আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আটলান্টিক মহাসাগরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ট্যুরিস্ট সাবমেরিন টাইটানের অনুসন্ধানে কাজ চলছে। সাবমেরিনে থাকা পাঁচ সদস্যকে জীবিত উদ্ধারে চলছে প্রচেষ্টা। টাইটানে অবস্থান করা পাঁচ সদস্য সম্পর্কে স্কাই নিউজ কিছু তথ্য তুলে ধরেছে।
সাবমেরিনে থাকা পাঁচ যাত্রীর মধ্যে রয়েছেন ব্রিটিশ ধনকুবের ৫৮ বছর বয়সী হামিশ হার্ডিং, ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ৪৮ বছর বয়সী শাহজাদা দাউদ, তার ছেলে ১৯ বছর বয়সী সুলেমান দাউদ, ৭৭ বছর বয়সী ফরাসি অভিযাত্রী পল-হেনরি নারজিওলেট এবং ওশানগেটের প্রধান নির্বাহী ৬১ বছর বয়সী স্টকটন রাশ।
হামিশ হার্ডিং
হামিশ হার্ডিংয়ের সৎ ছেলে তার বাবার সাবমেরিনের থাকার খবর জানান। হামিশ হার্ডিং নিজেও সাবমেরিনে উঠবেন বলে জানিয়েছিলেন টুইটারে। যেটি ছিল তার সর্বশেষ টুইট পোস্ট। তিনি মিশন বিশেষজ্ঞ হিসাবে ওশানগেট অভিযানে যোগ দিচ্ছেন বলে ওই পোস্টে জানান।
হামিশ হার্ডিং হচ্ছেন অ্যাকশন এভিয়েশনের চেয়ারম্যান। কোম্পানিটি সেলস এবং অপারেশন কোম্পানি হিসেবে ব্যবসায়িক এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা দিয়ে থাকে।
মঙ্গলবার অনুসন্ধান টিমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলে, ‘আমরা কর্তৃপক্ষ এবং সংস্থাগুলোর অব্যাহত প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানাই, যারা উদ্ধার প্রচেষ্টায় সহায়তার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
২০১৯ সালে তিনি ওয়ান মোর অরবিট ফ্লাইট মিশনে ছিলেন। এটি ছিল ভৌগলিক উভয় মেরুতে বিমানের মাধ্যমে পৃথিবী দ্রুততম প্রদক্ষিণ করার রেকর্ড। হার্ডিংয়ের বন্ধু জ্যানিক মিকেলসেন জানান, ‘হার্ডিং হচ্ছেন অনুসন্ধানকারী। তিনি সাবমেরিন ভ্রমণে টিমের বাকিদের জন্য অনুপ্রেরণা।’
তিনি আরও বলেন, ‘হার্ডিং নিজে শান্ত থাকবেন এবং দলের বাকিদের জন্যও একটি ভাল অনুপ্রেরণা হবেন। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে হামিশই এই দলকে নেতৃত্ব দিতে সাহায্য করতে পারে। কারণ তিনি এর আগেও কয়েকটি অভিযানে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন।’
স্টকটন রাশ
ওশানগেটের প্রধান নির্বাহী এবং প্রতিষ্ঠাতা ৬১ বছর বয়সী স্টকটন রাশ। ২০১২ সাল থেকে ওশানগেট ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সদস্য হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি।
ওশানগেট ফাউন্ডেশন একটি অলাভজনক সংস্থা। এটি সামুদ্রিক বিজ্ঞান, ইতিহাস এবং প্রত্নতত্ত্বে আরও আবিষ্কারের জন্য উদীয়মান সামুদ্রিক প্রযুক্তিকে অনুঘটক করা লক্ষ্যে কাজ করে।
কোম্পানির ওয়েবসাইটে দেওয়া রাশের জীবনী অনুসারে, তিনি ১৯ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ জেট ট্রান্সপোর্ট-রেটেড পাইলট হয়েছিলেন। কলেজের গ্রীষ্মকালীন সময়ে, তিনি সৌদি আরবীয় এয়ারলাইন্সের সাবকন্ট্রাক্টের অধীনে ওভারসিজ ন্যাশনাল এয়ারওয়েজের জন্য সৌদি আরবে যান। তিনি কায়রো, দামেস্ক, লন্ডন, জুরিখ এবং খার্তুমের মতো বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছেন বলে জানা গেছে।
