জুমবাংলা ডেস্ক : সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য দেশের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এক বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে—এবার আর মহার্ঘ ভাতা নয়, বরং বাড়ানো হচ্ছে বিশেষ প্রণোদনার হার। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের ঘোষণার মাধ্যমে এই নতুন ব্যবস্থাটি সামনে এসেছে, যা সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য একটি নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বনাম বিশেষ প্রণোদনা
মহার্ঘ ভাতা হলো এমন একটি আর্থিক সহায়তা যা সাধারণত জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে কর্মচারীদের দেওয়া হয়। কিন্তু এই বছর সরকার তা থেকে সরে এসে বিশেষ প্রণোদনার পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন ১০ম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত কর্মকর্তারা বর্তমান ৫ শতাংশের সঙ্গে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ পেয়ে মোট ১৫ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন। অন্যদিকে, ১ম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তারা পাবেন ১০ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা।
এই পরিবর্তনের ফলে একদিকে যেমন কর্মীদের আর্থিক সুবিধা বাড়ছে, তেমনি সরকারের খরচও বাড়ছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ডকুমেন্ট অনুযায়ী, অফিসারদের জন্য ১৩ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা এবং কর্মচারীদের জন্য ৩০ হাজার ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বাজেট বিশ্লেষণ: সরকারি ব্যয় ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট বেতন-ভাতায় বরাদ্দ হয়েছে ৮৪ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন ভাতা বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা। চলতি বছরের তুলনায় নতুন এই বরাদ্দে সামান্য বৃদ্ধি থাকলেও বিশেষ প্রণোদনার পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে অনেক বেশি ব্যয় হবে। উল্লেখযোগ্য যে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৭৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
সরকারি খাতে প্রায় ৫০ হাজার কর্মী আগামী বছর অবসরে যাচ্ছেন, ফলে পেনশনের ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। এই বাস্তবতার মধ্যেও সরকার বিশেষ প্রণোদনার দিকে মনোযোগ দিয়েছে, যা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মানবিক সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই প্রণোদনার ঘোষণার পেছনে অন্যতম কারণ ২০১৫ সালের পর থেকে নতুন কোনো বেতন কাঠামো না হওয়া। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
সমালোচনা ও বিশ্লেষণ
বিশেষ প্রণোদনা বৃদ্ধি নিয়ে সমালোচনা করেছেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি মনে করেন, মূল্যস্ফীতির সময় সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাড়ানো হলে তা সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিতে পারে। তাছাড়া বেসরকারি খাতে বেতন বৃদ্ধি না হওয়ায় একটি বৈষম্যও তৈরি হতে পারে।
তাঁর মতে, সরকারের উচিত হবে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাতে সামাজিক ন্যায্যতা বজায় থাকে এবং বেসরকারি খাতের মানুষের ওপর করের চাপ কমে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপটি একটি অস্থায়ী সমাধান হলেও এটি সরকারি চাকরিজীবীদের মনোবল বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। যদিও এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মূল্যস্ফীতি এবং আর্থিক ভারসাম্যে কেমন পড়বে তা এখনই বলা কঠিন।
বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও, এটি স্পষ্ট যে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা নয়, বিশেষ প্রণোদনার দিকেই আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে।
প্রশ্নোত্তর (FAQs)
সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা কি পুরোপুরি বাতিল হয়েছে?
না, মহার্ঘ ভাতা বাতিল করা হয়নি, তবে তার পরিবর্তে বিশেষ প্রণোদনা বাড়ানো হয়েছে।
বিশেষ প্রণোদনার হার কত?
১ম থেকে ৯ম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তারা ১০ শতাংশ এবং ১০ম থেকে ২০তম গ্রেডভুক্তরা ১৫ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা পাবেন।
এই পরিবর্তনে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় কত হবে?
প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে এই বিশেষ প্রণোদনা বৃদ্ধির ফলে।
এই সিদ্ধান্তের কারণে মূল্যস্ফীতির প্রভাব কী হতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ব্যয় মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে, তবে এটি সরকারি কর্মীদের জন্য স্বস্তির বিষয়।
বেসরকারি খাতের কর্মীরা কি একই ধরনের সুবিধা পাবেন?
এই ঘোষণা শুধুমাত্র সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য, বেসরকারি খাতে এমন সুবিধা এখনো নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।