জুমবাংলা ডেস্ক : সুব্রত বাইন—এক নামেই আতঙ্ক ছড়ানো এক ব্যক্তি। সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই নামটি আবারও জাতীয় আলোচনায় উঠে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের জালে জড়িয়ে থাকা সুব্রত বাইন ও তার ঘনিষ্ঠ মোল্লা মাসুদসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে যেসব তথ্য প্রকাশ হয়েছে, তা শুধু চমকপ্রদ নয়, বরং বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুব্রত বাইন : সন্ত্রাসী জীবন ও পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্র
সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নয়। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে ২৩ জন কুখ্যাত সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে, যেখানে প্রথম নামটি ছিল ত্রিমোথি সুব্রত বাইনের। তাকে ধরিয়ে দিতে এক লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপরই ভারতের পথে পলায়ন করে সুব্রত ও তার ঘনিষ্ঠ মোল্লা মাসুদ। ভারতে থাকাকালীন সময়ে সে কোলকাতা পুলিশের হাতে আটক হলেও তানভিরুল ইসলাম জয়ের মাধ্যমে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। এখান থেকেই শুরু হয় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং এমআই-এর সঙ্গে সুব্রতদের সম্পর্কের সূচনা।
ভারতের মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশে কমান্ডো প্রশিক্ষণ, দিল্লিতে গোপন বৈঠক এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন সন্ত্রাসী মিশনের পরিকল্পনা ছিল এই সময়কার মূল কর্মপরিধি। এমনকি ঢাকায় বম সম্প্রদায়ের নেতা ও তার সন্তানকে হত্যা, মোস্তাকিম কাবাবের মালিককে গুলি করে হত্যা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয় সুব্রত। অভিযোগ অনুযায়ী, এই সমস্ত কাজের পেছনে ছিল আন্তর্জাতিক সংগঠনের মদদ।
বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন ও র্যাবের সঙ্গে গোপন আঁতাত
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশেষ ব্যবস্থায় ভারতের প্রেসিডেন্সি জেল থেকে সিলেট সীমান্ত হয়ে সুব্রত বাইনকে র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তাকে র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে আসা হয়, যেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ও মনিরুল ইসলাম তার সঙ্গে বৈঠক করেন। সুব্রতকে দেওয়া হয় একটি গোপন মিশনের দায়িত্ব, এবং তাকে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
এই সময়ে সুব্রতকে স্নাইপার ট্রেনিং দেওয়া হয়, যার মধ্যে ছিল মুভিং টার্গেটে গুলি করার প্রশিক্ষণ এবং আবহাওয়ার প্রভাব বিশ্লেষণ। এরপর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নতুন মিশনের অংশ হিসেবে তাকে লন্ডনে পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেখানে একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাকে টার্গেট করার পরিকল্পনা করা হয়, এবং পাকিস্তানী পাসপোর্টে তার পরিচয় পরিবর্তনের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।
সরকার পতন এবং পুরনো জাল আবার সক্রিয় হওয়া
২০২৪ সালের আগস্টে হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। সুব্রতকে তার মেয়ে বিথির কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং সে আবারও আত্মপ্রকাশ করে। এরপর ভারতের ‘র’ এর সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করে এবং মোল্লা মাসুদকে স্যাটেলাইট ফোনসহ বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এই সময়ে নেপালে পলাতক থাকা লেদার লিটনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়।
এই কাহিনির প্রতিটি অধ্যায়ে দেখা যায় কীভাবে সুব্রত বাইন শুধুমাত্র একজন সন্ত্রাসী নয়, বরং একাধিক দেশের গোয়েন্দা সংস্থার ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছিল। তার সঙ্গে যুক্ত ছিল ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সংযোগ এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সাথেও তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।
সুব্রত বাইন ও বাংলাদেশে নিরাপত্তা হুমকি
বর্তমানে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। তবে এই ঘটনায় আরও যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে, তা হলো রাষ্ট্র ও রাজনীতির সঙ্গে অপরাধ জগতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। মোল্লা মাসুদের গ্রেপ্তারের খবর এবং অন্যান্য অংশীদারদের তথ্য জানার পর স্পষ্ট হয় যে রাষ্ট্রযন্ত্রও একসময় তাদের ব্যবহার করেছে।
যদিও সুব্রত বাইন বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে, কিন্তু তার অতীত কর্মকাণ্ড এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য কৌশল নিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ বিরাজ করছে।
FAQs
- সুব্রত বাইন কে ছিলেন?
সুব্রত বাইন একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী, যিনি ২০০১ সাল থেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন এবং আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন। - মোল্লা মাসুদের ভূমিকা কী ছিল?
মোল্লা মাসুদ সুব্রত বাইন-এর প্রধান সহযোগী ছিলেন এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। - সুব্রত বাইন কিভাবে ধরা পড়েন?
২০২৫ সালে সেনাবাহিনীর এক অভিযানে কুষ্টিয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। - সে কোন কোন দেশে গিয়ে ছিল?
সুব্রত ভারত, সিঙ্গাপুর, চীন, নেপাল ও দুবাইতে অবস্থান করেছে, এবং বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিল।
- বর্তমানে সে কোথায় আছে?
সে বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel