আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এক মার্কিন নাগরিক ৪২ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো তার মা এবং পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। তবে তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা নন। চিলির নাগরিক। জন্মের সময় চুরি হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। পরে আমেরিকান এক পরিবারের আশ্রয়ে বড় হয়েছেন। খবর এপি।
১৯৭০-৮০’র দশকে স্বৈরশাসক অগাস্টো পিনোচেটের শাসনামলে চিলির হাজার হাজার পরিবার তাদের সন্তান হারিয়েছিল। তাদের অধিকাংশই জীবনে আর কখনো নিজের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। নিজের পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া এসব মানুষকে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এখন বেশকিছু সংগঠন কাজ করছে। এমনই একটি সংগঠন নস বুসকামোসের প্রচেষ্টায় নিজের পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পেরেছেন জিমি লিপার্ট থাইডেন।
চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে থাইডেনের জন্মের সময় হাসপাতালের কর্মীরা তাকে চুরি করেছিল। জন্মের পরপরই থাইডেনের মা মারিয়া অ্যাঞ্জেলিকা গঞ্জালেজের কাছ থেকে তাকে তুলে নেওয়া হয়। সময়ের আগেই জন্ম হওয়া থাইডেনকে ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে বলে প্রথমে জানানো হয়েছিল। পরে তারা শিশুটিকে ফেরত চাইলে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই শিশু মারা গেছে। তার সৎকারও করা হয়ে গেছে।
ওই ঘটনার ৪২ বছর পর গত রোববার চিলির ভালদিভিয়ার বাড়িতে মা-ছেলের দেখা হয়। থাইডেন এ সময় স্প্যানিশ ভাষায় ‘মা, আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলে মাকে জড়িয়ে ধরেন। পরে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এতদিন পরে মাকে দেখতে পেয়ে উত্তেজনায় যেন আমার দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
নস বুসকামোস মূলত বিভিন্ন দেশে থাকা চিলিতে জন্মগ্রহণকারী দত্তক শিশুদের ব্যাপারে কাজ করে থাকে। সংস্থাটি গত এপ্রিল থেকে থাইডেনের ব্যাপারে কাজ শুরু করে। তারা ওই হাসপাতালটির ব্যাপারে এবং থাইডেনের সঙ্গে যা হয়েছিল, সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়।
থাইডেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া রাজ্যের অ্যাশবার্নে একজন অপরাধী প্রতিরক্ষা আইনজীবী হিসাবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে আমি জেনেছিলাম, আমার কোনো জীবিত আত্মীয়-স্বজন নেই। তবে গত কয়েক মাসে আমি জানতে পেরেছি, আমার একজন মা আছে এবং আমার চার ভাই ও এক বোন আছে।
নস বুসকামোসের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক কনস্টানজা দেল রিও বলেন, মূলত ভূয়া দত্তকের মাধ্যমে থাইডেনকে গ্রহণ করেছিল তার নতুন পরিবার। এভাবে হাজারো দরিদ্র পরিবার থেকে তাদের সন্তানদের চুরি করা হয়েছিল, যা ওই দরিদ্র পরিবারগুলো জানতো না। আর সেটা জানলেও তাদের জানা ছিল না, কিভাবে নিজেদের রক্ষা করতে হয়।
দেল রিও জানান, গত নয় বছরে নস বুসকামোস দত্তক গ্রহণকারী এবং তাদের মূল পরিবারের মধ্যে ৪৫০টিরও বেশি পুনর্মিলনের আয়োজন করেছে। চিলির হিজোস ওয়াই মাদ্রেস দেল সিলেনসিও এবং যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিং রুটসও এ ধরনের কাজে এগিয়ে এসেছে।
নস বুসকামোস জানায়, প্রথমে তারা থাইডেনের ডিএনএ পরীক্ষা নিশ্চিত হয় যে সে ১০০ শতাংশ চিলির নাগরিক। পরে তার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে তার ডিএনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর আরও ভালোভাবে দুই পরিবারের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে তার পুনর্মিলনের আয়োজন করে। পরে থাইডেন তার স্ত্রী জোহানা এবং তাদের দুই কন্যা, আট বছর বয়সী এবা জয় এবং পাঁচ বছরের বেটি গ্রেসকে নিয়ে চিলিতে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। থাইডেনকে তখন তার বয়স হিসেবে ৪২টি রঙিন বেলুন দিয়ে স্বাগত জানানো হয়।
এতদিন পর সন্তানকে কাছে পেয়ে থাইডেনের মা বলেন, ছেলে, আমি তোমার জন্য যে কত কেঁদেছি তা তুমি জান না। আমি কত রাত জেগে প্রার্থনা করেছি, ঈশ্বর! আমার ছেলের সঙ্গে কী হয়েছে, তা জানতে আমাকে যথেষ্ট দীর্ঘজীবী করুন। ঈশ্বর আমার সেই প্রার্থনা কবুল করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।