আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চাঁদ যখন পরিভ্রমণরত অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন অল্প সময়ের জন্য পৃথিবীর কোন দর্শকের কাছে সূর্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। এই ঘটনাকে সূর্যগ্রহণ বলা হয়। পৃথিবীতে প্রতিবছর অন্তত দুই থেকে পাচঁটি সূর্যগ্রহণ পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু এই সূর্যগ্রহণ নিয়ে সমাজে রয়েছে নানা কুসংস্কার। যার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
পৃথিবী ও চাঁদ একটি নির্দিষ্ট নিয়মে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে এবং এর ফলে সূর্যের বিপরীতে পৃথিবী এবং চাঁদের অবস্থান প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তন হতে হতে চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী যখন একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমে অবস্থান নেয় তখনই হয় সূর্য অথবা চন্দ্রগ্রহণ।
সূর্যগ্রহণ তিন রকম হতে পারে। আংশিক বা খণ্ডগ্রাস, বলয়গ্রাস এবং পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ হতে হলে চাঁদের আপাত ব্যাস সূর্যের সমান বা বেশি হতে হবে। সূর্য বেশি দূরে থাকলে এবং চাঁদ বেশি কাছে থাকলে সেই সময় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। অনুকূল পরিবেশে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ সবচেয়ে বেশি ৭ মিনিট ৪০ সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
চাঁদ যখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে, সূর্য তখন চাঁদের ওপর সরাসরি আলো ফেলে। এর ফলে চাঁদের ছায়া সোজা গিয়ে পড়ে পেছনে থাকা পৃথিবীর ওপর। পৃথিবীর যে অংশে চাঁদের এই বিশাল ছায়া পড়ে, দিনের বেলাতেই সেই অংশ অন্ধকার হয়ে যায়। আর ওখান থেকে সূর্যের দিকে তাকালে মনে হবে যে সূর্য অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে। আসলে সূর্য অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে এখানে চাঁদ সূর্যের বরাবর আসায় সূর্য চাঁদের আড়ালে চলে যায়। চাঁদের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে কখনও চাঁদ পুরোপুরি অথবা কখনও আংশিকভাবে সূর্যকে আড়াল করে। একেই পূর্ণ ও আংশিক সূর্যগ্রহণ বলা হয়।
পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণে চাঁদ যেমন সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলতে পারে কিন্তু বলয়গ্রাসের সময় চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢাকতে পারে না। এ সময় সূর্যের চারদিকে একটি বলয় সৃষ্টি হয়। চাঁদের আয়তন ছোট হওয়ায় সূর্য চাঁদের পাশ দিয়ে আলো ছড়াবে। ফলে আকাশে আংটির মতো আকৃতি তৈরি হবে। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘রিং অব ফায়ার’।
সূর্যগ্রহণের সময়কে মোট চারটি ভাগে বা চারটি স্পর্শে (চাঁদ দ্বারা সূর্য ঢেকে যাওয়া) ভাগ করা হয়। উত্তর গোলার্ধে যখন চাঁদের পূর্বপ্রান্ত দিয়ে সূর্যের পশ্চিমপ্রান্ত ঢাকা পড়তে শুরু করে, সেই মুহূর্ত থেকেই প্রথম স্পর্শের শুরু। অর্থাৎ প্রথম স্পর্শ থেকেই গ্রহণের শুরু। এরপর চাঁদের দেহ সূর্যের পূর্বপ্রান্তে স্পর্শ করবে ততক্ষণ পর্যন্তই গ্রহণের প্রথম স্পর্শ। প্রথম স্পর্শের পুরোটাই হবে আংশিক গ্রহণ।
চাঁদের পূর্বপ্রান্ত সূর্যের পূর্বপ্রান্ত স্পর্শ করলে সেটা হবে দ্বিতীয় স্পর্শ। দ্বিতীয় স্পর্শের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের শুরু। অর্থাৎ চাঁদের দেহ দিয়ে সূর্য সম্পূর্ণরূপে ঢাকা পড়বে।
