ভোরের আলো ফুটতেই হাজার কাজের ভিড়। অফিসের টার্গেট, সন্তানের স্কুল, বাড়ির দায়িত্ব – একটার পর একটা দৌড়ঝাঁপে কখন যে দিন শেষ হয়ে যায়, টেরও পাওয়া যায় না। এই ব্যস্ততার মাঝে নিজের জন্য সময় বের করা যেন বিলাসিতা! ফলাফল? অবসাদ, অনিদ্রা, পিঠে ব্যথা, রক্তচাপের দোলাচল, ওজন বৃদ্ধি – অসুখ নামের অচেনা অতিথি ধীরে ধীরে বাড়ি করে নেয় শরীরে। কিন্তু জানেন কি, এই রোজকার জীবনের ছোট ছোট অভ্যাসেই লুকিয়ে আছে সুস্থ থাকার সহজ উপায়? না, এটা কোনো জটিল মেডিকেল প্রেসক্রিপশন নয়, কিংবা ব্যয়বহুল জিম মেম্বারশিপও নয়। এগুলো হলো সেই মৌলিক, প্রায় অবহেলিত রুটিনগুলো, যেগুলো চর্চা করলে আপনি পেয়ে যাবেন প্রাণবন্ত, কর্মক্ষম ও সুস্থ এক জীবন। ঢাকার গুলশান কিংবা সিলেটের গ্রাম – এই টিপসগুলো প্রতিটি বাঙালির জীবনযাপনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আসুন, খুঁজে বের করি সেই সহজ পথগুলো, যা আপনাকে দেবে কাঙ্ক্ষিত সুস্থতা।
সুস্থ থাকার সহজ উপায়: দৈনন্দিন রুটিনে ছোট্ট বদলেই বড় সাফল্য
সুস্থতা কখনোই আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়; এটি তৈরি হয় প্রতিদিনের ছোট ছোট সিদ্ধান্তের সমষ্টি থেকে। ভাবছেন, ব্যস্ততার মাঝে কীভাবে শুরু করবেন? চিন্তা নেই। শুরুটা হতে পারে ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পরের প্রথম পাঁচ মিনিট দিয়ে। সূর্যোদয়ের আগে উঠে পড়ুন। গবেষণা বলে, ভোরে ওঠার অভ্যাস শুধু যে আপনার দিনকে দীর্ঘ করে তাই নয়, এটি মানসিক চাপ কমায়, মেজাজ ভালো রাখে এবং বিপাকক্রিয়া সচল রাখতে সাহায্য করে। ঢাকার বায়ুদূষণের কথা মাথায় রেখে বাড়ির বারান্দা বা ঘরের খোলা জানালার পাশে দাঁড়ান। গভীর শ্বাস নিন। পাঁচ মিনিটের এই শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম (Deep Breathing) আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে, অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ায় এবং সারা দিনের জন্য প্রাণশক্তি জোগায়। এটি আপনার রোজকার জীবনের প্রথম স্মার্ট টিপস।
পানি পান করুন পর্যাপ্ত। সকালে খালি পেটে এক থেকে দুই গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করলে হজমশক্তি বাড়ে, শরীরের টক্সিন দূর হয় এবং ত্বক সতেজ থাকে। সারাদিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান নিশ্চিত করুন। মনে রাখবেন, পর্যাপ্ত পানি পান শুধু তৃষ্ণা মেটায় না, কিডনি সুস্থ রাখে, মাথাব্যথা কমায় এবং ক্লান্তি দূর করে। অফিসে বসে কাজ করলেও ডেস্কে পানি রাখুন এবং প্রতি এক ঘণ্টা পর পর কিছুটা পান করুন।
হাঁটাকে করুন আপন সঙ্গী: বাংলাদেশে, বিশেষ করে শহুরে জীবনে, নিয়মিত ব্যায়ামের জন্য আলাদা সময় বের করা কঠিন। সমাধান? হাঁটা! দিনে মাত্র ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা (Brisk Walking) আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি ৩০% পর্যন্ত কমাতে পারে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে, হাড় শক্ত করে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে। ঢাকার রমনা পার্ক, চট্টগ্রামের ফয়েজ লেক, বা আপনার বাসার আশেপাশের ফুটপাথ – যেকোনো জায়গা হতে পারে আপনার হাঁটার ময়দান। অফিসে লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। এক স্টপ আগে নেমে বাকি পথ হেঁটে যান। এই ছোট্ট অভ্যাসগুলোই রোজকার জীবনে যোগ করবে সুস্থতার বড় দিক।
প্রধান উপকারিতা:
- মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এন্ডোরফিন নামক ‘ফিল-গুড’ হরমোন নিঃসরণ করে, উদ্বেগ ও হতাশা কমায়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: পর্যাপ্ত পানি ও মাঝারি ব্যায়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে, সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে জটিল রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা বাড়ায়।
- শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়: নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম শরীরে শক্তির মাত্রা বাড়ায়, ক্লান্তি দূর করে, কাজে মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
পুষ্টি ও খাদ্যাভ্যাস: সুস্থ জীবনের ভিত্তি প্রস্তর
আমাদের শরীর গড়ে ওঠে আমাদের খাওয়া খাবারের মাধ্যমেই। তাই সুস্থ থাকার সহজ উপায় এর অন্যতম স্তম্ভ হলো সচেতন খাদ্যাভ্যাস। বাংলাদেশের সমৃদ্ধ কৃষি আমাদের হাতের নাগালেই এনে দিয়েছে পুষ্টির ভাণ্ডার। চাল-ডাল-মাছ-শাকসবজি – আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবারই কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য আদর্শ।
স্থানীয় ও মৌসুমী খাবারের গুরুত্ব: ঢাকার কারওয়ান বাজারে গেলেই পাওয়া যায় নানা রকমের তাজা শাকসবজি ও ফল। মৌসুমী ফল (আম, জাম, লিচু, আনারস, পেয়ারা, কমলা) ও সবজি (লাউ, কুমড়ো, ঢেঁড়স, পাটশাক, ডাটা) খান। এগুলোতে ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে প্রচুর পরিমাণে, যা শরীরকে রোগমুক্ত রাখে এবং বাজারের আমদানিকৃত ফল-সবজির তুলনায় সস্তা ও টাটকা।
ভাতের প্লেটে ভারসাম্য আনুন: ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য। কিন্তু শুধু ভাত আর আলুভর্তা নয়। প্লেটের অর্ধেক ভরে নিন নানা রঙের শাকসবজি দিয়ে (যেমন: পালং শাক, লাল শাক, ফুলকপি, গাজর, শিম)। এক-চতুর্থাংশ রাখুন প্রোটিনের জন্য (মাছ, মুরগি, ডাল, ডিম)। বাকি এক-চতুর্থাংশে রাখুন ভাত বা রুটি। এতে করে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন-মিনারেলের সুষম সমন্বয় হবে।
চিনি ও লবণের ফাঁদ এড়িয়ে চলুন: প্যাকেটজাত জুস, কোল্ড ড্রিংকস, বেকারি আইটেম, প্রক্রিয়াজাত খাবারে লুকিয়ে থাকে অতিরিক্ত চিনি ও লবণ। এগুলো উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ওবেসিটির ঝুঁকি বাড়ায়। চা-কফিতে চিনির পরিমাণ কমিয়ে আনুন ধীরে ধীরে। খাবারে বাড়তি নুন না দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। বাড়িতে রান্নায় সাদা লবণের বদলে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করুন, তবে পরিমিতভাবে।
সময়মতো খাওয়া জরুরি: সকালের নাস্তা কখনোই বাদ দেবেন না। এটি সারাদিনের শক্তির প্রধান উৎস। দুপুরের খাবার সময়মতো খান। রাতের খাবার ঘুমানোর অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে সেরে ফেলুন। এতে হজম ভালো হয়, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে না এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। হালকা ক্ষুধা পেলে অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসের বদলে ফল, বাদাম বা দই খান।
বাংলাদেশি সুপারফুডস:
- ডাল: প্রোটিন ও ফাইবারের দারুণ উৎস। মসুর, মুগ, মাসকালাই ডাল রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখুন।
