জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকার সাভারে দিনে দুপুরে একটি কারখানায় প্রবেশ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ কয়েকশ’ সন্ত্রাসী। কারখানা চত্বরে প্রবেশ করে তারা নিরাপত্তারক্ষী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বের করে দিয়ে কারখানাটির অবৈধভাবে দখলে নেয়। সাভার পৌর এলাকার ভাগলপুরে গত বছরের ২৬ মে (রবিবার) ‘বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড’ কারখানায় এমন ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার প্রত্যক্ষ মদদে ওই দখলের ঘটনাটি ঘটে। আদালতের দুটি নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ‘বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি দখলে নেয় তারা। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু কারখানার নিয়ন্ত্রণ এখনো তাদের লোকজনের হাতেই আছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সেদিন পুলিশের সামনেই সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর এবং লুটপাট চালায় দখলকারীরা। এ সময় তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদেরও মারধর করা হয়। আর দুর্ধর্ষ এই ঘটনাটি ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগ নেতা সি পার্ল গ্রুপের মালিক আমিনুল হক শামীম ঘটিয়েছেন। এসময় তাকে সহায়তা করেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজম ও সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
ওই ঘটনার পরে বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেডের তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক অভিজিৎ রায় ও বিশ্বজিৎ রায় বাদী হয়ে আদালতে দুইটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা দুটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পিবিআই দুটি মামলাই তদন্ত করছে।
অভিজিৎ কুমার রায় অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের ২৬ মে সকালে সি পার্ল গ্রুপের কর্মকর্তারা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ কয়েকশ’ সন্ত্রাসী নিয়ে জোর করে কারখানাটি অবৈধভাবে দখলে নেয়।
ঘটনার বর্ননা দিয়ে তিনি জানান, ২০০৭ সালে বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড মোটা অঙ্কের দায় মাথায় নিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। পরে একটি চুক্তির মাধ্যমে কোম্পানির ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ স্পনসর শেয়ার কিনে এজিএমের মাধ্যমে কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব নেয় তার পরিবার। পরবর্তী সময়ে জমিজমা সংক্রান্ত কিছু জটিলতা তৈরি হয়। তবে ২০১৯ সালে কারখানাটি সচলের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করা হয়।
অভিজিৎ কুমারের অভিযোগ, ২০১৬ সালে আগের মালিকপক্ষ চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে কোম্পানির মালিকানা দাবি করে আদালতে একটি মামলা করে। তবে উচ্চ আদালত তার (অভিজিৎ) বাবা বিশ্বজিৎ কুমারকেই কারখানা পরিচালনার নির্দেশ দেন। কিন্তু আগের মালিকপক্ষ বিক্রীত শেয়ার আবার সি পার্ল গ্রুপের মালিকপক্ষের কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর থেকেই সি পার্ল গ্রুপের লোকজন কয়েক দফায় কারখানাটি দখলের চেষ্টা করেন। অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে আদালত থেকে এ বিষয়ে ১৪৫ ধারার আদেশও আনা হয়। কিন্তু তারা আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে অবৈধভাবে কারখানাটি দখল করেন।
ভুক্তভোগী অভিজিৎ রায়ের ভাইয়ের ছেলে প্রমিত রায় জানান, তাদের পরিবার এই ঘটনার পরে প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। তার বাবা এবং চাচা এই কারাখানায় বহু টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সাবেক আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রভাবে সব হারিয়েছেন তারা।
ভুক্তভোগী পরিবার ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ মে কারখানাটির মালিকানার জটিলতা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজমের কার্যালয়ে একটি মিটিং হয়েছিল। সেখানে সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সেই বৈঠক কোনো সমাধান হয়নি। তার কিছুদিন পরেই এই দখলের ঘটনা ঘটে।
দখলের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিজিৎ রায় বাদী হয়ে একই বছরের ২৮ মে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন।
এছাড়াও, একই বছরের ৩০ মে আরও একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন অভিজিৎ রায়। এসব মামলা এখন পিবিআই তদন্ত করছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মোঃ কুদরত-ই-খুদা বলেন, মামলা দুটির তদন্ত কাজ চলছে। দুজন তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলা দুটি নিয়ে তদন্ত কাজ করছেন। অনেকগুলো আসামি রয়েছে সবার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঘটনার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
কারখানা দখলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা ও সি পার্ল গ্রুপের মালিক আমিনুল হক শামীম ও সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজমের অফিসে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে ফোন করলেও তাদের নাম্বারগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। মেসেজ পাঠালেও কোনো উত্তর মেলেনি।
এদিকে, কারখানায় এখন যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করে বাংলা আউটলুক। কিন্তু এ বিষয়ে পরিচালকদের কেউ মুঠোফোনে কথা বলতে রাজি হননি। দেখা করতে সরেজমিন কারখানায় গেলেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কারখানার নিরাপত্তারক্ষীরা বলেন, ‘স্যাররা নেই, তাদের পাওয়া যাবে না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগস্টে পট পরিবর্তনের পর অনান্য আওয়ামী লীগের নেতাদের মতো আত্মগোপনে চলে গেছেন তারাও। কিন্তু কারখানার নিয়ন্ত্রণ আছে তাদের হাতেই। এখনো তাদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না অনেক ভুক্তভোগী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।