চাঁদের পূর্বপ্রান্ত আরও এগিয়ে গেলে যখন চাঁদের পশ্চিমপ্রান্ত সূর্যের পশ্চিমপ্রান্ত স্পর্শ করে তখন শুরু হয় তৃতীয় স্পর্শ। তৃতীয় স্পর্শে পূর্ণগ্রাস গ্রহণ শেষ হবে। তৃতীয় স্পর্শের পর থেকে সূর্যের পশ্চিমপ্রান্ত ধীরে ধীরে দেখা দিতে শুরু করবে। চাঁদের পশ্চিমপ্রান্ত এবং সূর্যের পূর্বপ্রান্ত পরস্পর থেকে মুক্ত হলে হয় চতুর্থ স্পর্শ। তবে তৃতীয় স্পর্শ থেকে চতুর্থ স্পর্শ পর্যন্ত আংশিক গ্রহণ দেখা যাবে।
সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে কুসংস্কার
সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণকে ঘিরে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গাতেই নানারকম ধারণা চালু রয়েছে। যদিও এসব ধারণা সবগুলোই সম্পূর্ণ ভুল এবং এসবের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এরকম কিছু ভুল ধারণা সম্পর্কে জানা যাক…
রান্না করা, খাবার খাওয়া
এরকম একটি কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে যে, সূর্যগ্রহণের সময় কোনো ধরনের খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অনেক জায়গায় এরকমও ধারণা রয়েছে যে সূর্যগ্রহণের সময় রান্না করা হলে সেটিও অমঙ্গলজনক। কিন্তু এরকম ধারণার কোনো ভিত্তি কখনোই পাননি বিজ্ঞানীরা।
গর্ভবতী নারীদের বাইরে বের হওয়া
প্রচলিত রয়েছে সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী নারীরা ঘরের বাইরে বের হলে গর্ভের সন্তানের শরীরে বিশেষ ধরনের জন্মদাগ হতে পারে। এমনকি সন্তানের হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র থাকা বা বিকলঙ্গতা নিয়েও সন্তান জন্ম নিতে পারে। এটি স্রেফ সংস্কার। এমন ধারণা বৈজ্ঞানিকভাবে ভিত্তিহীন হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে অনেক আগেই।
ভ্রমণ না করা
সূর্যগ্রহণ চলাকালীন ভ্রমণ করলে তা হবে অমঙ্গলজনক- এমন একটি ধারণাও প্রচলিত আছে মানুষের মধ্যে। এরকম আরেকটি ধারণা রয়েছে যে, সূর্যগ্রহণের সময় ভ্রমণ করলে সূর্য থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর রশ্মি গায়ে লেগে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে, গ্রহণের সময় সূর্য থেকে আলাদা কোনো ক্ষতিকর রশ্মি নিঃসরণ হয় না, কাজেই আলাদাভাবে কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আর মঙ্গল-অমঙ্গলের কোন বিষয়ই এর সঙ্গে জড়িত নয়।
গ্রহণের পর গোসল করা
কথিত আছে, সূর্যগ্রহণের সময়ে বের হলে ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব থেকে ত্বককে বাঁচাতে গ্রহণের শেষে গোসল করতে হয়। এই ধারণাটিও সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। বিজ্ঞানীরা বলেন, “সাধারণ অবস্থায় সূর্যের রশ্মি গায়ে লাগলে যতটা ক্ষতি, সূর্যগ্রহণের সময় তার চেয়ে বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।” কাজেই সূর্যগ্রহণে অতিরিক্ত ক্ষতি হবে এই ধারণার কোনো ভিত্তি নেই।
জেলের জালে ধরা পড়লো বিরল প্রজাতির বিশাল বড় এক নীল রঙের চিংড়ি
তবে সূর্যগ্রহণের সময় খালি চোখে সূর্যের দিকে তাকানো উচিত নয়। খালি চোখে তাকালে চোখের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আজকের সূর্যগ্রহণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা নিতে বলা হয়েছে। বিজ্ঞানিরা বলেছেন, এটি খালি চোখে দেখলে চোখ খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা তো থাকেই, এমনকী অন্ধত্ব হওয়াও বিচিত্র নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।