বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মহানায়ক’ খ্যাত অভিনেতা উত্তম কুমার। কিংবদন্তি এই অভিনেতা অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সফল চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন। তার সঙ্গে জুটি বেঁধে অনেকে পেয়েছে তারকা খ্যাতি। ব্যক্তিগত জীবনে উত্তম কুমারের নাম জড়িয়েছে অনেক জনপ্রিয় নায়িকার সঙ্গে। এ তালিকার অন্যতম সাবিত্রী চ্যাটার্জি। উত্তম-সাবিত্রীকে নিয়ে নানা মুখরোচক কথা প্রচলিত রয়েছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। উত্তম কুমারের প্রেমে সংসার বিবাগী সাবিত্রী। যদিও এসব কথা অস্বীকার করেন এই অভিনেত্রী। তবে এবার সাবিত্রী স্বীকার করলেন—উত্তম কুমারের প্রতি তার আকাঙ্ক্ষা ছিল। উত্তম কুমারকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে কলম ধরলেন এই বরেণ্য অভিনেত্রী। চলুন পড়ে নিই, সাবিত্রীর ভাবনায় উত্তম কুমার—
মানুষের শরীরের মৃত্যু হলেও, কখনো আত্মার মৃত্যু হয় না। তা না হলে এত বছর পরও, উত্তম কুমারকে ঘিরে কেন এত লেখালিখি হয়? কেনই বা এত আলোচনা? তাকে মনে আছে বলেই তো সকলে স্মরণ করেন। সত্যি কথা বলতে, এমন একটা দিনও যায় না, যে দিন মানুষের মুখে উত্তম কুমারের নাম একবারও ওঠে না। ৩৬৫ দিনের কোনো না কোনো সময়ে তার কাজ নিয়ে আলোচনা হবেই। অন্তত আমি তো বেঁচে আছি, তাই সত্যিটা জানি। এত বছরে আমি যা যা বলার মানুষটি সম্পর্কে সব বলে দিয়েছি। এখন যা বলব, সবই মিথ্যে হবে।
আজ শুধু একটা কথাই স্পষ্ট করতে চাই, এমন জুটি আর কখনো তৈরি হবে না। আসলে সত্যি বলতে ইন্ডাস্ট্রিতে আর কখনো কোনো উত্তম কুমার জন্মাবেই না! কেউ বিশ্বাস করুক বা না-ই করুক, এটাই সত্যি। কিছু কিছু মানুষ আছেন, যেমন ছবি বিশ্বাস, প্রভাদেবী যারা আর জন্মাবেন না। যারা হাসতে হাসতে কাঁদতেন, কাঁদতে কাঁদতে হাসতেন। তাই তাদের কোনো বিকল্প হবে না। নতুন প্রজন্ম হয়তো তাদের দেখেওনি। তবু সব বিলুপ্ত হয়ে গেলেও, কিছু কিছু সিনেমার মাধ্যমে তারা আজীবন মানুষের মনে থেকে যাবেন।
একটা ছোট্ট ঘটনা মনে পড়ল, উত্তম কুমারও কিন্তু বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে ‘মহানায়ক’ হয়েছেন। তিনি একটা সময়ে এমপি প্রোডাকশনের সঙ্গে বহু সিনেমা করেছিলেন। ওদের বিরাট স্টুডিও ছিল। যে প্রোডাকশনের সঙ্গে দীর্ঘদিন চুক্তিবদ্ধও ছিলেন উত্তম কুমার। ‘বসু পরিবার’ বলে একটা সিনেমা করেছিল তারা। যে সিনেমায় সুপ্রিয়াদেবী, আমিও ছিলাম। একক থায় সুপারহিট হয়েছিল সিনেমাটি। তার আগে উত্তম কুমার অনেক সিনেমা করলেও, একটাও সেভাবে হিট হয়নি। কিন্তু ওই সিনেমায় এমন একটা ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, যেটা অভাবনীয়। তার পরে আর উত্তম কুমারকে কেউ কখনো ধরতে পারেননি।
‘সাবু’ বলে অমন ডাক কত বছর হয়ে গেল শুনিনি। এখনো কিছু কথা মনে পড়লে চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়ে। আমি ওর কথা বলতে বলতেই কেঁদে ফেলি। একটা মানুষ একটা মানুষের হৃদয়ে থাকে। এক সময়, সংবাদপত্রে আমাদের নিয়ে বিভিন্ন লেখালিখি হয়েছিল। আজ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবলে আর খারাপ লাগে না। আসলে সেই সময়ে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের বিভিন্ন গসিপ জানার জন্য কেউ না খেতে পেলেও ওই সংবাদপত্রটা কিনত। বিশেষ করে শুক্রবার আর রবিবারের সংখ্যাটা। যত সব গোপন কথা আর মিথ্যে ওখানে পাওয়া যেত।
সেই পত্রিকায় একবার প্রকাশিত হয়েছিল সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ও উত্তম কুমার বিয়ে করেছেন। একদিন ঘুম থেকে উঠেই খবরটা দেখলাম। এমনভাবে লেখা হয়েছিল যেন, ওই সংবাদপত্রের সকলে বিয়েতে উপস্থিত ছিল। এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর যেমনটা হয়, ওর বাড়িতে তো ভীষণ আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। আমার বাবা কিন্তু একটা প্রশ্নও আমাকে করেননি। কারণ যখন আমি পা রাখি ফিল্মি দুনিয়ায়, তখন বাবা বলেছিলেন—এত দিন ধরে আমরা তোমায় বড় করেছি। এবার তোমার জীবনের ভালো-মন্দের দায়িত্ব তোমাকেই নিতে হবে। খারাপ করলে খারাপ ফল, ভালো করলে ভালো ফল পাবে। সেই কথাগুলো মাথায় গেঁথে গিয়েছিল।
ওই খবরের কাগজটা আর সকলের মতো সে দিন আমিও কিনে এনেছিলাম বাড়িতে। পড়ার পরে স্তম্ভিত হয়ে খানিকক্ষণ বসে থেকেছি। তার পরে খালি মনে হতো এই খবরের কাগজের লেখাগুলো যদি সত্যি হতো, কী ভালোই না হতো। আসলে মিথ্যে বলব না, আমারও তো একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল। উত্তম কুমার সবসময় বলতেন, ‘তুই তো আমার ছেলের থেকে কয়েক বছরের বড়। আমার হাঁটুর চেয়েও কম বয়স তোর।’
আমাদের বাড়িতে এসে কতদিন জমিয়ে খাওয়াদাওয়া করতেন। আসলে আমার দিদি খুব ভালো রান্না করতেন। উত্তম কুমার বলতেন, ‘সাবু তোর যদি কখনো খুব খারাপ দিন আসে, তুই তা হলে সিনেমা থেকে সরে গেলেও একটা রেস্তোরাঁ খুলিস। দিদির সঙ্গে মিলেমিশে চালাতে পারবি। আয়ও হবে। মানুষ খেয়ে শান্তিও পাবে।’ কত কথা, কত স্মৃতি, সবটাই মনের ভিতরে গেঁথে রয়েছে। যত দিন বাঁচব এভাবেই একঝাঁক স্মৃতি থেকে যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।