জুমবাংলা ডেস্ক : সেবা খাতের ২০ হাজার ডলার সমপরিমাণ পর্যন্ত আয় দেশে আনতে ঘোষণা লাগবে না। গত ফেব্রুয়ারিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এমন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা যায়।
কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, কিছু ব্যাংক ইনওয়ার্ড রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় তথ্য ও ফরম সি-এ ঘোষণার জন্য গ্রাহকদের হয়রানি করছে। ফলে
এর প্রেক্ষিতে গত বুধবার ব্যাংকার্স সভায় ব্যাংকগুলোকে গ্রাহক হয়রানি বন্ধে সর্তক করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
সভা সূত্রে জানা গেছে, বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা কোনো ঘোষণা ছাড়াই যে কোনো পরিমাণের অর্থ দেশে পাঠাতে পারেন। তবে বাংলাদেশে বসে যারা বিদেশে কাজ করেন, তাদের অর্থ আনতে ঘোষণার প্রয়োজন হয়।
তাদেরকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইনে ‘সি-ফরম’-এ আয় কোথা থেকে আসছে, পরিমাণ, কাজের ধরনসহ অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণসহ তথ্য দিতে হয়। এক্ষেত্রে ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত ঘোষণা লাগবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে।
এরপরও সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রাহকরা এই বিষয়ে বিড়ম্বনা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ হাজার ডলারে কম প্রত্যাবাসিত ইনওয়ার্ড রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে কিছু ব্যাংক কর্তৃক অপ্রয়োজনীয় তথ্য ও ফরম সি-এ ঘোষণা গ্রহণের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ইনওয়ার্ড রেমিট্যান্সের ওপর প্রযোজ্য কর কর্তনের লক্ষ্যে সঠিক সার্ভিস কোড নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় দলিলাদি সংগ্রহের আবশ্যকতা থাকলেও মার্কিন ডলার ২০ হাজারের কম প্রত্যাবাসিত ইনওয়ার্ড রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ফরম সি-এ ঘোষণা কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু ব্যাংক এসব গ্রহণ করে গ্রাহক হয়রানি করছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ইনওয়ার্ড রেমিট্যান্সের অর্থ দ্রুত গ্রাহকের অনুকূলে বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন আবশ্যিকভাবে পরিপালন করার জন্য নির্দেশ দেন গর্ভনর আব্দুর রউফ তালুকদার।
এক সময় সফটওয়্যার, ওয়েব ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিংয়ের সেবা রপ্তানির আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনতে নানা সমস্যায় পড়তেন ফ্রিল্যান্সাররা। যে কারণে এ ধরনের আয়ের বেশিরভাগই আনতে হতো হুন্ডি করে। তাই এসব আয় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আনার জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন নীতি সহায়তা দিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে এক নির্দেশনার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফ্রিল্যান্সারদের জন্যও রপ্তানি রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) হিসাব খোলার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এমএফএসের মাধ্যমে আয় দেশে আনা কিংবা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী শাখা নেই এমন এলাকার ফ্রিল্যান্সারদের জন্য নিকটতম এডি শাখা, সেন্ট্রাল ট্রেড প্রসেসিং সেন্টার কিংবা প্রধান কার্যালয়ের সহায়তায় অন্য উপায়ে ‘ইআরকিউ’ হিসাব খুলতে বলা হয়। একই সঙ্গে এসব হিসাবের বিপরীতে আন্তর্জাতিক ডেবিট, ক্রেডিট বা প্রিপেইড কার্ড ইস্যুরও নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আমদানি-রপ্তানির ভুল তথ্য দিচ্ছে অনেক ব্যাংক। তাই সঠিক তথ্য দেয়ার জন্যও ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়।
জানা যায়, প্রতিটি শাখা থেকে এলসি খোলার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনলাইন ইমপোর্ট মনিটরিং সিস্টেমে (ওআইএমএস) তথ্য আপলোড করতে হয়। এ ড্যাশ বোর্ডে গত জুন পর্যন্ত আমদানি বিল বকেয়া দেখাচ্ছে ৪ হাজার ৯ কোটি ডলার।
আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে আলাদাভাবে তথ্য সংগ্রহ করে বকেয়ার পরিমাণ পেয়েছে ২ হাজার ৩৭৩ কোটি ডলার।
এর মানে, ব্যাংকে সংরক্ষিত তথ্যের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমদানি বকেয়ার তথ্যে ১ হাজার ৬৩৬ কোটি ডলারের পার্থক্য দেখা দিয়েছে, টাকার অঙ্কে যা ১ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকা।
দুই তথ্যে এত বড় পার্থক্যের কারণ জানতে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে যথাসময়ে ও সঠিকভাবে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন প্রতিটি এলসির তথ্য আলাদাভাবে দেওয়ার পাশাপাশি একটি ব্যাংকের ওই দিনের সব এলসির তথ্য একত্রে দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
তবে অনেক ব্যাংক তা মানছে না। আগামী দুই মাসের মধ্যে এ নির্দেশনা পরিপালন করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, এত পার্থক্যের কারণ ব্যাংকগুলোই ভালো বলতে পারবে। তবে শাখা থেকে ভুল রিপোর্টিংয়ের কারণে এমন হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।