লাইফস্টাইল ডেস্ক : মুসলমানদের প্রয়োজনীয় সাজসজ্জায় ইসলাম কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করেনি। তবে অবশ্যই তা হতে হবে শরিয়ত সমর্থিত পন্থায়। শরিয়তকে উপেক্ষা করে বিজাতীয় সংস্কৃতি ও সাজসজ্জায় নিজেকে সজ্জিত করা সর্বতোভাবে অবৈধ। মহানবী (সা.) উম্মতকে বিজাতীয় সংস্কৃতি গ্রহণ করা থেকে সতর্ক করেছেন।
তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।’(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৩১)
এই হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করে অর্থাৎ তাদের কাজকর্ম, কথাবার্তা, আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ ও অভ্যাস, যেমন—খাবার পানীয় ও চালচলনে তাদের অনুকরণ করে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তার হুকুম তাদের হুকুমের মতো হয়ে যায়। তারা যদি কাফির ও ফাসেক হয়, তবে সে-ও তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে শাস্তির আওতায় পড়ে যায়।
শরয়ি দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলামে শরিয়ত সাজসজ্জা বিষয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে থাকে, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলুন, আল্লাহ নিজ বান্দাদের জন্য যে শোভার উপকরণ ও বিশুদ্ধ জীবিকা সৃষ্টি করেছেন, কে তা হারাম করেছে?’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩২)
এ জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে সাজসজ্জা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা পরিহার করে উষ্কখুষ্ক ও অপরিচ্ছন্ন থাকা ইসলাম সমর্থিত নয়; বরং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ। আল্লাহ তাআলাও সাজসজ্জা পছন্দ করেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, মানুষ চায় তার পোশাক সুন্দর হোক, জুতা সুন্দর হোক, এও কি অহংকার? তিনি বলেন, আল্লাহ সুন্দর। তিনি সুন্দরকে ভালোবাসেন। প্রকৃত পক্ষে অহংবোধ হলো, দম্ভভরে সত্য ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬৬)
অন্য হাদিসে এসেছে, এক দিন সফর থেকে ফেরার পথে রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কিরামকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইদের কাছে ফিরে যাচ্ছ, সুতরাং তোমাদের বাহন (যাত্রা-সজ্জা) এবং তোমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ ঠিক করো, যেন তোমরা মানবসমাজে সৌন্দর্যের প্রতীক হও। আল্লাহ তাআলা অশোভনতা ও অশালীনতা পছন্দ করেন না।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৭৯)
এ থেকে বোঝা যায়, অহেতুক অপরিচ্ছন্ন ও ময়লাযুক্ত থাকা কাম্য নয়, বরং প্রত্যেকে যার যার সক্ষমতা অনুযায়ী অপব্যয় পরিহার করে হালাল পন্থায় সাজসজ্জা গ্রহণ করতে পারবে। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা যখন বান্দাকে কোনো নিয়ামত দান করেন, তখন তিনি পছন্দ করেন বান্দার ওপর সে নিয়ামতের প্রভাব প্রকাশিত হোক।’ (সহিহুল জামে, হাদিস : ১৭১২)
মজলিসে সাজসজ্জা
আল্লাহ তাআলা পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা পবিত্র এবং পবিত্রতা ভালোবাসেন। তিনি পরিচ্ছন্ন ও পরিচ্ছন্নতা ভালোবাসেন।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৭৯৯)
এ জন্য কোনো সভা-সমাবেশ কিংবা কোনো মজলিসে উপস্থিত হওয়ার আগে নিজেকে পরিপাটি করে নেওয়া উত্তম। আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘একবার কয়েকজন সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাক্ষাত্প্রার্থী হয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিল। তিনি যখন তাদের কাছে যাওয়ার ইচ্ছা করলেন, হাত-মুখ ধুয়ে চুল-দাড়ি ঠিকঠাক করে পরিপাটি হয়ে নিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনিও এভাবে পরিচ্ছন্নতার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ! যখন কেউ ভাইদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যায়, সে যেন নিজেকে পরিপাটি করে নেয়। কারণ আল্লাহ তাআলা সুন্দর ও সৌন্দর্য পছন্দ করেন।’ (মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ : ১১/২৬৫)
এ জন্যই জুমা ও ঈদের নামাজে উপস্থিত হওয়ার সময় উত্তম পোশাক, সম্ভব হলে নতুন পোশাক পরার আদেশ করা হয়েছে।
অপব্যয় করা যাবে না
ইসলাম কোনো ক্ষেত্রেই সীমা লঙ্ঘন পছন্দ করে না। তাই সাজসজ্জাও সীমাতিরিক্ত না হওয়া উচিত। মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাকে বিলাসিতার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ আল্লাহর প্রিয় বান্দারা বিলাসিতাপ্রবণ হয় না।’ (জামে ছগির, হাদিস : ২৮৭৭)
সুতরাং সাজসজ্জার ক্ষেত্রে অপব্যয় থেকে বেঁচে থাকা মুসলমানদের একান্ত কর্তব্য।
ফয়জুল্লাহ রিয়াদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।