জুমবাংলা ডেস্ক : চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের চার নেতাকে আদালতে হাজির করার সময় উত্তপ্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
রোববার (২৭ জুলাই) বিকেলে ঢাকা মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত আইনজীবীরা তাদের উদ্দেশে তীব্র ক্ষোভ ও দুয়োধ্বনি প্রকাশ করেন।
বিকেল ৪টার দিকে পুলিশের একটি গাড়িতে করে সিএমএম আদালতের ফটকে আনা হয় কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদসহ আরও তিনজনকে। গাড়ি থেকে নামার পরই রাজ্জাক মুখ ঢেকে রাখার চেষ্টা করেন। তার পেছনে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন (মুন্না), সদস্য সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। তাদের সবাইকেই পুলিশ সিঁড়ি বেয়ে কোর্টরুমে নিয়ে যায়।
তখন ২০–২৫ জন আইনজীবী ও উপস্থিত সাধারণ মানুষ তাদের দেখামাত্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন। কেউ কেউ তাদের চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে তীব্র কটূক্তি করেন, আবার কেউ মারধরের চেষ্টাও করেন। এক আইনজীবী সমস্বরে চিৎকার করে বলেন, ‘তোরা জুলাই চেতনা বিক্রি করে চাঁদাবাজি করেছিস।’
আদালত ভবনের বিভিন্ন তলায় যখন পুলিশ তাদের নিয়ে যাচ্ছিল, তখনও সেই ক্ষোভ থামেনি। অনেক আইনজীবী এজলাস পর্যন্ত গিয়ে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলেন। রাজ্জাকসহ অন্যরা বারবার মুখ ঢেকে রাখার চেষ্টা করলেও আইনজীবীরা কটাক্ষ করে বলেন, ‘মুখ ঢেকে রাখিস কেন? চেহারা দেখাতে পারিস না?’
আদালতে গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান জানান, রাজ্জাকসহ অন্যরা গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে ছাত্রনেতা পরিচয়ে অভিজাত এলাকা গুলশান, বারিধারায় গিয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন।
গত ১৭ জুলাই তারা সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে তার স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং স্বর্ণালঙ্কারও চান। পরে জাফর বাধ্য হয়ে ১০ লাখ টাকা তাদের হাতে তুলে দেন। এর কিছুদিন পর তারা আবার এসে বাকি ৪০ লাখ টাকা দাবি করেন। এ সময় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানিয়েছে, চাঁদাবাজির সময়কার ভিডিও ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছে এবং মূল ‘গডফাদার’ খুঁজে বের করতে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পিপি মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন বলেন, ‘এটি একটি সাধারণ চাঁদাবাজির মামলা নয়। অভিযুক্তরা ছাত্র–জনতার আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে সঙ্ঘবদ্ধভাবে টার্গেট করে চাঁদাবাজি করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজ্জাকরা শুধু টাকা নয়, সামাজিক সম্মানকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে হুমকি-ধামকি দিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের নেতাকেও দোসর আখ্যা দিয়ে ভয় দেখিয়েছে।’ তিনি দাবি করেন, তদন্ত করলে আরও অনেক চাঁদাবাজির ঘটনা উদ্ঘাটিত হবে এবং এটি একটি বৃহৎ চক্রের অংশ।
আসামিদের পক্ষে আইনজীবী আখতার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, রাজ্জাক ও অন্যরা নির্দোষ। এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা এবং তাদের ফাঁসানো হয়েছে।
প্রায় ৪৫ মিনিটের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক রাজ্জাকসহ চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে পুলিশের হেফাজতে নেওয়ার আদেশ দেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।