ব্রিটেনে এক ভাসকুলার সার্জন নীল হপারকে দুই বছর আট মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। হপার ২০১৯ সালে নিজের পা কেটে মিথ্যা বিমা দাবি করেছিলেন। ৪৯ বছর বয়সী এই সার্জন আগে বহু অপ্রয়োজনীয় অঙ্গচ্ছেদের অস্ত্রোপচার করেছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্নওয়ালের ট্রুরো ক্রাউন কোর্টে শুনানিতে জানানো হয়, হপার ২০১৯ সালের মে মাসে একটি রহস্যময় অসুস্থতার কারণে নিজের হাঁটুর নিচের দুটি পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু প্রসিকিউটর নিকোলাস লি জানান, এই আঘাত কোনো রোগের কারণে নয়। হপার নিজেই বরফ ও ড্রাই আইস ব্যবহার করে পা হিমায়িত করেছিলেন, ফলে পা কেটে ফেলা জরুরি হয়ে পড়েছিল। হপার চিকিৎসকদের কাছে আঘাতের আসল কারণ গোপন রেখেছিলেন এবং সেপসিসের কারণে এমন হয়েছে বলে মিথ্যা দাবি করেছিলেন।
আদালতে হপার দুটি বিমা জালিয়াতি ও তিনটি নিপীড়নমূলক পর্নোগ্রাফি রাখার অভিযোগ স্বীকার করেন। তদন্তে জানা যায়, তিনি দুটি বিমা কোম্পানি থেকে মোট ৪ লাখ ৬৬ হাজার পাউন্ডের বেশি অর্থ দাবি করেছিলেন। প্রসিকিউটর লি বলেন, হপার ‘লোভের প্ররোচনায়’ এ কাজ করেছিলেন এবং এক বন্ধুকে মেসেজে বলেছিলেন, ‘এই সুযোগ কাজে লাগানো উচিত’। হপার গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় এটি উপভোগও করতেন।
আদালতে বলা হয়, হপারের ছোটবেলা থেকেই ‘বডি ডিসফোরিয়া’ নামে একটি মানসিক সমস্যা ছিল। তিনি নিজের পা দুটিকে ‘অতিরিক্ত’ এবং ‘চিরস্থায়ী অস্বস্তির’ কারণ মনে করতেন। হপারের আইনজীবী অ্যান্ড্রু ল্যাংডন বলেন, হপার অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারগুলোর জন্য অনুতপ্ত নন, তবে বিষয়টি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য তিনি অনুশোচিত।
পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত অভিযোগগুলোও গুরুতর। হপার একটি ওয়েবসাইট থেকে তিনটি ভিডিও কিনেছিলেন, যেখানে পুরুষরা স্বেচ্ছায় যৌনাঙ্গ অপসারণ করতে দেখা যায়। ওই ওয়েবসাইট পরিচালনাকারী মারিয়াস গুস্তাভসন পরবর্তীতে ২২ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছিলেন। হপার তাঁর সঙ্গে প্রায় ১,৫০০টি এসএমএস বিনিময় করেছিলেন, যার মধ্যে পা অপসারণ ও ড্রাই আইস ব্যবহারের বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়।
হপার অঙ্গচ্ছেদের ছয় মাসের কম সময়ের মধ্যে কৃত্রিম পা নিয়ে কর্মস্থলে ফিরে যান। তিনি ২০১৩ সাল থেকে রয়্যাল কর্নওয়াল হসপিটালস এনএইচএস ট্রাস্টে কর্মরত ছিলেন, ২০২৩ সালের মার্চে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পর্যন্ত।
ট্রাস্টের মুখপাত্র জানিয়েছেন, হপারের অপরাধ তার পেশাদার আচরণের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এবং কোনো রোগীকে ক্ষতি বা ঝুঁকি হয়নি। ডেভন ও কর্নওয়াল পুলিশও নিশ্চিত করেছেন, চিকিৎসাসেবা সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
তবে হপারের কিছু সাবেক রোগী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে এনাবেল ল’-এর অংশীদার মাইক বার্ড বলেন, এই ঘটনাটি সাবেক রোগীদের মধ্যে ‘ট্রমা ও গুরুতর উদ্বেগ’ সৃষ্টি করেছে। কিছু রোগীর অস্ত্রোপচার এমন যা তাদের জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে, এবং তারা এখন ভাবছেন, অস্ত্রোপচারটি কতটা প্রয়োজনীয় ছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।