জুমবাংলা ডেস্ক : বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন মো. মোস্তফা (৫০)। ৫০০ টাকা বেতন হওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। তাই শিক্ষকতা ছেড়ে তিনি ফিরে আসেন পারিবারিক কৃষিতে। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। কৃষিকাজ করে তিনি এখন সফল। মুখে এখন তার সূর্যমুখীর হাসি।
মো. মোস্তফা সুবর্ণচর উপজেলার চর আমানউল্যা ইউনিয়নের কাটাবুনিয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। এ বছর ২০ একর লবণাক্ত পতিত জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করেছেন তিনি। তার মাঠজুড়ে সূর্যমুখীর মায়াবী হাসি ও চাষে লাভজনক হওয়ায় এ উপজেলায় তৈরি হয়েছে সূর্যমুখী চাষের সম্ভাবনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দিগন্তজুড়ে সূর্যমুখী ফুলের হাসি চোখে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন সূর্য ঝলমলিয়ে হাসছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজারো সূর্যমুখী ফুল। বাতাসে দোল খেয়ে ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করার। সূর্য যখন যেদিকে হেলছে, সূর্যমুখী ফুলও সেদিকে হেলে পড়ছে। এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মৌমাছির দল যেমন ছুটে আসছে তেমনি প্রকৃতিপ্রেমীরা আসেন দল বেঁধে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে কৃষক মো. মোস্তফার ২০ একর জমিসহ উপজেলা জুড়ে মোট ২১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। সূর্যমুখী ফুলের শুকনো বীজ থেকে উৎপাদিত হয় তেল। পাশাপাশি এ ফুলের উচ্ছিষ্ট থেকে বের হয় ‘খইল’ নামের এক ধরনের গোখাদ্য। তুলনামূলক লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখীর আবাদে উৎসাহী হয়ে উঠছেন উপজেলার কৃষকরা।
কৃষক মো. মোস্তফা বলেন, এই মাঠে আমার দাদা কৃষি কাজ করতেন। পরবর্তীতে আমার বাবা কৃষিকাজ করেছেন। আমি ৯১ সাল থেকে কৃষি কাজ শুরু করি। এর আগে দীর্ঘদিন বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেছি। আমার কাছে শিক্ষকতা ভালো লাগতো না কেননা এখানে বেশ কিছু কৃষি জমি পড়ে থাকতো। এরপর কৃষিকাজ শুরু করি। প্রায় ৩০ বছর ধরে কৃষিকাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, আগে থেকেই কৃষির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমার কাছে কৃষি ভালো লাগে তাই শিক্ষকতা ছেড়ে পুরো সময় কৃষিতে দেই। ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারছি। আলহামদুলিল্লাহ আমার জীবন ভালো কাটছে। এখন মাসে ১৫-১৬ হাজার টাকা থাকে আমার। এতে করে আমার সংসার ভালোভাবে চলছে।
কৃষক মো. মোস্তফা আরও বলেন, সূর্যমুখীতে খরচ কম লাভ বেশি। প্রতি একরে সার, বীজ ও চাষসহ প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। আবহাওয়া ভালো থাকলে একর প্রতি উৎপাদন হয় ১৫ মণ সূর্যমুখী। প্রতি মণ বিক্রি হয় ৩ হাজার টাকা। মোট বিক্রি করতে পারলে ৪৫ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিলে আমাদের ৩০ হাজার টাকা করে লাভ থাকবে।
কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, লবণাক্ত হওয়ায় এই জমিতে কোনো ফসল হতো না। পতিত জমি হিসেবে এটা পড়ে ছিল। কৃষি অফিসার আমাদের বললেন লবণাক্ত জমিতেও সূর্যমুখী আবাদ হয়। তিনি সার বীজ দিয়েছেন আমরা আবাদ করেছি। ফলন ভালো হওয়ায় আমরা খুশি।
সূর্যমুখীর চাষে সফল ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষকরা, বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।