লাইফস্টাইল ডেস্ক : শাক বা পাতা সবজি হলো এক ধরনের উদ্ভিদ যার পাতা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। পাতা ছাড়াও মাঝেমধ্যে পাতাবৃন্ত ও কচি কাণ্ড এর অন্তর্ভুক্ত। যদিও বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ শাকের আওতায় আসে। অধিকাংশের পুষ্টিগুণ ও রান্নার পদ্ধতি অনুসারে শাকের সাথে ভাগ করা হয়।
প্রায় এক হাজার প্রজাতির উদ্ভিদের পাতা খাওয়ার উপযোগী হিসেবে জানা যায়। শাক অধিকাংশ সময় লতাপাতা বা গুল্মজাতীয় ও ক্ষণস্থায়ী উদ্ভিদ হয়ে থাকে। যেমন: লেটুস, পালংশাক, পুঁইশাক, নাপা শাক, লালশাক ইত্যাদি। আদানসোনিয়া, অ্যারেলিয়া, মোরিঙ্গা, মোরাস ও টুনা প্রজাতিসহ কিছু অরণ্যময় বা বৃহদাকার উদ্ভিদের পাতাও শাক হিসেবে খাওয়া যায়।
আমাদের প্রতিদিনের পুষ্টিচাহিদা পূরণ না হলে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের রোগ। এ ক্ষেত্রে শাকসবজি তুলনাহীন। বিশেষ করে শীতের এই সময় বাজারে পাওয়া যায় নানা ধরনের শাকসবজি। পুষ্টিবিজ্ঞানের তথ্য অনুসারে, সুস্থ থাকতে হলে দৈনিক একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির ২০০ গ্রাম শাকসবজি গ্রহণ করা উচিত। শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থসহ হাজারো পুষ্টি উপাদান রয়েছে। চলুন জেনে নিই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকয় রাখা কিছু শাক সম্পর্কে-
পালংশাক
পালংশাককে সুপারফুডও বলা হয়। পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। এটি মানুষের ত্বক ও শ্লেষ্মা ঝিল্লি থেকে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া পালংশাকে ভিটামিন সি, কে, ডি, আঁশ, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে। এগুলো আমাদের হাড়ের গঠন ও মজবুত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়।
পালংশাকের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। যেমন: এটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, বিভিন্ন সংক্রমিত রোগ থেকে রক্ষা করে এবং হৃদ্যন্ত্র সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ত্বকের বাইরের স্তরের আর্দ্রতা বজায় রাখে। এ ছাড়া ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।
পুঁইশাক
পুঁইশাক অতিপরিচিত, পুষ্টিগুণে ভরা, সহজলভ্য, সারা বছর পাওয়া যায় এবং সুস্বাদু শাকের মধ্যে পুঁইশাকের তুলনা নেই। পুঁইশাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন বি, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ। পাশাপাশি রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং আয়রন। পুঁইশাক রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি, ত্বকের সুস্থতা বাড়াতে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় বেশ উপকারী। নিয়মিত পুঁইশাক খেলে পাইলস, ফিস্টুলা ও হেমোরয়েড হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
এছাড়া পুঁইশাক আমাদের শরীর থেকে সঠিকভাবে বর্জ্য নিষ্কাশন করে বদহজম, গ্যাস, অ্যাসিডিটিসহ নানা সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। পুঁইশাকের অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণ আছে। শরীরের কোনো অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ফুলে গেলে পুঁইশাকের শিকড় বেটে ওই স্থানে লাগালে উপশম পাওয়া যায়। মুখের ব্রণের সমস্যা দূর করতেও পুঁইশাকের কার্যকারিতা রয়েছে। খোসপাঁচড়া ও ফোড়ার সংক্রমণ রোধ করতেও পুঁইশাকের জুড়ি নেই।
লালশাক
অনেকে মনে করেন, রক্তশূন্যতা দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় বেশি বেশি লালশাক খাওয়া। ধারণাটি সত্য। তবে শুধু রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় আয়রনই নয়; এ শাকে রয়েছে আরও নানা গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান, যা শিশুদের শারীরিক বিকাশেও বিশেষ উপযোগী। এছাড়া এ শাকের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ ও ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি রক্তে কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। লালশাকে ক্যালরির পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে। মানবদেহের দাঁত ও অস্থি গঠনে, দাঁতের মাড়ির সুস্থতা রক্ষায় এবং মস্তিষ্কের বিকাশে লালশাকের কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। এ শাকের আঁশ বা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এটা বাড়তি ওজন কমাতেও সহায়ক।
পাটশাক
সোনালি আঁশ হিসেবে পরিচিত অর্থকরী ফসল পাট। কিন্তু এর পাতা বা পাটশাকেরও গুরুত্ব কম নয়। অধিকাংশ মানুষের পছন্দের দেশি বিভিন্ন শাকের তালিকায় প্রথম দিকেই থাকে পাটশাক। পাটশাক খেতে হালকা তিতা স্বাদের হলেও তোষা বা বগী পাটশাক খেতে দারুণ। পাটশাকে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিন এবং ভিটামিন সি। এছাড়া রয়েছে শর্করা, আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি–সহ প্রচুর খাদ্যশক্তি। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কমপক্ষে ৭৫০ মাইক্রোগ্রাম এবং শিশুদের ২৫০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ প্রয়োজন, যা অনায়াসেই পাটশাক থেকে পাওয়া সম্ভব।
কচুশাক
আমাদের দেশের অতিপরিচিত ও জনপ্রিয় একটি শাকের নাম কচুশাক। গ্রামাঞ্চলে পতিত জমিতেই দেখতে পাওয়া যায় এই গাছ। কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ। এ ছাড়া রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন। সংগত কারণেই আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা ভিটামিন এ–র অন্যতম উৎস হিসেবে রাতকানা রোগসহ এই ভিটামিনের অভাবে বিভিন্ন রোগ থেকেও মুক্তি দিতে পারে কচুশাক।
গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য দারুণ উপকারী এই শাক হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া রক্তস্বল্পতা সমস্যার সমাধান, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি এবং শরীরের অক্সিজেন সরবরাহ চলমান রাখতে এবং দাঁত ও হাড় ভালো রাখতে কচুশাক বেশ কার্যকর। কচুশাক ভর্তা এবং তরকারি হিসেবে দারুণ সুস্বাদু।
মুলাশাক
মুলা নাম শুনেই অনেকে চোখ কুঁচকান। অনেকেই মুলা খেতে চান না। তবে মুলা শাক স্বাদে বেশি মজার না হলেও এর রয়েছে অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা। এ শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও এতে মলিবডেনাম, পটাসিয়াম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ ফলিক এসিড রয়েছে। মুলাশাক অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান সমৃদ্ধ সবজি। এটি নিয়মিত খেলে অ্যালার্জি ও হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।
কলমি শাক
কলমি শাক হচ্ছে গ্রামবাংলার অতি সাধারণ শাক। এর রয়েছে দুর্দান্ত উপকারিতা। কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। তাই সর্দি-কাশির সমস্যা থাকলে খেতে পারেন। তবে খুব বেশি সময় ধরে রান্না না করাই ভালো। কলমি শাক ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস। তাই শিশুদের জন্য এটি বেশ উপকারী। তাছাড়া যে কোনও বয়সেই শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করতে পারে এই শাক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের কিডনির সমস্যা, দুর্বল হজম শক্তি, ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা, কিডনির রোগ আছে তাদের কলমি শাক খাওয়া উচিত নয়।
গিমা শাক বা ডেমি শাক
গিমা শাক আগাছার মতো জন্মায়। গিমা লতানো বিশিষ্ট শাক। এটি অজীর্ণ, জন্ডিস, জ্বর, পিত্ত, কফে উপকারী। তিতা বলে মুখের অরুচি চলে যায়। এই জংলী শাকটি ডায়াবেটিকে উপকারী। হারবাল চিকিৎসার ক্ষেত্রে মূলত রিউমেটিকের ব্যাথা ও সোরিয়াসিস হারবাল ওষুধ তৈরির কাজে এর কাণ্ড, পাতা, ফুল সবই কাজে লাগে। কোস্টকাঠিন্য, পাকস্থলি ও অন্ত্রের সমস্যা, রক্তপ্রবাহে সমস্যা, অ্যাজমা, ফুসফুস সংক্রান্ত রোগ, ভিটামিন সি এর অভাব জনিত স্কিন ডিজিজ যেমন স্কার্ভি, চুলকানি, মাংসপেশি ও হাড়ের ব্যথার জন্য গিমা শাক খুবই উপকারী। গিমা শাক খেলে অ্যাসিডিটি ও গ্যাসের প্রকোপ কমে। এছাড়া গিমা শাক ওজন কমাতেও খুবই কার্যকরী। দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে গিমা শাক দারুণ উপকারী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।