আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পল কারাসনের গায়ের রং বদলে যাওয়ায় তিনি খবরের শিরোনামে চলে আসেন। কচিকাঁচারা তাঁকে ‘পাপা স্মার্ফ’ বলে ডাকতে শুরু করে। তাতে অবশ্য খুশিই হতেন পল কারাসন।
কমিক চরিত্র পাপা স্মার্ফকে মনে আছে? কিংবা তামিল সিনেমা ‘আই’-এর লিঙ্গেসনকে? সিনেমা বা বইয়ের পাতা নয়, ইনি রক্তমাংসের মানুষ। যা মনে করাবে ওই দুই চরিত্রকে। তাঁর নাম পল
আমেরিকার বাসিন্দা পল কারাসন। তাঁর সারা শরীরের রং গাঢ় নীল! না, জন্মের পর এমন গায়ের রং ছিল না তাঁর। ত্বকের রং বদলে গিয়েছে ‘সাপ্লিমেন্ট’ বা পেশিবর্ধক খাবার খাওয়ার পর।
কমিক চরিত্র পাপা স্মার্ফের গায়ের রং ছিল নীল। পল কারাসনকে তাঁর গায়ের রঙের জন্যই চেনেন আমেরিকার আবালবৃদ্ধবনিতা। তাঁকে ওই নামেই ডাকতেন সবাই।
বেশ কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন পল। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর ইচ্ছে মতো পেশিবর্ধক খাবার খাওয়া শুরু করেন। আর তাতেই বদলে যায় তাঁর ত্বকের রং! সাপ্লিমেন্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এখন তিনি ‘নীল মানুষ’।
বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, পল কারাসন ডার্মাটাইটিসে ভুগছিলেন। ত্বকের সমস্যার সমাধান খুঁজছিলেন তিনি। কিন্তু এর মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে যায় সারা শরীরে।
কী করবেন না করবেন ভেবে চিন্তায় পড়েছিলেন পল। ওই সময় সংবাদপত্রে একটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে তাঁর। সেই বিজ্ঞাপনী প্রচারে ভুলে বাড়ির কাছের দোকানে যান কারাসন। কিনে ফেলেন একটি ‘সাপ্লিমেন্ট’।
ওই বিজ্ঞাপনের বর্ণনা মেনে রোজকার খাবারের তালিকায় সাপ্লিমেন্টটিকে যোগ করেন পল। প্রথমে অবশ্য কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। বরং সাপ্লিমেন্ট খেতে খেতে পলের মনে হয়েছিল, তাঁর ত্বকের সমস্যার সমাধান হচ্ছে।
বছরের পর বছর ওই সাপ্লিমেন্ট খেতে থাকেন পল। এর মধ্যে হঠাৎ এক দিন আয়নায় নিজেকে ভাল করে দেখে চমকে উঠলেন তিনি। এ কী! প্রথমে নীলচে, ক্রমশ গাঢ় নীল হতে থাকে পলের গায়ের রং। তার পর থেকে তিনি ওই কমিক চরিত্রের মতো গায়ের রং পেয়েছেন! ত্বক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পল যে সাপ্লিমেন্টটি দিনের পর দিন খাচ্ছিলেন তাতে রুপোর বিশেষ কোনও মিশ্রণ রয়েছে। সিলভারের বিষক্রিয়ার ফলেই ত্বকের এই হাল হয়েছে তাঁর।
অনেকের আবার দাবি, পলের কেনা সাপ্লিমেন্টে এমন সব মিশ্রণ মেশানো হয়েছে যা আমেরিকায় নিষিদ্ধ। ওই সবের বিষক্রিয়ায় ভুগতে হয়েছে কারাসনকে। গায়ের রং বদলে যাওয়া এমন অসুখের নাম আছে কিছু? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই অসুখের নাম আর্জিরিয়া।
পলের গায়ের রং বদলে যাওয়ায় তিনি খবরের শিরোনামে চলে আসেন। কচিকাঁচারা তাঁকে ‘পাপা স্মার্ফ’ বলে ডাকতে শুরু করে। তাতে অবশ্য খুশিই হতেন পল কারাসন। হাসি ফুটে উঠত ‘নীল মানুষ’টির মুখে। সেই হাসির ভিতরে কি দুঃখ ছিল? জানা যায়নি। তবে বড়রা যখন ওই নামে ডাকতেন প্রচণ্ড রেগে যেতেন তিনি।
তামিল সিনেমা ‘আই’-তে লিঙ্গেসনের লক্ষ্য ছিল ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’র খেতাব জেতা। সেখান থেকে মডেলিং এবং সিনেমায় কাজ শুরু করে সে। নায়িকা দিয়ার সঙ্গে প্রেম হয় তার। কিন্তু যে চিকিৎসকের কাছে সে চিকিৎসা করাত, সে দিয়ার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করত। তাই লিঙ্গেসনকে এমন একটা সাপ্লিমেন্ট দেয় সে, যা খেতে খেতে মাথার চুল পড়ে প্রথমে। তার পর বিকৃত দেখতে হয়ে যায় নায়ক। বাস্তবে পলও ছিলেন তেমনই।
২০০৮ সালে পল একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেন। ত্বকের সমস্যার জন্য কেউ যাতে বিজ্ঞাপনী প্রচারে ভুলে তাঁর মতো কাজ না করেন, এই বার্তা দেন পল। জানান, রুপো শরীরে যাওয়ার পর কী মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে তাঁর।
২০১৩ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় পল কারাসনের। বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। বিজ্ঞাপনে মুখ ঢেকে গেলে কী ক্ষতি হতে পারে, তা-ই সবাইকে দেখিয়ে গিয়েছেন এই আমেরিকান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।