জুমবাংলা ডেস্ক : স্বাদ ও পুষ্টির কারণে উচ্চমূল্যের সামুদ্রিক মাছ হিসেবে পরিচিত কোরাল বা ভেটকি মাছ। দেশে প্রথমবারের মতো খাঁচায় কৃত্রিম খাদ্য ব্যবহার করে কোরাল মাছ চাষে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহানের নেতৃত্বে গবেষক দল।
গবেষণায় সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী জাবেদ হাসান। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এবং মৎস্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সাসটেইনেবল কোস্টাল মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্টের (এসসিএমএফপি) আওতায় এ গবেষণা পরিচালিত।
প্রধান গবেষক ড. মো. শাহজাহান বলেন, এ গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রে ভাসমান খাঁচায় কৃত্রিম সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করে ভেটকি চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই করা। দেশের উপকূলীয় তিনটি অঞ্চলে (সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জ, কক্সবাজারের মহেশখালী এবং ভোলার চর কুকরি-মুকরি) এই গবেষণার মাঠপর্যায়ের কাজ হয়। প্রত্যেক এলাকায় স্থানীয় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করে খাঁচা তৈরি থেকে শুরু করে চাষের প্রতিটি ধাপে তাদের যুক্ত করা হয়।
খাঁচায় কোরাল মাছের চাষ পদ্ধতি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষক ড. মো. শাহজাহান বলেন, ৬.৭ মিটার বৃত্তাকার খাঁচার ধারণক্ষমতা ছিল ৬০ ঘনমিটার। প্রতি ঘনমিটারে ১৫টি করে পোনা মজুত করা হয়। কৃত্রিম সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করে টু-টায়ার চাষ পদ্ধতি অর্থাৎ প্রথমে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে নার্সিং (প্রাক-পর্যায় চাষ) এবং পরে খাঁচায় স্থানান্তর করে বড় করার মাধ্যমে এই মাছ চাষ করা হয়।
ভেটকি মাছ রাক্ষুসী প্রকৃতির হওয়ায় প্রথমে তাদের তেলাপিয়া মাছ কেটে (মাছের মুখের আকার অনুযায়ী) খাওয়ানো হয়। এরপর ধাপে ধাপে বাণিজ্যিক ফিডের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয় এবং শেষে গবেষণাগারে তৈরি করা উচ্চ ৩৭ শতাংশ প্রোটিনযুক্ত সম্পূরক খাদ্যে অভ্যস্ত করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, কৃত্রিম খাদ্যে মাছের বৃদ্ধি বা পুষ্টিগুণে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বছর শেষে প্রতিটি খাঁচা থেকে গড়ে ৮০০ থেকে ৮৫০ কেজি মাছ উৎপাদিত হয়েছে। প্রতি ঘনমিটারে উৎপাদন হয়েছে ১৩ থেকে ১৭ কেজি। খাঁচায় চাষকৃত মাছের গড় আমিষের পরিমাণ ১৯ গ্রাম, যেখানে সাধারণ কোরালে এই পরিমাণ ১৭ গ্রাম।
গবেষক ড. মো. শাহজাহান আরও বলেন, খাঁচায় এই মাছ চাষে ১ টাকা বিনিয়োগে প্রায় ১ দশমিক ৭০ টাকা আয় নিশ্চিত করা সম্ভব। তাছাড়া নদীর জায়গা ব্যবহারে কোনো জমি ভাড়া দিতে না হওয়ায় কৃষকদের খরচও কমে আসে। ৫ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত একটি খাঁচা ব্যবহারযোগ্য যেখানে প্রতিবারে প্রায় ১ হাজার কেজি মাছ চাষ করা সম্ভব। বর্তমানে প্লাস্টিক দিয়ে খাঁচা তৈরি করা হলেও, প্রান্তিক চাষিরা চাইলে বাঁশ বা সাধারণ মাছ ধরার জাল দিয়েও কম খরচে এটি তৈরি করতে পারবেন।
এ পদ্ধতিতে রোগবালাইয়ের আশঙ্কা কম, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি কম এবং মাছের একে অপরকে খেয়ে ফেলার সম্ভাবনাও থাকে না। ০ থেকে ৩৫ পিপিটি (পার্টস পার মিলিয়ন) লবণাক্ত পানিতেও এই মাছ টিকে থাকতে পারে, যা একে উপকূলীয় চাষের জন্য উপযোগী করে তুলেছে।
খাঁচায় ভেটকি চাষ শুধু মাছ উৎপাদন বাড়াবে না, বরং উপকূলীয় অঞ্চলের দরিদ্র মৎস্যজীবীদের জন্য বিকল্প আয়ের সুযোগ তৈরি করবে। প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করে মেরিকালচারের (সামুদ্রিক মাছচাষ) বিকাশের একটি টেকসই পথ দেখাবে এই প্রযুক্তি। এতে আমাদের মৎস্য উৎপাদন বহুগুণে বাড়বে এবং ব্লু ইকোনমিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ জোরদার হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।