জুমবাংলা ডেস্ক : শুধু ট্রাফিক নয়, রাস্তাঘাট পরিষ্কার, ড্রেনের আবর্জনা সরানো, দেওয়ালের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা থেকে বাজার তদারকি করার মতো কাজে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর সমস্ত এলাকায় তাদের বিচরণ ও কাজের পরিধি বাড়ছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনাল,বাজার, রাজপথ ও মহল্লা ঘুরে তাদের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে গেছে। এদিন সকালে কাওরানবাজারে রাস্তাঘাট পরিষ্কার ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পর শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন জায়গায় বাজার তদারকিতে দেখা গেছে। এ তাদের কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করার সময় তিনি শিক্ষার্থীদের এ সাধুবাদ জানান। এ বিষয়ে ভোক্তার ডিজি বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে যেন কেউ চাঁদাবাজিসহ হিডেন চার্জ নিতে না পারে, সেই ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। এর আগে শান্তিনগর বাজার তদারকির সময় ভোক্তার ডিজি বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। বাজার তদারকিতে দেখা যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিবিধ ব্যয় হ্রাস পেয়েছে এবং পণ্যের মজুত স্বাভাবিক রয়েছে।
দুপুরে মিরপুর গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার আবর্জনা সরানোর পাশাপাশি লেখায় নোংরা করে রাখা দেয়ালগুলোও তারা পরিষ্কার করছেন। মিরপুর সাড়ে ১১ এর সিটি ক্লাব মাঠের পাশের স্বপ্ন শপিং মলের পাশে সড়কে ট্রাফিকের কাজ করতে দেখা গেছে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রোজা আফরিন টুইটিকে। সকাল থেকেই সে হাত উঠিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা করছে। দুপুরে সামান্য একটু বিস্কুট আর পানি খেয়েই টানা ১০ ঘণ্টা এ কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হয়। বাসার কাউকে না বলে নিজ উদ্যোগে বের হয়ে পড়ে মহল্লার সড়কে। এ বিষয়ে কিছুটা শঙ্কা মিশ্রিত গর্ব নিয়ে তার বাবা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহবুবুল হাসান ফয়সাল বলেন, কয়েকদিন ধরেই দেখছি ছেলেমেয়েরা ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় রাস্তার যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে। আর কিছু ছেলেমেয়ে পিলারগুলো পরিষ্কার করে ছবি এঁকে শৈল্পিক এবং দৃষ্টিনন্দন করে তুলছে। আজ সকালে হেঁটে অফিসে আসার পথেও তাই দেখলাম।
দুপুরের পর আমার স্ত্রী একটা ভিডিও পাঠিয়েছে, বেশ কিছুক্ষণ না দেখে ফেলে রেখেছিলাম। ভিডিওটা খুলে ভেবেছিলাম- অন্য সব ভিডিওর মতো এটা আরেকটা ভিডিও। হঠাৎ খেয়াল করে দেখি, আমার ছোট্ট মেয়েটা রোজা গিয়ে নাম লিখিয়ে ‘ট্রাফিক পুলিশ’ হয়েছে! বাসা থেকে অফিসে আসবার সময় সে আমাকে দরজা খুলে দিয়েছে! আমাদের ছেলেমেয়েরা যদি এভাবে পথে পথে দায়িত্ব পালন করে আর কোনো অধিকারের জন্য পথে নামে, আমরা কী তাহলে ঘরে বসে থাকতে পারবো! দেশ বদলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখা এই ছেলেমেয়েদের মতামতকেই মূল্য দেওয়া হোক! আগে শুদ্ধ হোক রাজনীতি, শুদ্ধির জন্য ততদিন থাকবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যতদিন প্রয়োজন, তারপর পরবর্তী নির্বাচন!
একই দৃশ্য দেখা গেছে মহাখালী, মগবাজার বাড্ডা, নদ্দা, বসুন্ধরা, মিরপুর, উত্তরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সংসদ ভবন এলাকায়। শিক্ষার্থীরা সড়ক ও বিভিন্ন স্থাপনা পরিষ্কার করছে। মাস্ক-গ্লাভস পরে ঝাড়ু নিয়ে তারা রাস্তায় নেমেছে। কেউ কুড়াচ্ছে, কেউ আবার সেগুলো সংগ্রহ করে আবর্জনা গাড়িতে ফেলছে। শিক্ষার্থীরা জানান, দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সড়ক পরিষ্কার ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় উদ্যোগী হয়ে সমন্বয় করে কাজ করছেন। তারা চাচ্ছেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ওপর যেন বাড়তি চাপ না পড়ে। সুশৃঙ্খল সড়ক তৈরিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজও করছেন তারা।
মহাখালী টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা এখানকার মালিক শ্রমিকদের কথা বলে তাদের সহযোগিতা পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। এখনকার পরিবহন নেতা ছাদিকুর রহমান হিরো বলেন, শিক্ষাথীরা রাজপথে যানবাহনের শৃঙ্খলায় পরিবহন মালিকরা যেভাবে স্বতস্ফুর্তি সাড়া দিয়েছে তাতে তারা খুবই খুশি। কৃতজ্ঞতা জানাতেই তারা শুক্রবার টার্মিনালে ্এসে সবার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এমনকি টার্মিনালে যাতে কোনো বহিরাগত চাঁদাবাজ মাস্তান না প্রবেশ করতে পারে- সেজন্যও তারা সতর্ক থাকবেন বলে জানিয়েছেন। যে কোনো প্রয়োজনে তাদের সহযোগিতা নেওয়ার অনুরোধ করে গেছেন।
বিকেলেও মিরপুরের ১০ নম্বরে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা রাস্তার ডিভাইডার, মেট্রো রেলের পিলার ও বিভিন্ন ভবনের দেওয়ালে লেখা স্লোগান ও মন্তব্য মুছে ফেলছেন। তা ছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বও পালন করছেন। এ ছাড়া গণভবনের সামনে, মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ ও বাসস্ট্যান্ড মোড়, সায়েন্স ল্যাব থেকে কল্যাণপুর পর্যন্ত পুরো মিরপুর রোড, ধানমন্ডি ২৭ ও সাতমসজিদ রোড, আগারগাঁও থেকে খামারবাড়ি পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি রাস্তায় শিক্ষার্থীদের এসব কাজ করতে দেখা গেছে।
একই ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থীকে টিএসসি, লাইব্রেরি চত্বর, কলাভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ভবন, অপরাজেয় বাংলার আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে দেখা গেছে।
আবার উত্তরা বাড্ডা এলাকায় পুড়ে যাওযা থানা পরিষ্কারের দায়িত্ব করছেন তারা। এ ছাড়া ব্যক্তিগত যান, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, রিক্সা, মোটরসাইকেল চলাচলেও তারা সহযোগিতা করছে। বিকালে মগবাজারের সিগন্যালেও শিক্ষার্থীদের পালা করে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। কয়েক জায়গায় তাদের সঙ্গে আনসার সদস্যও রয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সদস্যদেরও বিভিন্ন সিগন্যালে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। ঢাকার বাইরেও দেখা গেছে একই দৃশ্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।