আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাম্প্রতিক সময়ে ইতালির যাওয়ার জন্য আগ্রহ বেড়েছে সিলেটিদের। ইতালির ভিসা পেলে যেন মনে করছেন সোনার হরিণ পেয়ে গেছেন। তবে টাকার বড় অংক লাগে ইতালি যেতে। এরপরও ভাটা পড়ছে না আগ্রহে।
এদিকে, ইতালির ২০২৪-এর ক্লিক ডে হওয়ার কথা ছিলো ফেব্রুয়ারি মাসে। কিন্তু অনিবার্ড কারণবশতঃ সেটা পিছিয়ে মার্চ মাসে নেওয়া হয়েছে। ফলে ২০২৪ সালের স্পন্সর ভিসার আবেদনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে মার্চ মাসের ১৮ তারিখ। ১৮ মার্চ সম্ভাব্য সময় ৯টায় (যদি সময় পরিবর্তন না হয়) ফাইল ক্লিক করে জমা শুরু হবে।
স্পন্সর ভিসা ছাড়াও ইউরোপের প্রাচীন দেশ ইতালি বিভিন্ন দেশের জন্য মানুষের জন্য দিয়েছে কয়েকটি সুখবর।
৫ স্কলারশিপ :
ইতালির শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ৮০০টির বেশি বৃত্তি প্রদান করে। আবাসন খরচ, টিউশন ফি, মাসে ২ হাজার ৫০০ ডলারসহ নানা সুযোগ–সুবিধা পাওয়া যায় এসব বৃত্তিতে। উল্লেখযোগ্য বৃত্তিগুলো হলো-ইতালিয়ান গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ : ইতালি সরকার দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য বৃত্তি প্রদান করে থাকে। এ বৃত্তিতে মাসে ৯০০ ইউরো, টিউশন ফি ও স্বাস্থ্যবিমা মিলবে।
স্কুয়োলা নর্মাল সুপেরিয়র স্কলারশিপ : স্কুয়োলা নর্মাল সুপেরিয়র স্কলারশিপে চার বছর মেয়াদি ৭৫টি পিএইচডি স্কলারশিপ দেয় দেশটি। এ বৃত্তি দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য। এ স্কলারশিপের আওতায় শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি ও থাকার সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া গবেষণা পরিচালনার জন্য শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত অর্থ পেতে পারেন।
আর্তুরো ফালাচি পিএইচডি ফেলোশিপ : আর্তুরো ফালাচি পিএইচডি ফেলোশিপে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাপক অর্থায়ন করে থাকে। এ ফেলোশিপের মেয়াদ দুই বছর। ক্ষেত্রবিশেষে আরও এক বছর বাড়তে পারে। এ বৃত্তিতে উপবৃত্তি, স্বাস্থ্যবিমা ও অতিরিক্ত নানা সুবিধা পাওয়া যাবে।
বোকোনি ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ : বোকোনি ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপের সুযোগ পান স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা বিদেশি শিক্ষার্থীরা। আবাসন সুবিধা, টিউশন ফি ছাড়াও প্রতিবছর স্নাতক শিক্ষার্থীরা ১২ হাজার ইউরো ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা ১৩ হাজার ইউরো পান।
বোলোগনা ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ : স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী বিদেশি শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ অর্থায়ন করে বোলোগনা ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ। টিউশন ফিসহ বছরে ১১ হাজার ইউরো শিক্ষা অনুদান পাওয়া যায় এই স্কলারশিপের আওতায়।
৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের সুযোগ :
ইমা (EMA), যা ইউরোপিয়ান মাস্টার্স ইন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটিসেশন নামে পরিচিত। এক বছর তথা দুই সেমিস্টার মেয়াদি এই মাস্টার্স প্রোগ্রামটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, প্রথম সেমিস্টার ইতালির ভেনিসে গ্লোবাল ক্যাম্পাস অব হিউম্যান রাইটসের হেডকোয়ার্টারে এবং দ্বিতীয় সেমিস্টার ইউরোপের ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনোটিতে সম্পন্ন করতে হয়। অর্থাৎ এই মাস্টার্স প্রোগ্রামটি একই সঙ্গে একটি আবাসিক ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম। যাঁরা ইউরোপে শিক্ষার্থী হিসেবে যেতে চান এবং পরে ইউরোপে মানবাধিকার বিষয়ে কিংবা নিজ দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাঁদের জন্য এটি একটি ভালো সুযোগ। এ ছাড়াও এখান থেকে গ্র্যাজুয়েট করা শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু ভালো ক্যারিয়ার বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে।
