জুমবাংলা ডেস্ক : সহজে আবাদযোগ্য ও অধিক লাভজনক হওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত রাজশাহীতে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রসাল ফল স্ট্রবেরি খুবই জনপ্রিয়। এ দেশেও এই ফলের দিন দিন আকর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা বলছেন- চারা রোপনের একমাসের মধ্যে ফল আসে স্ট্রবেরিতে। সেই ফল পাওয়া যায় কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ মাস। এতে করে আর অন্য যে কোনো ফসলের চেয়ে লাভজনক বলছেন তারা। আর কৃষি অফিস বলছে- গেল বছরের তুলনায় জেলায় দুই হেক্টর বেশি জমিতে স্ট্রবেরির চাষ হয়েছে।
কৃষি অফিস বলছে, উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা ভালো থাকায় চাষিদের মধ্যে আগ্রহ বাড়েছে স্ট্রবেরি চাষে। চারা রোপনের একমাসের মধ্যে ফল আসে স্ট্রবেরিতে। সেই ফল পাওয়া যায় কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ মাস। আবার গাছে স্ট্রবেরি আসলে দুই দিন পর পর তুলে বিক্রি করা যায়।
পবার কিসমত কুখুন্ডী এলাকায় স্ট্রবেরি চাষ করেছেন গোলাম মোস্তফা। তিনি তিন বিঘা তিন কাটা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছেন। কার্তিক মাসের ২০ তারিখে জমিতে স্ট্রবেরির চারা রোপন করা হয়। বর্তমানে ফলন ভালোই হচ্ছে। যা আশা করেছিলাম, তার থেকে ভালো স্ট্রবেরি পাচ্ছি। প্রতি বিঘাতে প্রতিদিন স্ট্রবেরি পাওয়া যায় ৭০ কেজি। এছাড়া এক বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করতে খরচ হয় এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, রাজশাহী ছাড়া ঢাকার কাওরান বাজার, বকশি বাজার, বাইপেল, চট্টগ্রাম ও সিলেটে পাঠানো হয়। প্রথম অবস্থায় ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম স্ট্রবেরি উঠেছে জমি থাকে। যদিও তখন দাম ছিল ১৫০০ টাকা কেজি। স্ট্রবেরিগুলো পৌষ মাসের ১৫ তারিখ থেকে তোলা শুরু হয়। বর্তমানে পাইকারি ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ফলন বেড়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার মহিশালবাড়ী গ্রামের রজব আলী চার কাঠা জমিতে স্ট্রবেরি ফল চাষ করেছেন। তিনি বলেন, স্ট্রবেরির গাছ থেকে কম পক্ষে পাঁচ মাস ফল পাওয়া যাবে। ফল আসা শুরু হয়েছে পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে। মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র এই তিন মাস সবচেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যাবে। তবে চৈত্রের শেষের দিকে কম হলেও স্ট্রবেরি পাওয়া যাবে। স্ট্রবেরি শেষ হবে বৈশাখে ১৫ দিনে।
একই উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম বলেন, জমি থেকে একদিন পর পর স্ট্রবেরি তোলা হয়। সেই দিনগুলোতে ৮ থেকে ১০ জন কাজ করেন। এছাড়া প্রতিদিন দুইজন শ্রমিক তার জমিতে কাজ করেন। এই শ্রমিকদের মজুরি স্ট্রবেরি বিক্রি করে দেওয়া হয়। সবমিলে স্ট্রবেরি চাষের পরে আর অন্য কাজ করতে হয় না। আগে যদিও চাকরি করতাম। এখন সব ছেড়ে দিয়ে স্ট্রবেরির চাষ করছি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্ট্রবেরি চাষ আলু ও বেগুন গাছ জন্মানোর মতোই সহজ। প্রত্যেক বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মধ্যে স্ট্রবেরির চারা সারি করে রোপণ করতে হয়।
স্ট্রবেরি একটি ‘উচ্চমূল্যের ফসল। এর চারা রোপণের এক মাসের মধ্যেই গাছে ফুল আসতে শুরু করে এবং মার্চ মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। প্রত্যেক গাছে প্রায় আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ গ্রাম ওজনের ফল ধরে এবং এক বিঘা জমিতে ছয় হাজারের মতো গাছ জন্মে। কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি স্ট্রবেরির মূল্য প্রায় ছয়শ’ টাকা। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন জাড়ালে স্থানীয় ও বহির্বিশ্বে এর ভাল বাজার পাওয়া যাবে এবং কৃষকরা এতে লাভবান হবেন।
তিনি বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় স্ট্রবেরি চাষ সহজ ও অধিক লাভজনক বিধায় বিপুলসংখ্যক মানুষ, বিশেষ করে বেকার যুবকরা স্ট্রবেরি চাষ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। আইসক্রিম, জ্যাম, জেরি, চকলেট, বিস্কুট ইত্যাদি তৈরিতে এই ফল ব্যবহার করা হয় বলে দেশের বিভিন্ন বাজারে যুবকরা স্ট্রবেরি সরবরাহ করেন।
স্ট্রবেরি চাষের গবেষক, উদ্ভাবক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভদ বিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মঞ্জুর হোসেন বলেন, বাংলাদেশি জাতের স্ট্রবেরি বিশ্বের সেরা হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছে। আমরা টিস্যু কালচার পদ্ধতি প্রয়োগ করে তিন জাতের স্ট্রবেরি উদ্ভাবন করেছি। এসব জাতের স্ট্রবেরি এ অঞ্চলের মাটি ও পরিবেশে সহায়ক, যা প্রদর্শনী মাঠে প্রয়োগ করে দেখা গেছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর (২০২১-২২) রাজশাহী জেলায় ১২ হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়েছিল। যার গড় ফলন প্রতি হেক্টরে হয়েছিল ৭ দশমিক ৯ মেট্রিক টন। এছাড়া জেলার মোট ৮৯ মেট্রিক টন স্ট্রবেরি উৎপাদন হয়েছিল। এবছর (২০২২-২৩) রাজশাহী জেলায় ১৪ হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়। যা গত বছরের চেয়ে দুই হেক্টর বেশি জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়েছে। এ বছর জেলায় সম্ভাব্য ফলন ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২২৯ মেট্রিক টন প্রতি হেক্টরে। একইভাবে সম্ভাব্য উৎপাদন ধরা হয়েছে ১১৫ মেট্রিক টন। যদিও এখনও স্ট্রবেরি কৃষকের জমিতে রয়েছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক (শস্য) শারমিন সুলতানা বলেন, স্ট্রবেরি ফল বিভিন্ন খাবারে ব্যবহারের পাশাপাশি জেলি, কেক, ওষুধ ও সাবানসহ প্রসাধনীতে ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে এ ফলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আর তাছাড়া এটি লাভজনক ফসল হওয়ার কারণেই কৃষকরা স্ট্রবেরি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তবে স্ট্রবেরি চাষ করতে শিক্ষিত যুবকরাই বেশি আগ্রহী। এ কারণে বেকার শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে এবছর স্ট্রবেরি বেশি চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় স্ট্রবেরির চাষ ভালো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।