লাইফস্টাইল ডেস্ক : সততা যে কোনও সম্পর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গুণ—হোক সেটা বন্ধু, পরিবার বা সহকর্মীদের সঙ্গে। কিন্তু সবাই সবসময় সত্যবাদী হয় না। কিছু মানুষ নিজেদের রক্ষা করার জন্য, সুবিধা নেওয়ার জন্য, বা কেবল অভ্যাসবশত মিথ্যা বলে। আমরা সবাই চাই যে মিথ্যাবাদী মানুষকে সহজেই চিনতে পারব, কিন্তু বাস্তবতা হলো প্রতারণা সবসময় স্পষ্ট হয় না।
ভাগ্যক্রমে, মনোবিজ্ঞান আমাদের কিছু স্পষ্ট লক্ষণ চেনার উপায় দিয়েছে। যদি আপনি সঠিক লক্ষণগুলোর দিকে খেয়াল রাখেন, তবে সহজেই বুঝতে পারবেন কখন কেউ পুরোপুরি সত্য বলছে না। এখানে ৯টি লক্ষণ রয়েছে যা ইঙ্গিত করতে পারে যে কেউ হয়তো সত্য বলছে না—
১) তারা সরাসরি উত্তর দেওয়া এড়িয়ে যায়
আপনি কি কখনও কাউকে সাধারণ একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন, অথচ তারা অস্পষ্ট বা অপ্রয়োজনীয় জটিল উত্তর দিয়েছে? এটি একটি ইঙ্গিত হতে পারে যে তারা পুরোপুরি সত্য বলছে না। মনোবিজ্ঞানীরা একে “ডিফ্লেকশন” বা এড়িয়ে যাওয়া বলেন, যা দায়িত্ব এড়ানোর জন্য ব্যবহৃত একটি সাধারণ কৌশল।
২) তাদের একই ঘটনা বিভিন্ন ভাবে বলে
আমি একবার এক সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করেছিলাম, যে সবসময় তার বিলম্ব বা ভুলের জন্য অজুহাত দিত। প্রথমে আমি কিছু মনে করিনি, কিন্তু পরে লক্ষ করলাম যে তার কথা বারবার বদলাচ্ছে। একদিন সে বলল, তার গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সে দেরি করেছে। পরে জানতে পারলাম, সে কয়েক মাস আগেই সেই গাড়ি বিক্রি করেছিল।
এমন ছোটখাটো অসঙ্গতি শুরুতে বড় কিছু মনে নাও হতে পারে, কিন্তু যদি কেউ বারবার নিজের কথার সঙ্গে বিরোধিতা করে, তাহলে সেটা মিথ্যার লক্ষণ হতে পারে।
৩) তারা চোখের যোগাযোগ এড়িয়ে চলে কিংবা বেশিই তাকিয়ে থাকে
সাধারণত, সৎ মানুষরা স্বাভাবিকভাবে চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে। কিন্তু মিথ্যা বলার সময় অনেকে হয়তো চোখের দিকে তাকাতে চায় না বা অতিরিক্ত তাকিয়ে থাকে। কেউ কেউ লজ্জা বা উদ্বেগের কারণে চোখ সরিয়ে নেয়, আবার কেউ কেউ অত্যধিক চোখের যোগাযোগ করে, যেন তারা খুবই নির্ভরযোগ্য প্রমাণ করতে চায়। অতিমাত্রায় চোখের যোগাযোগ কিংবা চোখ সরিয়ে নেওয়া—উভয়ই অসততার লক্ষণ হতে পারে।
৪) প্রশ্ন করলে তারা আত্মরক্ষামূলক হয়ে ওঠে
সৎ মানুষ সহজেই প্রশ্নের উত্তর দেয়, এমনকি হঠাৎ করে প্রশ্ন করলে। কিন্তু অসৎ ব্যক্তি প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে, বিরক্ত হয়, বা বিষয় পরিবর্তন করার চেষ্টা করে। তারা হয়তো বলবে, “তুমি কেন এসব প্রশ্ন করছ?” বা “তুমি কখনই আমাকে বিশ্বাস করো না!” এটি প্রমাণ করে যে তারা চাপ অনুভব করছে এবং সত্য আড়াল করার চেষ্টা করছে।
৫) তারা অপ্রয়োজনীয় বিশদ তথ্য যোগ করে
মিথ্যাবাদীরা প্রায়ই তাদের গল্পকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য অপ্রয়োজনীয় বিশদ যোগ করে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি বলে, “আমি দেরি করেছি কারণ ট্রাফিক ছিল,” সেটি সাধারণ একটি উত্তর।
কিন্তু কেউ যদি বলে, “আমি দেরি করেছি কারণ মেইন রোডে একটা বিশাল দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তারপর জিপিএস আমাকে নতুন রাস্তায় নিয়ে গেল, যেখানে প্রচুর লাল বাতি ছিল, তারপর একটা লোক খুব ধীরে কুকুর হাঁটাচ্ছিল…” তাহলে বুঝতে হবে যে তারা মিথ্যা ঢাকতে চেষ্টা করছে।
৬) তারা ভুল স্বীকার করতে চায় না
সততা শুধু সত্য বলা নয়, বরং নিজের ভুল স্বীকার করাও এর অংশ। কিন্তু মিথ্যাবাদীরা প্রায়ই নিজেদের ভুল স্বীকার করতে চায় না, তারা অজুহাত দেয়, দোষ অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়, বা বিষয়টিকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করে। সত্যিকারের সৎ ব্যক্তি নির্ভয়ে বলতে পারে “আমি ভুল করেছি,” কিন্তু যারা মিথ্যা বলে তারা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
৭) ধরা পড়লে আচরণ বদলে ফেলে
কেউ মিথ্যা বললে এবং আপনি সেটা ধরে ফেললে, তাদের আচরণ হঠাৎ পরিবর্তিত হতে পারে। কেউ কেউ রেগে যায়, কেউ বেশি নম্র হয়ে যায়, আবার কেউ হয়তো কথা কমিয়ে ফেলে বা দূরত্ব বজায় রাখে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে তারা অস্বস্তিতে পড়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।
৮) তাদের অতীতে অসততার নজির আছে
মানুষ পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু অভ্যাসগত মিথ্যাবাদীরা সাধারণত একই কাজ বারবার করে। যদি কেউ আগেও মিথ্যা বলেছে এবং ধরা পড়েছে, তবে তারা আবারও একই কাজ করতে পারে। সততার ভিত্তি হলো বিশ্বাস, এবং যদি কেউ বারবার সত্যকে বিকৃত করে, তাহলে তাদের কথা বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে যায়।
বিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠনে আরব নেতাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের
৯) তাদের কাজ ও কথার মধ্যে অমিল থাকে
সবচেয়ে বড় সততার পরীক্ষা হলো “তারা যা বলে, তা কি করে?” কেউ হয়তো বারবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, “আমি বদলাব,” কিন্তু যদি তাদের কাজ তার বিপরীত হয়, তাহলে কথার মূল্য থাকে না। সৎ মানুষ শুধু কথা বলে না—তারা সেই অনুযায়ী কাজও করে। যদি কারও কথা ও কাজ বারবার অসঙ্গত হয়, তাহলে সেই মানুষকে বিশ্বাস করার আগে আরও গভীরভাবে ভাবা উচিত।
এই লক্ষণগুলোর দিকে খেয়াল রাখলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কখন কেউ সম্পূর্ণ সত্য বলছে না। সতর্ক থাকুন এবং সবসময় কাজকেই গুরুত্ব দিন, কথাকে নয়!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।