১৯৮৯ সালে রাশ ব্যক্তিগতভাবে একটি গ্লাসেয়ার-১১১ পরীক্ষামূলক বিমান তৈরি করেছিলেন। তার ওয়েবসাইট অনুসারে, তিনি এখনও এটির মালিক এবং এটি উড়ান। তিনি একটি ভারী পরিবর্তিত কিটরেজ কে-৩৫ টু-ম্যান সাবমারসিবলও সম্পন্ন করেন, যেখানে তিনি ৩০টিরও বেশি ডাইভ পরিচালনা করেছেন।
ফেব্রুয়ারিতে স্কাই নিউজের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে, রাশ টাইটানিক ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এর সৌন্দর্য সত্যি আপনার মনকে আঘাত করবে। সাধারণত জাহাজের ধ্বংসাবশেষে আপনি এমন দেখতে পাবেন না। এটি একটি আশ্চর্যজনক সুন্দর ধ্বংসাবশেষ।’
পল-হেনরি নারজিওলেট
ফরাসি অভিযাত্রী পল-হেনরি নারজিওলেট একজন সাবেক কমান্ডার। যিনি ফ্রান্সে ২৫ বছর যাবৎ নৌবাহিনীতে কাজ করেছেন। চাকরির সময় তিনি নৌবাহিনীর গভীর সমুদ্র পর্যবেক্ষণ গ্রুপের অধিনায়ক ছিলেন।
নিউইয়র্ক টাইমস অনুসারে, ৭৭ বছর বয়সী এই ব্যক্তি তার দক্ষতার জন্য ‘মিস্টার টাইটানিক’ নামে পরিচিত অর্জন করেন। তিনি টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপের জন্য এ পর্যন্ত ৩৫টিরও বেশি ডাইভিং করেছেন।
তিনি আরএমএস টাইটানিক ইনকর্পোরেটেডের একজন সদস্য। এটি একটি মার্কিন ফার্ম, যা টাইটানিক থেকে অনেক কিছু উদ্ধার করেছিল। নারজিওলেট ওই দলের সাথে অনেক প্রত্নবস্তু উদ্ধার করেছিলেন।
ফার্মের প্রেসিডেন্ট জেসিকা স্যান্ডার্স বলেন, ‘আমরা এই খবরে বিধ্বস্ত। আমরা এখনও বিশ্বাস করছি সবাই নিরাপদে উদ্ধার হবে।’
তিনি বলেন, পল-হেনরি সহকর্মীর চেয়ে বেশি। তিনি একজন বন্ধু। তার চেয়ে টাইটানিক ধ্বংসস্তূপের জায়গায় কারও বেশি অভিজ্ঞতা নেই। আমরা আশাবাদী রয়েছি।’
শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলেমান
ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ৪৮ বছর বয়সী শাহজাদা দাউদ এবং তার ছেলে ১৯ বছর বয়সী সুলেমান দাউদ। তারা পাকিস্তানের অন্যতম ধনী পরিবার থেকে এসেছেন।
তাদের পরিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বন্ধু ও সহকর্মী যারা নিখোঁজ হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তাদের প্রতি আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। নিখোঁজদের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করতে সবাইকে অনুরোধ করছি।’
শাহজাদা দাউদ অলাভজনক গবেষণা সংস্থা সেতি ইন্সটিটিউটের একজন ট্রাস্টি। তিনি ২০০৩ সালে এনগ্রো কর্পোরেশনের বোর্ড সদস্য হন এবং বর্তমানে এর ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সুলেমান বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে বলে তার পরিবার জানিয়েছে।
ওশানগেট তাদের বিবৃতিতে জানায়, সাবমেরিনের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপনে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও গভীর সমুদ্রে কাজ করা কোম্পানি থেকে যে অকুণ্ঠ সহায়তা পেয়েছি আমরা তার জন্য কৃতজ্ঞ।
সাবমেরিনটির অভিযান বৃহস্পতিবার (২২ জুন) শেষ হওয়ার কথা। চলতি বছরে এটি ওশানগেটের পঞ্চম মিশন ছিল।
ওশানগেটের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, অভিযানে যেতে প্রত্যেক যাত্রীকে গুনতে হয় আড়াই লাখ ডলার। নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জনস থেকে শুরু হয় যাত্রা। সেখান থেকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের দূরত্ব প্রায় ৬৪০ কিলোমিটার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।