বিনোদন ডেস্ক : তিনি একদিকে প্রিয়ার বিরহে কাতর হয়ে গেয়েছেন ‘পাখি রে তুই দূরে থাকলে’। আবার বিরহের হতাশা কাটাতে কণ্ঠে নিয়েছেন ‘পৃথীবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’। বহুমাত্রিক গল্প-ছন্দ আর সুরে দীর্ঘ ৪০ বছর তিনি গান করেছেন। গানে গানে শ্রোতাদের মাতিয়েছেন।
তার অনেক গান প্রেমে মজিয়েছে, প্রেমে ব্যর্থতায় ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি যুগিয়েছে। সেই প্রিয় শিল্পী সুবীর নন্দী আর নেই। চলে গেলেন তিনি জীবনের মায়া কাটিয়ে। কিন্তু সত্যি কী গেলেন? এমন মানুষের কী যাওয়া আছে! সুবীর নন্দী চিরদিন তার ভক্ত-অনুরাগীদের অন্তরে থেকে যাবেন তার গানের মাঝে।
এক জীবনে আড়াই হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন সুবীর নন্দী। সেগুলো যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছে তেমনি জয় করেছে সময়কেও। তাদের মধ্যে কিছু গান তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য। যেসব গানে চিরকাল চিরসবুজ হয়ে থাকবেন প্রিয় সুবীর নন্দী।
সুবীর নন্দী ক্যারিয়ারের শেষ দিকে গেয়েছেন ‘ও আমার উড়াল পঙ্খী রে যা যা তুই উড়াল দিয়া যা’ গানটি। হুমায়ূন আহমেদের ‘চন্দ্রকথা’ চলচ্চিত্রের জন্য গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি। এর গীতিকারও ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ।
তবে সুবীর নন্দী তুমুল জনপ্রিয়তা পান হুমায়ূন আহমেদরই ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে। সেখানে মাহফুজ আহমেদের ঠোঁটে ‘একটা ছিলো সোনার কন্যা মেঘে বরণ কেশ/ ভাটি অঞ্চলে ছিলো সেই কন্যার দেশ’- গানটি সারাবাংলার আপামর মানুষের মুখে মুখে পৌঁছে গিয়েছিলো।
১৯৮৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মহানায়ক’ ছবিতে ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’ গানে কণ্ঠ দেন সুবীর নন্দী। বুলবুল আহমেদের ঠোঁটে সেই গান আজ কালজয়ী।
তবে ‘মহানায়ক’ ছবির সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় গান ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’। রুপালি পর্দায় এই গানটি দর্শকের সামনে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বুলবুল আহমেদ। আর এতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন বাংলা গানের কিংবদন্তি সুবীর নন্দী। আজ আরও একবার শুনে দেখতে পারেন গানটি। বেশ কয়েকবার শোনার আগ্রহ জন্মাবেই।
১৯৭৯ সালে মুক্তি পায় ‘দিন যায় কথা থাকে’ সিনেমা। সেই ছবিতে ট্রাক চালক চরিত্রে চিত্রনায়ক ফারুক পর্দায় গেয়েছেন ‘দিন যায় কথা থাকে’ শিরোনামের একটি গান। ছবিটি মুক্তির পরপরই তুমুল জনপ্রিয়তা পায় এই গানটি। সদ্য প্রয়াত সুবীর নন্দীই এই গানের গায়ক।
১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘লাল গোলাপ’। সিবি জামান পরিচালিত ও জসীম ও অঞ্জু জুটির সুপারহিট এই ছবির জনপ্রিয় একটি গান ‘পাখি রে তুই দূরে থাকলে কিছুই আমার ভালো লাগে না’। এই গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সুবীর নন্দী। এই গান বাঁচিয়ে রাখবে নন্দিত এই শিল্পীকে।
১৯৮৬ সালে ‘উছিলা’ সিনেমাটি মুক্তি পায়। এই ছবিতে ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো’
গানটি সুবীর নন্দীকে সারাদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়। জাফর ইকবাল ও দিতি জুটির ছবিতে ব্যবহার হওয়া এই গান এখনো সেরা রোমান্টিক গানগুলোর একটি হিসেবে গণ্য হয়।
গানটি লিখেছেন নন্দিত গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান। এর সুর সংগীত করেছেন শেখ সাদী খান। দেশীয় গানে বরেণ্য দুই নাম। তাদের মতো কারিগরেরা যখন এক হন তখন তৈরি হয় অনন্য সৃষ্ঠি। তাই হলো। তারা তৈরি করলেন ‘কেন ভালোবাসা হারিয়ে যায় / দুঃখ হারায় না’ শিরোনামের গান। আর সেই গানে কণ্ঠ দিয়ে নিজেকে সবার ভালোবাসার শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন সুবীর নন্দী।
জহির রায়হানের উপন্যাস অবলম্বনে অভিনেত্রী সুচন্দা নির্মাণ করেন হাজার বছর ধরে সিনেমাটি। রিয়াজ ও শশী জুটির এই ছবিতে খুবই জনপ্রিয় একটি গান ‘আশা ছিলো মনে মনে/ প্রেম করিবো তোমার সনে’। রিয়াজ অভিনয় করা এই গানের কণ্ঠ দিয়েছেন সুবীর নন্দী।
১৯৮৬ সালের ছবি ‘শুভদা’। বুলবুল আহমেদের পরিচালনার ছবি। বেশ কয়টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় এই ছবি। তারমধ্যে ‘তুমি এমনই জাল পেতেছো সংসারে’ গানটির জন্য দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান সুবীর নন্দী।
এছাড়াও সুবীর নন্দীর কণ্ঠে বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম, বৃষ্টির কাছ থেকে, হাবলঙ্গের বাজারে, পাহাড়ের কান্না, তুমি যে আমার কবিতা, নেশার লাটিম ঝিম ধরেছে, এই পারে একজনা, তোমারই পরশে জীবন, কেঁদো না তুমি কেঁদো না, বন্ধু তোর বরাত নিয়া, গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে ইত্যাদি কালজয়ী গানেও চিরসবুজ হয়ে থাকবেন সুবীর নন্দী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।