উজ্জল বিশ্বাস : দেশে সয়াবিন তেলের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। সর্বশেষ ৯ জুন রান্নার অতি প্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম ৭ টাকা বাড়িয়ে ২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তেলের দাম বৃদ্ধিতে জনজীবনে পড়েছে নানাবিধ প্রভাব।
সর্বশেষ ৯ জুন এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর বোতলজাত এক লিটার সয়াবিনের সর্বোচ্চ খুচরা দাম নির্ধারণ করা ২০৫ টাকা। এছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ধরা হয় ৯৯৭ টাকা। এক লিটার খোলা পাম তেলের দাম বাড়িয়ে ১৫৮ টাকা করা হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৭ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ গত চার মাসে বোতলজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে ৩৮ টাকা। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৪২ টাকা।
সয়াবিন তেলের দাম বাড়ায় জনজীবনে নানাবিধ প্রভাব পড়েছে। হোটেলে খাবারের দাম বেড়েছে। দোকানে পরোটার আকার ছোট হয়ে দাম দ্বিগুণ হয়েছে। রান্নায় তেলের ব্যবহার কমেছে। বেড়েছে ব্রেড, কেক, মসুরের ডাল, চালসহ তেল দিয়ে তৈরি পণ্যের দাম।
ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির ফলে চরম বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। একই সঙ্গে বেড়েছে নিত্যব্যবহার্য অন্য পণ্যের দাম। এতে মানুষের ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় আয় বাড়েনি। নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে। সয়াবিনের সঙ্গে সরিষার তেলের দামও বাড়ানো হয়েছে।
লালবাগের শাহি মসজিদ এলাকা থেকে কেল্লার মোড়ে বাজার করতে এসেছেন সোনালী বালা। তিনি বলেন, চার সদস্যের পরিবারে আগে মাসে ৪ লিটার তেল লাগতো। দাম বাড়ায় তেলের খরচ কমাতে হয়েছে। এখন আড়াই লিটার তেলে মাস চালানোর চেষ্টা করি। তরি-তরকারিতে কাটছাঁট করতে হয়েছে। বাজারে সস্তা সবজি বেশি কিনি। তারপরও মাস শেষে হাতে কোনো টাকা থাকে না।
রাজধানীর টেনারি মোড় এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জয় বিশ্বাস। তিনি জানান, করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় কমে যাওয়ায় শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন অর্ধেক করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখন যা বেতন দেওয়া হয় তা দিয়ে সংসার চালানো অনেক কষ্টের। তার ওপর সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছি না।
ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকার আরামবাগ হোটেলের মালিক মহিউদ্দিন জানান, আগে রুই মাছ টাকা ১৩০ টাকা, পাবদা ১২০ টাকা, শিং মাছ ১২০, তেলাপিয়া ৯০ টাকা, কৈ মাছ ৯০ টাকা, পাঙাশ ৬০ টাকা, মুরগি ৬০ টাকা, ঝাল ফ্রাই ১০০ টাকা, খাসি ১৫০ টাকা রাখা হতো। কিন্তু তেলসহ অন্যান্য সবজির দাম বৃদ্ধির ফলে সব আইটেমে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে হয়েছে। শাক-সবজি, ভর্তার দামও ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে হয়েছে। আগে ফ্রিতে ডাল দেওয়া হলেও এখন ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীর কাওরান বাজারের মিলু স্টোরের সত্ত্বাধিকারী বিপ্লব কুমার সাহা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার দেশে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কোম্পানিগুলো চাহিদামত তেল সরবরাহ করছে। বাজারে তেলের চাহিদা অনেকটাই স্বাভাবিক।
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের প্রভাব পড়েছে। এতে সয়াবিনের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। সূত্র : ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।