মাইমুনা আক্তার : মহাগ্রন্থ আল-কোরআন মহান আল্লাহর পবিত্র কালাম। যা মানুষকে আলোকিত করে, ঈমান বৃদ্ধি করে, সঠিক পথের দিশা দেয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যাদের আমি কিতাব দিয়েছি, তারা তা পাঠ করে যথার্থভাবে। তারাই তার প্রতি ঈমান আনে। আর যে তা অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
(সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২১)
এর তিলাওয়াতের ফলে যেমন মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়, তেমনি পাওয়া যায় অফুরন্ত সওয়াব। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলার কিতাবের একটি হরফ যে ব্যক্তি পাঠ করবে তার জন্য এর সওয়াব আছে। আর সওয়াব হয় তার দশ গুণ হিসেবে।
আমি বলি না যে ‘আলিফ-লাম-মীম’ একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ। (তিরমিজি, হাদিস : ২৯১০)
প্রশ্ন হলো, নামাজও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, কোরআন তিলাওয়াতও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কেউ যদি নফল নামাজের মধ্যে দীর্ঘ তিলাওয়াত করে, তাহলে কি অধিক মহিমান্বিত হবে? এর উত্তর হলো, হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী বোঝা যায় যে নামাজে দীর্ঘ তিলাওয়াত এর মাহাত্ম্যকে আরো বাড়িয়ে তোলে।
হজরত জাবের (রা.) বলেন, নবীজি (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন ধরনের নামাজ উত্তম? তিনি বলেন, যে নামাজে দীর্ঘ দাঁড়ানো হয়।
(তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৭)
হাদিস ব্যাখ্যাকারগণ লিখেন, নামাজ দ্বিনের স্তম্ভ। ইসলামের মৌলিকের রুকন বা স্তম্ভগুলোর মধ্যে অন্যতম। নামাজ প্রতিটি মুসলমানের ওপর বাধ্যতামূলক। নামাজ ছিল নবীজি (সা.)-এর চক্ষু শীতলকারী। তাই তিনি অধিক পরিমাণে নফল নামাজ ও কিয়ামুল লাইল করতেন।
এমনকি পরিপূর্ণ খুশুখুজু ও আন্তরিকতার সহিত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কিরাত পড়া, দোয়া পড়ার কারণে তাঁর চরণযুগল ফুলে যেত। হাদিসে নবীজি (সা.) দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়াকে উত্তম নামাজ বলেছেন। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, নামাজে দীর্ঘ সময় তিলাওয়াত করা। নবীজি (সা.) সাধারণত নফল ও কিয়ামুল লাইল-এ দীর্ঘ তিলাওয়াত করতেন। প্রতি আয়াতে ওয়াকফ করতেন। তবে ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। ফরজ নামাজ যেহেতু জামাতে আদায় করার নির্দেশ, নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট রাকাতে সীমাবদ্ধ, উপরন্তু অসুস্থ ও দুর্বলদের কথা বিবেচনায় রাখতে হয়, তাই সেখানে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা মেনে চলতে হয়, কিন্তু নফল তো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, সেখানে রাকাতের সীমাবদ্ধতা নেই, দীর্ঘ সময় কিরাত পড়াতে কোনো বাধা নেই, তাই প্রতিটি মুমিন তার সক্ষমতা অনুযায়ী তা যতটা দীর্ঘ করা সম্ভব দীর্ঘ করাই তার জন্য উত্তম। নামাজের প্রতিটি রুকন অত্যন্ত সাবলীলভাবে খুশুখুজুর সহিত পালন করা উচিত।
অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, নামাজে কোরআন পাঠ নামাজের বাইরে কোরআন পাঠ করার চেয়ে উত্তম। নামাজের বাইরে কোরআন পাঠ তাসবিহ ও তাকবির পড়ার চেয়ে উত্তম…। (শুআবুল ঈমান, ২০৪৯, মিশকাত, হাদিস : ২১৬৬)
শেষ রাতে মুমিনের তিলাওয়াত শোনার জন্য আসমান থেকে ফেরেশতারা নেমে আসেন। তাই শেষ রাতে যদি দীর্ঘ নামাজে তিলাওয়াত করা যায়, তা তিলাওয়াতের মাহাত্ম্যকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করো এবং ফজরের কুরআন*। নিশ্চয় ফজরের কুরআন (ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়। আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় করো তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।
(সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৮-৭৯)
এ জন্যই নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে সম্ভব হলে শেষ রাতে বিতর পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ শেষ রাতে জাগতে পারবে না বলে আশঙ্কা করলে সে যেন রাতের প্রথমভাগেই বিতর পড়ে নেয়, অতঃপর ঘুমায়। আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রাতের শেষভাগে সালাত পড়ার আশা করে সে যেন শেষ রাতে বিতর পড়ে। কেননা শেষ রাতের কিরাত শোনার জন্য ফেরেশতাদের উপস্থিতির সময়। তাই তা অধিক উত্তম।
(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১১৮৭)
তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত, ফরজ নামাজের পাশাপাশি কিছু নফল নামাজেরও অভ্যাস করা। তাতে যতটা সম্ভব দীর্ঘ তিলাওয়াত করা। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।