বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : একটা সাদা সুড়ঙ্গ পথ। তার গায়ে নানা যন্ত্রপাতি বসানো। পথের শেষে চৌকো দরজা। নবাগতদের স্বাগত জানাতে সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ‘মহাকাশবাসী’ বিজ্ঞানীরা। শূন্যে ভাসতে ভাসতে, খানিক সাঁতরে মহাকাশ স্টেশনে ঢুকে পড়লেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান নভশ্চর সুনীতা উইলিয়ামস। তাঁর পিছনে আর এক মহাকাশচারী বুচ উইলমোর। মহাকাশের ‘ঘরে’ ফেরার আনন্দে নাচতে শুরু করেন সুনীতা, তার পরে একে একে জড়িয়ে ধরেন সকলকে। বোয়িং স্টারলাইনার ক্যাপসুলে চেপে পৃথিবী থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস)-এ পৌঁছনোর পরের ক্যামেরাবন্দি মুহূর্তগুলো এক্স হ্যান্ডলে প্রকাশ করেছে ‘বোয়িং স্পেস’।
সুনীতা এর আগেও দু’বার মহাকাশ সফর করেছেন। ৩২২ দিন পৃথিবীর কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান মহাকাশ স্টেশনে কাটানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। মহাকাশে হাঁটার (সাত বার) রেকর্ড তাঁর কাছেই ছিল। স্পেসওয়াকের সময়েও তিনি রেকর্ড গড়েছিলেন। মোট ৫০ ঘণ্টা ৪০ মিনিট হেঁটেছেন তিনি। এ বারেও নজির গড়েছেন তিনি। সুনীতাই প্রথম মহিলা, যিনি কোনও নতুন মহাকাশযানের পাইলট হলেন। বোয়িং স্টারলাইনারের উদ্বোধনী মহাকাশযানটিকে ফ্লরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে সফল ভাবে উড়িয়ে নিয়ে গেলেন আইএসএস-এ। ৫৮ বছর বয়সি সুনীতা স্টেশনে ঢুকেই নাচতে শুরু করেন। সাফল্যের আনন্দ তাঁর চোখেমুখে উজ্জ্বল। ক্যামেরাবন্দি হয়েছে সেই সব দৃশ্য।
এ বারের অভিযানটি বোয়িংয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি ছিল ‘বোয়িং ক্রু ফ্লাইট টেস্ট’। অর্থাৎ পরীক্ষামূলক উড়ান। দুই অভিজ্ঞ মহাকাশচারীর সার্টিফিকেট পেলে মহাকাশ-বাণিজ্যে পাকাপাকি ভাবে পা ফেলবে বোয়িং। এর পরে তারা নিয়মিত ভাবে অভিযাত্রীদের মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছে দিতে পারবে এবং নাসার বাণিজ্যিক ‘ক্রু প্রোগ্রাম’-এ অংশ নেবে। পৃথিবী থেকে মহাকাশ স্টেশন সফর, এই যাত্রার ভার ইতিমধ্যেই বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে নাসা। ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্স-এর ‘ক্রু ড্রাগন’ আগেই সেই মহাকাশযাত্রী-পরিষেবা শুরু করে দিয়েছে। বোয়িং দ্বিতীয় সংস্থা হিসেবে প্রতিযোগিতায় নাম লেখাবে।
আগামী এক সপ্তাহ আইএসএসে থাকবেন সুনীতা ও বুচ। নানা ধরনের পরীক্ষা করবেন। সেই সঙ্গে খতিয়ে দেখবেন স্টারলাইনারের সিস্টেম। বোয়িংয়ের মহাকাশযানটির কর্মক্ষমতা নিয়ে এখনও বেশি কিছু প্রশ্ন রয়েছে। শোনা গিয়েছে, যাত্রাপথে তিন বার হিলিয়াম বেরিয়ে (লিকেজ) গিয়েছে। প্রথম গ্যাস বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি উড়ানের আগেই ধরা পড়েছিল। সেটি তখন ঠিক করা হয়। কিন্তু মহাকাশযান পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছনোর পরে আরও দু’বার হিলিয়াম গ্যাস বেরিয়ে যায়। সে সময়ে হাতেকলমে (ম্যানুয়ালি) হিলিয়াম ভাল্ভ বন্ধ করতে হয়। দুই মহাকাশযাত্রী না ঘুমিয়ে যানের দেখভাল করতে থাকেন এবং পরিস্থিতি সামলান। আগামী সাত দিন তাই মহাকাশযানটির হলহকিকত খতিয়ে দেখবেন সুনীতারা। তার পরে পৃথিবীতে ফেরার মহাকাশযানে উঠবেন। প্যারাশুটের সাহায্যে পশ্চিম আমেরিকায় কোথাও অবতরণ করবেন তাঁরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।