সুমন্ত গুপ্ত : ইট পাথর আর কংক্রিটে পরিপূর্ণ আমাদের নগর জীবন। সুস্থভাবে অক্সিজেন নিয়ে নিঃশ্বাস ফেলার মতো জায়গা মেলানো ভার! আর তাই ছুটির দিনে বেরিয়ে পরি কখনো জানা অথবা অজানা গন্তব্যের পানে। অফিসের সহকর্মী মনির ভাইয়ের সাথে কথা হচ্ছিল নতুন কোথায় যাওয়া যায় ঘুরতে।
তিনি বললেন, ‘ঢাকার অদূরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের গোলাপ গ্রামে গিয়েছেন নাকি?’ বললাম, ‘নাম শুনেছি, কিন্তু যাওয়া হয়নি।’ মনির ভাই বললেন, ‘আমার বাড়ি থেকে গন্তব্য পানে যেতে খুব বেশি হলে পঁচিশ মিনিট লাগবে। চলে আসুন আসছে সপ্তাহে; ঘুরে আসবেন গোলাপ গ্রাম থেকে।’ ভাবলাম, প্রস্তাবটা মন্দ নয়। আর পরিচিত কেউ থাকলে গন্তব্য পানে যাওয়া আরো সহজ হয়। বললাম, ‘ঠিক আছে। আসছে সপ্তাহেই আমি আর আমার সহধর্মিণী হাজির হব আপনার এলাকায়।’
বৃহস্পতিবার, তাই অফিসে কাজের চাপও একটু বেশি। তার মাঝে কাল নতুন গন্তব্যে ঘুরতে যাব— এ খুশিতে কাজ করার স্পৃহা দ্বিগুণ বেড়েছে। অফিস শেষ করে বাসায় এসে সানন্দাকে বললাম, ‘কাল তোমাকে অন্য রকম এক জায়গায় ঘুরাতে নিয়ে যাব।’ সানন্দা জানতে চাইল, ‘কোথায় নিয়ে যাবে।’ আমি বললাম, এখন বলা যাবে না। কাল গেলে পরেই দেখতে পাবে।’
পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে তৈরি হয়ে নিলাম নতুন গন্তব্য পানে যাব বলে। একসময় আমরা পৌঁছালাম গুলিস্তানে। সেখান থেকে উঠে পড়লাম বাসে। মনির ভাইয়ের ফোন— ‘কোথায় ভাই আপনারা?’ বললাম, ‘বাস ছেড়েছে মাত্র, আসছি।’ আমরা মিরপুর, ধানমন্ডি, ফুলবাড়ি হয়ে চলছি এগিয়ে। প্রায় ৪৫ মিনিট পর আমরা এসে পৌঁছালাম সাভার বাস স্ট্যান্ডে। সেখানে আগের থেকেই অপেক্ষা করছিলেন মনির ভাই। দেখা হতেই মনির ভাই বললেন, ‘আগে চলেন আমার বাসার দিকে যাই। সেখানে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে গন্তব্য পানে যাব।’ বললাম, ‘না, আগে ঘুরে আসি। পরে আপনার বাসায় যাব।’
দেরি না করে আমরা উঠে পড়লাম তিন চাকার ইঞ্জিন গাড়িতে। ছুটে চলছে আমাদের তিন চাকার যান্ত্রিক বহর। ভাঙা সড়কে দোল খেতে খেতে কিছুটা পথ যেতেই নৈসর্গিক সব দৃশ্যে চোখ আটকাল। সত্যিই অসাধারণ, ঢাকার পাশেই এমন মায়াবী প্রাকৃতিক দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। সোঁদা মাটির গন্ধ নাকে পেতে পেতেই নজরে এলো লাল গোলাপের বিশাল বাগান। সানন্দা তো বেজায় খুশি।
মনির ভাই বললেন, ‘আরেকটু সামনে গিয়ে নামি, তখন শেষ মাথা থেকে ঘুরে ঘুরে দেখে আসতে পারব।’ গ্রামের ভেতর দিয়ে চলে গেছে আঁকাবাঁকা সরু পথ। পথের দুই পাশে অসংখ্য গোলাপের বাগান। যত দূর চোখ যায়, শুধু লাল গোলাপের সমারোহ। মাঝে মাঝে কিছু সাদা গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরার বাগানও চোখে পড়ে। সূর্যদেবের রক্তিম আভার সাথে লাল টকটকে গোলাপ মাথা উঁচু করে থাকে। দুপুরের পর থেকেই এখানকার চাষিরা বাগানে নেমে যান গোলাপ তুলতে। গাছের সারির এক পাশ থেকে ফুল তোলা শুরু করে শেষ পর্যন্ত মুঠো ভরে ফুল তোলেন। চাষিদের ফুল তোলার দৃশ্যও বেশ উপভোগ্য।
মনির ভাই জানান, বাণিজ্যিকভাবে এখানে প্রথম গোলাপ চাষ শুরু হয় ১৯৯০ সালে। কয়েকজন যুবক এ গোলাপ চাষ শুরু করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ভালো ফলন ও মুনাফা হওয়ায় এখন সাদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, মোস্তাপাড়া গ্রামের মানুষ গোলাপ চাষ করে অনেকেই স্বনির্ভর। বর্তমানে পুরো ইউনিয়নেই গোলাপ চাষাবাদ হচ্ছে। সাদুল্লাহপুর গ্রামের মানুষ কম সময়ে বেশি মুনাফার আশায় মূল পেশা পরিবর্তন করেছে। তারা কৃষিকাজ ছেড়ে এখন সবাই গোলাপ চাষে ব্যস্ত। সূত্র : ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।