আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সৌদি আরবে কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার কাউছার (৩০) মারা যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে তার পরিবার। রয়েছে ঋণ পরিশোধের চাপ। সরকারের কাছে মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানিয়েছে পরিবার।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের অলহরী জয়দা গ্রামের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রী মোতাহার আলী আট ছেলেমেয়ের জনক। অভাব-অনটনের সংসারে বড় ছেলে কাউছারও রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। বছর দেড়েক আগে ছেলের ইচ্ছায় ও সংসারের স্বচ্ছলতার আশায় মোতাহার আলী তাকে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় ছয় লাখ টাকা সংগ্রহ করে কাউছারকে সৌদি আরব পাঠানো হয়।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বছর দেড়েকের মধ্যেই সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের আল হাসা জাফরা SACCO কোম্পানিতে কর্মরত অবস্থায় এক মারাত্মক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। গত ৩ মার্চ স্থানীয় সময় বেলা আনুমানিক ১১টায় কাজ করার সময় তার মাথার ওপর ভারী বস্তু পড়ে যায়, এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
কাউছারের অকাল মৃত্যুতে বিপাকে পড়েছে অসহায় পরিবারটি। একদিকে ছেলের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার আকুতি, অন্যদিকে ঋণ পরিশোধের চাপ। পরিবারের সদস্যরা নিদারুণ কষ্ট ও অনিশ্চয়তায় দিনযাপন করছে। তারা সরকারের কাছে দ্রুত মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
তিন বছর আগে কাউছার-জেসমিন দম্পতির বিয়ে হয়। তাদের ঘরে কারিমাতুন জান্নাত রাফা নামের ১৫ মাসের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে রেখে কাউছার বিদেশ যাওয়ার মাত্র আট দিনের মাথায় জন্ম নেয় রাফা।
কাউছারের স্ত্রী জেসমিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “তিন বছর হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে। এক বছর আমার কাছে ছিল, তারপর বিদেশ যাওয়ার কথা বলল। আমি অনেক বুঝিয়েছি—ঋণ করে বিদেশ যাওয়ার দরকার নেই। আমরা গরিব মানুষ, ঋণ করে বিদেশ গেলে অনেক বিপদ হতে পারে। মানুষ ঋণের টাকা সহজে মাফ করে না। কিন্তু সে শোনেনি। পরে আমি মেনে নিয়েছিলাম, ভাবছিলাম আমাদের ভালো হবে। আল্লাহ আমাদের সন্তানের জন্য ভালো কিছু লিখেছেন। এখন সেই তৌফিকও নেই, আমার সন্তানের মুখে ১০ টাকা খাওয়ানোরও সামর্থ্য নেই। বাবাকে একবার কোলে নেওয়ার সুযোগও পেল না আমার মেয়ে। বিদেশ যাওয়ার আট দিনের মাথায় ওর জন্ম হয়েছিল।”
কাউছারের প্রতিবেশী আব্দুল্লাহ বলেন, “বাবা-ছেলে মিলে রাজমিস্ত্রির কাজ করত। মোটামুটি ভালোই চলছিল। কিন্তু আরেকটু ভালোভাবে চলার আশায় আত্মীয়স্বজন ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশ যায়। এখন একদিকে ছেলের মরদেহ পাওয়া যাচ্ছে না, অন্যদিকে মানুষের ঋণের চাপ, তার ওপর সংসার চালানোর কষ্ট। সব মিলিয়ে পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছে।”
কাউছারের চাচা আতাহার আলী বলেন, “আমাদের পাশের বাড়ির এক চাচাতো ভাই সৌদি আরবে থাকে। তার মাধ্যমেই আমরা প্রথম মৃত্যুর খবর পাই। কয়েকদিন হয়ে গেল, এখনো মরদেহ দেখতে পেলাম না। কী অবস্থায় আছে, তাও জানি না। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, ছেলের মরদেহ যেন দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।”
কাউছারের বাবা মোতাহার আলী বলেন, “আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। এত কষ্ট করে, ঋণ করে, ছেলে বিদেশে পাঠালাম। আজ সে আর নেই। এখন কী করব? একদিকে ঋণের বোঝা, অন্যদিকে ছেলের বউ, নাতনি আর পুরো পরিবারের খরচ—সব মিলিয়ে কীভাবে সামলাব? দেশে মারা গেলে অন্তত ছেলের মরদেহ দেখতে পারতাম, এখন সেটাও হবে কি না জানি না।”
কমমূল্যে সেরা 5G স্মার্টফোন, রইল Samsung, Redmi সহ একাধিক ব্র্যান্ড
পরিবারের দাবি, সরকার যেন দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনে এবং ঋণগ্রস্ত পরিবারটিকে সহায়তা করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।