বিনোদন ডেস্ক :
চলচ্চিত্রাঙ্গনের এক বর্ণিল অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো, যখন প্রখ্যাত খলনায়ক সাংকো পাঞ্জা ২৯ মে ২০২৫ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে দেশের বিনোদন জগতে এক গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগে অবশেষে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পরদিন, অর্থাৎ ৩০ মে শুক্রবার সকাল ১০টায় রূপগঞ্জে শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
Table of Contents
সাংকো পাঞ্জা: এক জীবন্ত কিংবদন্তি
সাংকো পাঞ্জা নামেই অধিক পরিচিত মাহবুবুল ইসলাম সিদ্দিকী ১৯৬৬ সালের ২৭ এপ্রিল চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তার চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা ঘটে ১৯৯৭ সালে ‘মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা’ সিনেমার মাধ্যমে। পরবর্তীতে তিনি প্রায় দুই শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেন এবং প্রতিটি চরিত্রেই অনন্য ছাপ রাখেন।
তার খলনায়ক চরিত্রগুলো দর্শকের মনে চিরস্থায়ী হয়ে রয়েছে। ‘প্রেম কয়েদি’, ‘মনের জ্বালা’, ‘দুর্ধর্ষ’, ‘ধর মাস্তান’ ইত্যাদি সিনেমায় তিনি যে চরিত্রগুলো রূপদান করেন, তা বাংলা চলচ্চিত্রে অনবদ্য একটি অবদান হিসেবে বিবেচিত হয়। সাংকো পাঞ্জা ছিলেন শুধু একজন খল অভিনেতা নন, বরং একজন শক্তিশালী অভিনেতা যিনি তাঁর অভিনয় দক্ষতা দিয়ে প্রতিটি দর্শকের হৃদয় ছুঁয়েছেন।
সাংকো পাঞ্জার মৃত্যু ও দাফন: শিল্পীমহলে শোকের ছায়া
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংকো পাঞ্জার মৃত্যু ঘটে। তার মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই চলচ্চিত্র শিল্পীমহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য সনি রহমান জানান, বৃষ্টির কারণে অনেকে জানাজায় উপস্থিত হতে না পারলেও, সমিতি তার পরিবারের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
স্থানীয় একটি মসজিদে জানাজা শেষে তার শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। তার দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা। রূপগঞ্জের সেই ছোট্ট কবরস্থান আজ এক কিংবদন্তির চিরনিদ্রার স্থান হয়ে উঠেছে।
ব্যক্তিজীবনে সাংকো পাঞ্জা
দুই কন্যার জনক সাংকো পাঞ্জা ছিলেন এক রসবোধসম্পন্ন ও নিরহংকারী মানুষ। সহকর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রিয়। বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগেও তিনি নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে, তিনি শিল্পীদের কল্যাণে সবসময় সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন।
তার কর্মজীবন ও জনপ্রিয়তা
সাংকো পাঞ্জার প্রায় ২০০টি চলচ্চিত্রে কাজ করা একটি বিরল অর্জন। তার খলনায়ক চরিত্রে এত শক্তিশালী ও বাস্তবতা মিশ্রিত অভিনয় ছিল যে দর্শকরা তাকে ঘৃণা করতেন কিন্তু তার অভিনয় দক্ষতার প্রশংসা করতেন। তিনি ছিলেন এক দৃষ্টান্তমূলক প্রতিভা, যার প্রতিটি সিনেমাই দর্শকদের মাঝে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
এছাড়াও তিনি টিভি নাটকেও মাঝে মাঝে অভিনয় করতেন। তার পেশাদারিত্ব ও শৃঙ্খলার জন্য তিনি প্রযোজক ও পরিচালকদের কাছেও ছিলেন অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য একজন শিল্পী।
তথ্যসূত্র হিসেবে এই নিবন্ধে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারি তথ্যসেবা থেকে প্রাপ্ত তথ্য।
সাংকো পাঞ্জা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এমন একটি নাম হয়ে থাকবে, যার অভাব কখনও পূরণ হবার নয়। তার কর্ম ও চরিত্র বাংলা চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছে এবং আগামীর শিল্পীদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
সাংকো পাঞ্জার প্রকৃত নাম কী?
তার প্রকৃত নাম মাহবুবুল ইসলাম সিদ্দিকী।
সাংকো পাঞ্জা কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
তিনি চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন।
তার প্রথম চলচ্চিত্র কোনটি?
১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা’ তার প্রথম চলচ্চিত্র।
তিনি মোট কতটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন?
তিনি প্রায় দুই শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
তার পরিবারে কে কে রয়েছেন?
তিনি স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তান রেখে গেছেন।
সাংকো পাঞ্জার দাফন কোথায় হয়েছে?
তার শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে রূপগঞ্জে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।