বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : নিরবচ্ছিন্ন ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০২৫ সালের ২০ মে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে স্টারলিংক ইন্টারনেট। স্পেসএক্সের এই সেবা ভবিষ্যতের যেকোনো রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Table of Contents
বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘জুলাই আন্দোলনের’ সময়কার ইন্টারনেট বন্ধের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে স্টারলিংকের এই উদ্বোধন বাংলাদেশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
স্টারলিংক কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?
স্টারলিংক হলো স্পেসএক্সের মালিকানাধীন একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা। এটি পৃথিবীর ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় নিম্ন কক্ষপথে ঘুরতে থাকা হাজার হাজার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কাজ করে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে স্বল্প সময়েই উচ্চগতির ইন্টারনেট প্রদান সম্ভব হয়, কারণ এতে ল্যাটেন্সি মাত্র ২০–৫০ মিলিসেকেন্ড।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭,০০০ স্যাটেলাইট চালু রয়েছে। ভবিষ্যতে এটি ৪২,০০০ স্যাটেলাইট পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ এই সেবা চালু করা প্রথম কয়েকটি দেশের একটি।
কীভাবে কাজ করে স্টারলিংক?
গ্রাহকের অনুরোধ প্রথমে নিকটবর্তী স্যাটেলাইটে পৌঁছায়, সেখান থেকে একাধিক স্যাটেলাইট হয়ে প্রয়োজনীয় সার্ভারে যায় এবং তথ্য পুনরায় ফিরে আসে। ফলে পাহাড়, দ্বীপ, অরণ্যসহ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়।
স্টারলিংকের সুবিধাসমূহ
স্টারলিংক ব্যবহারে গ্রাহকরা যে সুবিধাগুলো পাবেন, তা হলো:
- উপলভ্যতা: যেখানে মোবাইল বা ফাইবার নেই, সেখানেও কাজ করে
- উচ্চ গতি: ৫০–২০০ এমবিপিএস পর্যন্ত ডাউনলোড স্পিড
- কম ল্যাটেন্সি: ২০–৫০ মিলিসেকেন্ড
- সহজ ইনস্টলেশন: নিজেই যন্ত্রপাতি বসাতে পারবেন
- মোবিলিটি: যেকোনো জায়গায় ইন্টারনেট ব্যবহারযোগ্য
স্টারলিংকের প্যাকেজ ও মূল্য
বর্তমানে দুটি প্যাকেজ চালু রয়েছে:
- স্টারলিংক রেসিডেনশিয়াল: ৬,০০০ টাকা/মাস
- স্টারলিংক লাইট: ৪,২০০ টাকা/মাস
উভয় প্যাকেজেই ডেটা সীমাহীন এবং সর্বোচ্চ ৩০০ এমবিপিএস স্পিড পাওয়া যাবে। তবে যন্ত্রপাতির জন্য এককালীন ৪৯,৮০০ টাকা খরচ করতে হবে।
একাধিক ডিভাইসে ব্যবহার
একটি স্টারলিংক ডিভাইস থেকে ২০–৫০ মিটার পর্যন্ত (গ্রামে ৫০–৬০ মিটার) ইন্টারনেট পাওয়া যাবে। বৃহত্তর পরিসরে ব্যবহারের জন্য রিপিটার, মেশ, আউটডোর অ্যাকসেস পয়েন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। ফ্ল্যাট বা বিল্ডিং ভাগাভাগি করে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে কীভাবে স্টারলিংক অর্ডার করবেন?
স্টারলিংক অর্ডার করার ধাপগুলো হলো:
১. Starlink ওয়েবসাইট এ যান
২. আপনার অবস্থান দিয়ে “Order Now” চাপুন
৩. ঠিকানা সিলেক্ট করুন
৪. পছন্দের প্যাকেজ বেছে নিয়ে “Check Out” করুন
৫. ব্যক্তিগত তথ্য ও পেমেন্ট দিয়ে “Place Order” চাপুন
বাংলাদেশি ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমেও পেমেন্ট করা যাবে। অর্ডার কনফার্ম হলে ৩–৪ সপ্তাহের মধ্যে কিট পৌঁছে যাবে।
স্টারলিংক কিটে যা যা থাকবে
- স্যাটেলাইট ডিশ
- ওয়াই-ফাই রাউটার
- মাউন্টিং ট্রাইপড
- প্রয়োজনীয় ক্যাবল
ইনস্টলেশন প্রক্রিয়া খুবই সহজ। খোলা আকাশের দিকে ডিশ মুখ করে রাউটার সংযোগ দিলেই ইন্টারনেট চালু হয়ে যাবে। কোনো টেকনিক্যাল জ্ঞান ছাড়াই ব্যবহার উপযোগী।
বাংলাদেশে স্টারলিংকের আগমন শুধু প্রযুক্তির অগ্রগতিই নয়, বরং একটি ডিজিটাল স্বাধীনতার প্রতীক। শহর থেকে শুরু করে দুর্গম অঞ্চল পর্যন্ত—সব জায়গায় একই মানের ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে এটি দেশের ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।