বাংলাদেশিদের জন্য আবেদনের শেষ তারিখ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪। আবেদন ফি: ৫০ ইউরো বা প্রায় ৬০৬০ টাকা। সর্বমোট ৯০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে এই প্রোগ্রামে, যেখানে ইউরোপ ও ইউরোপের বাইরে থেকে শিক্ষার্থী থাকবেন। প্রথম সেমিস্টার (সেপ্টেম্বর-জানুয়ারি) ভেনিসে গ্লোবাল ক্যাম্পাস অব হিউম্যান রাইটস হেডকোয়ার্টার্সে কাটাতে হবে। দ্বিতীয় সেমিস্টার (ফেব্রুয়ারি-জুলাই) ইউরোপের ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো একটিতে কাটাতে হবে। সীমিতসংখ্যক শিক্ষার্থীদের টিউশন ওয়েভার ও স্টাইপেন্ড দেওয়া হবে।
আবেদনের যোগ্যতা: কমপক্ষে ৩ বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি (অথবা সমমানের সাধারণ ডিগ্রি) এবং ন্যূনতম ১৮০ ইসিটিএস (ECTS = European Credit Transfer and Accumulation System)। কমপক্ষে B2 লেভেলের ইংরজি দক্ষতার সার্টিফিকেট থাকতে হবে যা কমপক্ষে আইইএলটিএস ৬, টোয়েফেল ৮০, ক্যামব্রিজ এক্সাম ১৬০-১৭৯ স্কোর নির্দেশ করে; যেকোনো একটি সার্টিফিকেট থাকলেই হবে সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে।
আইন, সমাজবিজ্ঞান, মানবিক (হিউম্যানিটি), মানবাধিকার—এই ধরনের বিষয়ে ভালো একাডেমিক পারদর্শিতা, একাডেমিক কাজের অভিজ্ঞতা, পাবলিকেশন, বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং মোটিভেশন থাকতে হবে।
যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের দিকসমূহ : আবেদনকারীর একাডেমিক সক্ষমতা ও ব্যাকগ্রাউন্ড (বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাপ্ত ফল, ডিগ্রি ও থিসিস বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতা যাচাই করা হবে)। প্রাসঙ্গিক অন্যান্য একাডেমিক কার্যক্রম, কোর্স ও পাবলিকেশন। একাডেমিক জ্ঞানের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বাস্তব অভিজ্ঞতা।
কোর্স ফি ও অন্যান্য খরচ : ২০২৪-২০২৫ একাডেমিক বছরের জন্য টিউশন ফি মোট ৫৬৫০ ইউরো অথবা প্রায় ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, যা দুটি কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে। এই ফি কভার করবে শিক্ষার্থীর দুই সেমিস্টারের সকল কোর্স, শিক্ষা উপকরণ, টিউটরিং, স্পেশালাইজড লাইব্রেরি, ক্লাস ও পরীক্ষার দিনগুলোতে দুপুরের খাবার, ফিল্ড ট্রিপ। তবে শিক্ষার্থীর আবাসন ও আনুষঙ্গিক খরচ, ভ্রমণ, ভিসা ফি—নিজেকেই বহন করতে হবে।
যেসব কাগজপত্র লাগবে : শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, সিভি, দুটি রেফারেন্স লেটার (একটি একাডেমিক, একটি প্রফেশনাল), পাসপোর্টের ফটোকপি, ইংরেজির দক্ষতার প্রমাণ, আবেদন ফি পরিশোধের রসিদ।
কোর্স বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন এই লিংকে: gchumanrights.org/education/regional-programmes/ema/about.html
আবেদনের জন্য ভিজিট করুন এই লিংকে: id.dreamapply.com/login?client=780&legacy=1
অপরদিকে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সাড়ে চার লাখ বিদেশি শ্রমিক নেবে ইতালি। স্পনসর ভিসার মাধ্যমে এই শ্রমিকদেরকে নেওয়া হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে এ শ্রমিক নিবে দেশটি।
বিদেশি শ্রমিকদের নিতে নতুন করে কৃষি এবং পর্যটন খাতের পাশাপাশি জেলে, যাত্রীবাহী বাসচালক, নার্স, বৃদ্ধদের দেখাশোনা এবং ওয়েল্ডিংয়ের জন্যও কোটা নির্ধারণ করেছে দেশটি। এ ছাড়া ভবন নির্মাণ, জাহাজ নির্মাণ, পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য বড় ট্রাকের চালক পদে এবং পর্যটন হোটেল, মেকানিক, টেলিকমিউনিকেশন ও খাদ্য-দ্রব্যাদি উৎপাদন খাতেও শ্রমিক নেবে।
তবে বাংলাদেশের সঙ্গে ইতালির ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত চুক্তি না থাকায় ট্রাক কিংবা বাস চালনায় বাংলাদেশিরা যেতে পারবে না। তবে কোনো বাংলাদেশি যদি এমন দেশে থাকে, যার সঙ্গে ইতালির ড্রাইভিং লাইসেন্সের চুক্তি রয়েছে- সেই দেশ থেকে আবেদন করা সম্ভব হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।