উদ্দিন এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ছেলের খোঁজ শুরু করেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ২০ জুলাই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে রিয়াজের লাশের সন্ধান পান।
রিয়াজের বন্ধু রাকিব জানায়, মোহাম্মদপুর র্যাব ক্যাম্প-২ এর সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রতিপক্ষ গুলি চালালে রিয়াজের মাথার পেছনে গুলি লাগে। সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে, পরিবারের সবচেয়ে ছোট ছেলেটির মৃত্যুতে স্তব্ধ রিয়াজের পরিবার। রিয়াজের মা শেফালী বেগম বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন। তিনি জানান, ‘যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমার ছেলে শহিদ হয়েছে তা যেন বাস্তবায়ন হয়। দেশের মানুষ যেন তার সুফল ভোগ করতে পারে। দেশের মানুষ যেন আমার ছেলেকে ভুলে না যায়। ছেলের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দেশবাসীর সবার কাছে দোয়া চাই।’
শেফালী বেগম আরও জানান, ‘আমার কলিজার টুকরা সন্তানকে যারা হত্যা করেছে আল্লাহপাক তাদের উপযুক্ত বিচার করবেন। মানুষ রিয়াজ হত্যার বিচার না করলেও আল্লাহ ঠিকই তার হত্যার বিচার করবেন।’
রিয়াজের বাবা আসাব উদ্দিন জানান, ‘আমার ছেলে কোনো দল করত না। সেনাবাহিনীতে চাকরি করার ইচ্ছা ছিল। সরকারি চাকুরিতে বৈষম্য দূর করতে আমার ছেলে আন্দোলনে গিয়েছিলো। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তার চাকরি করা হলো না। আমার ছেলেকে কেন এভাবে নির্মমভাবে মরতে হলো? আমি ছেলে হত্যার সঠিক বিচার চাই।’
রিয়াজের বড় বোন আফরোজা আক্তার লাবনী জানান, সবার ছোট রিয়াজকে নিয়ে পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল। ওর ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার। কিন্তু ঘাতকের বুলেটে রিয়াজের সেই স্বপ্ন ফুরিয়ে গেলো। রিয়াজ বলতো, ‘এই আন্দোলন না করলে মেধাবীদের অনেকেই চাকরি পাবে না। এ আন্দোলন শুধু আমার একার জন্য না এটা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্য।’
গত ১৩ আগস্ট ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানুল্লাহ আমান শহিদ রিয়াজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। পরে তিনি কেরানীগঞ্জের তারানগর ছোট ভাওয়াল জামে মসজিদ কবরস্থানে শহিদ রিয়াজের কবর জিয়ারত করেন।
এ সময় তিনি জানান, কেরানীগঞ্জে ছাত্র আন্দোলনে একমাত্র শহিদ রিয়াজ আমাদের গর্ব। শহিদ রিয়াজের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলার ঘরে ঘরে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য রিয়াজ । তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কেরানীগঞ্জের গাটাচর চত্বরের নাম শহিদ রিয়াজ হোসেন চত্বর হবে। এই চত্বরের মাধ্যমে শহিদ রিয়াজ আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে।
পার্কে আড্ডা দিচ্ছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুখে সাদা দাড়ি
এদিকে, কেরানীগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ রিয়াজ হোসেন হত্যা মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহ আলীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তিনি এই মামলার ১৯৬তম আসামি ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।