হাসান ভুঁইয়া, সাভার (ঢাকা) : হারানো মোবাইল উদ্ধারের জন্য গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর আশুলিয়ায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন হাসান আলী (২৪) নামের এক যুবক। তার জিডির সূত্রে জানা যায়, ওইদিন দুপুর ১ টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকা থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইলটি হারিয়ে যায়।
গত ২৫ মার্চ আশুলিয়ায় পলাশবাড়ীর বাতানটেক এলাকার এক মুধি দোকানীর থেকে তার মোবাইলটি উদ্ধার করে পুলিশ ইনভেস্টিকেশন ব্যুরো (পিবিআই)।
তবে পিবিআই যার কাছ থেকে মোবাইলটি উদ্ধার করেছে। সে জানায়, মোবাইলটি সে অন্য একজনের কাছ থেকে ক্রয় করেছে। পরে সেই ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করে জুমবাংলা।
জিডি সূত্রে জানা যায়, নওগা জেলার ধামইরহাট থানার ইসবপুর এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হাসান আলী, বর্তমানে আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকায় থাকেন। হাসান আলী গত ৩০ ডিসেম্বর দুপুরে আশুলিয়ার বাইপাইলে এসে নামলে পকেটে হাত দিয়ে দেখেন তার ব্যবহৃত (ভিভো ভি-২০৪৩ মডেল) মোবাইলটি পকেটে নেই। তার মোবাইল ফোনটি চুরি হয়ে গেছে। পরে তিনি থানায় মোবাইল হারানো বিষয়ে আশুলিয়া থানায় একটি জিডি করেন।
গত ২৫ মার্চ আশুলিয়ায় পলাশবাড়ীর বাতানটেক এলাকা থেকে চুরি যাওয়া মোবাইল উদ্ধারের পর জুমবাংলার অনুসন্ধানে উঠে আসে চোরাই মোবাইল সিন্ডিকেটের এক ভয়ানক নেটওর্য়াকের তথ্য। শুরু হয় অনুসন্ধান, যার কাছ থেকে মোবাইল উদ্ধার করে পিবিআই তার মাধ্যমে জানা যায়, মোবাইলটি ফজলুর রহমান নামের এক মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকান থেকে ক্রয় করেছি তিনি। পরে ফজলুর রহমানকে ফোন দিলে তিনি বলেন আমি সুমন নামক একজনের কাছ থেকে ক্রয় করি। ফজলুর রহমানের তথ্য সূত্রে আমরা সুমনের সাথে কথা বলি। সুমন পলাশবাড়ী এলাকার একটি পোশাক কারখানায় ব্যবসা করে। তার মুঠোফোনে কথা বলে জানা যায়। তিনি বাইপাইল এলাকার মুরগি বিক্রেতা সাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে মোবাইলটি ক্রয় করেছেন। শাহাবুদ্দিন খানের নাম আসতে আরও ভয়ানক তথ্য আসে জুমবাংলার হাতে।
নামের শেষে খাঁন হলেও পেশায় তিনি একজন মুরগি বিক্রেতা, পদ আছে তাতী লীগেও। বলছি ঢাকা জেলা উত্তর তাতী লীগের সহ-সভাপতি শাহাবুদ্দিন খানের কথা। তিনি মূলত মুরগি ব্যবসার আড়ালে মোবাইল চোর সিন্ডিকেট মূল হোতা।
দিনরাতের পরিশ্রমের টাকা কেনা অনেক শখের মোবাইল চুরি হয়ে যাওয়াটা যে কত কস্টের তা হয়তো বলে বুঝানো যাবে না। মানুষের সেই শখের মোবাইল চুরি করে তা নাম মাত্র দামে বিক্রি করে চোর চক্র৷ আর এই চক্রের থেকে মোবাইল কিনে নেন এই শাহাবুদ্দিন। পরে তার আইএমইআই পরিবর্তন করে তা অনত্র বিক্রি করেন তিনি। অনেক মোবাইল আইএমইআই পরিবর্তন ছাড়াও বিক্রি করেন।
তিনি যে চোরাই মোবাইল কম দামে ক্রয় করে বেশি দামে বিক্রি করেন, তা অবশ্য আশুলিয়ার বাইপাইল মোড় এলাকায় বেশিরভাগ লোক জানেন। তিনি রাজনীতি করায় কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না। সাম্প্রতি পিবিআই কর্তৃক চোরাই মোবাইল উদ্ধার হওয়ার পর এ তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া মোবাইল চোরদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেও এমন তথ্য পাওয়া যায় বলে জানা যায়।
শাহাবুদ্দিন খান শুধু চোরাই মোবাইল বিক্রিই করেন না, তিনি নিজেও ব্যবহার করেন বলে জানা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানায় শাহাবুদ্দিনে ব্যবহৃত মোবাইলেও নাই আইএমইআই নাম্বার। সেটিও চুরাই মোবাইল।
অন্যদিকে শাহাবুদ্দিন শুধু চোরাই মোবাইল বিক্রি নয়। তিনি সড়কের জায়গায় দোকান বসিয়ে তা ভাড়া দিয়ে আসছেন। যার একটি দোকানে তিনি বর্তমানে মুরগির ব্যবসা করেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে শাহাবুদ্দিন খান বলেন, একটা মোবাইলের ব্যাপারে আপনার কাছে কে কি বললো তা নিয়ে আপনি আমাকে প্রশ্ন করছেন। আপনি আমাকে চিনেন? আপনি আমাকে দেখেছেন?
চুরি হওয়া মোবাইলটা আপনার মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো উত্তর দিতে পানেনি।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা উত্তর তাতীলীগ সভাপতি হাজী মোবারক হোসেন খোকন জুমবাংলাকে বলেন, আমি এ ধরনের কোনো ঘটনা জানতাম না। আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম। সে যদি অপরাধ করে থাকে। তবে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।