জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সুচিত্রা সেন একটি অমূল্য নাম। অভিনেত্রী হিসেবে তার জনপ্রিয়তা ও অবদান এতটাই বিস্তৃত যে, শুধুমাত্র পাবনা নয়—পুরো দেশ তাকে মনে রাখে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়। সম্প্রতি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের একটি ছাত্রীনিবাসের নাম সুচিত্রা সেন থেকে পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস’, যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সুচিত্রা সেন: উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতীক
সুচিত্রা সেন ছিলেন বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। পাবনার কন্যা হিসেবে তার জন্মভূমিতে তার নামে একটি ছাত্রীনিবাস থাকা শুধু সম্মানজনকই নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক শ্রদ্ধার প্রতীকও বটে। নাম পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে তার অসংখ্য ভক্ত ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলছেন, “সুচিত্রা সেন কোনো রাজনৈতিক চরিত্র নন; তিনি আবেগ, ভালোবাসা ও জাতীয় গর্বের প্রতীক।”
নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ও এর পেছনের রাজনৈতিক বিতর্ক
পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুল আউয়াল মিয়া জানান, একাডেমিক কাউন্সিলের আগের সদস্যরা নামকরণের বিরোধিতা করেছিলেন। তাদের মতে, সুচিত্রা সেন বাংলাদেশের নাগরিক নন, এবং কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন নায়িকার নামে হলের নাম রাখার নজির নেই। এই অবস্থানে দাঁড়িয়ে নতুন প্রশাসন ও একাডেমিক কাউন্সিল সর্বসম্মতভাবে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়।
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে অনেকেই এটিকে রাজনৈতিক চাপ ও সংস্কৃতির অবমূল্যায়ন হিসেবে দেখছেন। প্রখ্যাত সুরকার প্রিন্স মাহমুদ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “সুচিত্রা সেন শুধু পাবনার না, বাংলাদেশের ব্র্যান্ড। তিনি কোনোদিন আওয়ামী লীগ করেছেন বলে খবর পাওয়া যায় নাই। লজ্জা।”
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, পাবনা ড্রামা সার্কেল ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকে জানানো হয়, তারা এই নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে প্রতিবাদ জানাবে। পাবনার জনগণ এই সিদ্ধান্তকে সাংস্কৃতিক অপমান হিসেবে দেখছেন। তারা চান ছাত্রীনিবাসটির নাম আবার সুচিত্রা সেনের নামে পুনঃস্থাপন করা হোক।
একটি নামের পেছনের গৌরব
একটি ছাত্রাবাস বা ছাত্রীনিবাসের নাম শুধু একটি নাম নয়—এটি ঐ প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। সুচিত্রা সেনের মতো একজন কিংবদন্তি অভিনেত্রীর নামের মাধ্যমে ছাত্রীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল। সেই নাম বদলে দেওয়া মানে শুধু নাম পরিবর্তন নয়, বরং ইতিহাস ও আবেগের অপমান।
ভবিষ্যতের করণীয়
বর্তমানে এই বিতর্ক যেন শুধুমাত্র পাবনার কোনো কলেজের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে জাতীয় পর্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক আলাপ। প্রশাসন, শিক্ষক, ছাত্র এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও একটি বিষয় পরিষ্কার—সাংস্কৃতিক প্রতীকদের সম্মান রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব।
এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ হলো—সুচিত্রা সেন নামটি শুধু একজন অভিনেত্রীর পরিচয় নয়, এটি এক সাংস্কৃতিক চেতনার প্রতিনিধি।
FAQs
- সুচিত্রা সেন কে ছিলেন?
সুচিত্রা সেন ছিলেন উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত অভিনেত্রী যিনি বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রে সমান জনপ্রিয় ছিলেন। - কেন সুচিত্রা সেনের নামে হলের নামকরণ করা হয়েছিল?
তাঁর জন্মস্থান পাবনার সম্মান এবং সাংস্কৃতিক অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ছাত্রীনিবাসের নাম তার নামে রাখা হয়েছিল। - নাম পরিবর্তনের কারণে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছে?
সামাজিক মাধ্যমে এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। - ‘জুলাই ৩৬’ নামকরণের পেছনে কি কারণ?
নতুন প্রশাসন ও একাডেমিক কাউন্সিল ঐকমত্যে পৌঁছে এই নাম প্রস্তাব করে, তবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। - এই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে কি রাজনীতি?
বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, পূর্বে রাজনৈতিক চাপে সুচিত্রা সেনের নামকরণ হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। - এই বিতর্কে কী কোনো পরিবর্তন আসবে?
জনগণ ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর চাপ থাকলে প্রশাসন হয়তো বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel