খোন্দকার এহিয়া খালেদ : গোপালগঞ্জে এ বছর প্রথমবারের মতো পাকিস্তান বা ভারতের বাসমতি ঘরানার অতি লম্বা ও সবেচেয়ে সরু ধানের আবাদে সাফল্য মিলেছে। চলতি বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জে ১২টি প্রদর্শনী প্লটে ১২ একর জমিতে এই ধানের চাষাবাদ হয়েছে। বিনা উদ্ভাবিত প্রিমিয়াম কোয়ালিটির বিনাধান-২৫ জাতের খেতে শুধু এখন ধানের সমারোহ।
বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের ইনচার্জ ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, দেশের চাহিদা অনুসারে সরু ও চিকন (প্রিমিয়াম কোয়ালিটি) চাল অপ্রতুল। বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশ্যে বিনার উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ বিনাধান-২৫ উদ্ভাবন করেছে। ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর বিনাধান-২৫ জাত অবমুক্ত করা হয়। তারপর আমরা গোপালগঞ্জে মাঠ পর্যায়ে কৃষককে নিয়ে এই ধানের আবাদ করাই। গোপালগঞ্জে প্রতি হেক্টরে এই ধান অন্তত আট টন ফলন দেবে বলে খেতের ধান দেখে ধারণা করছি।
তিনি বলেন, বিনাধান-২৫-এর চাল বিদেশে রপ্তানিযোগ্য। এই চাল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে। এই চাল পাকিস্তান বা ভারত থেকে বাসমতি চাল আমদানিনির্ভরতা কমাবে। আর প্রতি কেজি ধান কমপক্ষে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করা যাবে, যা কৃষকের আয় দ্বিগুণ করে দেবে।
বিনাধান-২৫-এর গবেষক ড. সাকিনা খানম বলেন, আট বছর গবেষণার পর এই সাফল্য এসেছে। বিনাধান-২৫ মূলত ব্রি ধান-২৯। জাপানের একটি ল্যাবে ৪০ গ্রে মাত্রার কার্বন আয়রন রশ্মি প্রয়োগ করে এ জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে, যা চেকজাত ব্রি ধান ৫০ থেকে ১০ শতাংশ ফলন বেশি দিতে সক্ষম। প্রিমিয়াম কোয়ালিটির এই ধান আগাম পাকে। চাষাবাদের ১৩৮-১৪৮ দিনেই এই ধান খেত থেকে সংগ্রহ করা যায়। ধানের গড় ফলন হেক্টরপ্রতি সাড়ে ৭ থেকে সাড়ে ৮ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে উদ্ভাবিত ধানের জাতের মধ্যে বিনাধান-২৫ সর্বাধিক লম্বা ও সরু আকৃতির।
ঐ কর্মকর্তা আরো বলেন, এই ধানে রোগ ও পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। এ ধান চাষে পানি কম লাগে। ইউরিয়া সার সাশ্রয়ী। এজন্য বিনাধান-২৫কে ইউরিয়া, পানি ও বালাইনাশক সাশ্রয়ী জাত বলা যায়। ধানের গাছ লম্বা বেশি। তাই কৃষক প্রচুর খড় পাবেন।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত বিনার বিজ্ঞানীরা ২৬টি ধানের জাত আবিষ্কার করেছেন। এর মধ্যে বিনা ধান-২৫ অতি লম্বা ও সবচেয়ে সরু ধানের জাত। বিশেষ করে এ জাতটি বিদেশে রপ্তানিযোগ্য প্রিমিয়াম কোয়ালিটির চাল দেবে। বিনার প্রধান আরো বলেন, আমরা কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ, রপ্তানিমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর করব। আমদানিনির্ভরতা কমাতে ও কৃষকের আয় দ্বিগুণ করে দিতে চাই। সেই জায়গায় বিনাধান-২৫ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা গোপালগঞ্জের ২ হাজার কৃষককে দিয়ে আগামী বোরো মৌসুমে এই ধানের আবাদ করাব। সেই ভাবেই আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
মুকসুদপুর উপজেলার কদমপুর গ্রামের কৃষক মো. বাচ্চু শেখ বলেন, আমি কৃষি প্রণোদনা পেয়ে ১০০ শতাংশ জমিতে এই ধানের আবাদ করেছি। এই ধানে রোগবালাই নেই। সেচ ও সার কম লেগেছে। ধান অতি লম্বা ও সবেচেয়ে সরু। আমি আগামী বছরের জন্য এই ধানের বীজ সংরক্ষণ করব। আমার খেতে ধানের সমারোহ দেখে অনেক চাষি এই ধান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সূত্র : ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।