- সরিষার শাক: আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, সি, কে-তে ভরপুর। শীতকালে নিয়মিত খান।
- ইলিশ মাছ: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের রাজা, হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- আমলকী: ভিটামিন সি-এর শক্তিঘর, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
মানসিক সুস্থতা: যে অধ্যায়টি আমরা প্রায়ই ভুলে যাই
শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ থাকার সহজ উপায় শুধু শরীর নয়, মনকেও সামলানোর কৌশল শেখায়। বাংলাদেশের দ্রুত বদলাতে থাকা সমাজ, অর্থনৈতিক চাপ, পারিবারিক প্রত্যাশা – সব মিলিয়ে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস এখন নিত্যসঙ্গী। এই চাপ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে তা শরীরের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
মাইন্ডফুলনেসের চর্চা: প্রতিদিন মাত্র ১০-১৫ মিনিট নিজের জন্য সময় বের করুন। চোখ বন্ধ করে শান্ত স্থানে বসুন। শুধু আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিন। যখন অন্য চিন্তা আসবে, সেগুলোকে নাড়াচাড়া না করে আস্তে আস্তে শ্বাসের দিকে ফিরে আসুন। এই সহজ মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন উদ্বেগ কমায়, মনোযোগ বাড়ায় এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের গবেষণায়ও মাইন্ডফুলনেসের ইতিবাচক প্রভাব উঠে এসেছে।
যথেষ্ট ঘুম অপরিহার্য: রাত জেগে সিরিয়াল দেখা বা সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করার অভ্যাস ত্যাগ করুন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রাতে ৭-৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম প্রয়োজন। ঘুমের সময় শরীর মেরামত হয়, স্মৃতি সংগঠিত হয়, হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা হয়। ঘুমের অভাব স্থায়ীভাবে ওজন বাড়ায়, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায়। ঘুমানোর আগে ১ ঘণ্টা স্ক্রিন টাইম বন্ধ করুন। ঘর অন্ধকার ও শীতল রাখুন। নিয়মিত ঘুমের সময় নির্ধারণ করুন।
শখের কাজ করুন: জীবনে আনন্দ খুঁজে পাওয়ার জন্য নিজের পছন্দের কাজ করুন। গান শুনুন, বই পড়ুন, ছবি আঁকুন, বাগান করুন, রান্না শিখুন – যা আপনার মন ভালো রাখে। এই শখের কাজগুলো মানসিক চাপ কমাতে দারুণ কার্যকর। সপ্তাহে অন্তত কয়েক ঘণ্টা নিজের জন্য বরাদ্দ রাখুন।
না বলতে শিখুন: সব সময় সবাইকে খুশি করার চেষ্টা করা অসম্ভব এবং তা মানসিক চাপের কারণ। নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝুন এবং প্রয়োজনে দায়িত্ব বা আমন্ত্রণে ‘না’ বলার সাহস রাখুন। এটি আপনার শক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ কাজে কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করবে।
মানসিক চাপ কমাতে স্থানীয় উপায়:
- তুলসি পাতা চা: তুলসি পাতার অ্যান্টি-স্ট্রেস গুণাগুণ রয়েছে। ৪-৫টি তুলসি পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে সামান্য মধু মিশিয়ে পান করুন।
- প্রাণায়াম: যোগব্যায়ামের শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল (যেমন: অনুলোম-বিলোম) স্নায়ু শান্ত করে।
- প্রকৃতির সান্নিধ্য: সপ্তাহে একবার পার্কে বা নদীর পাড়ে সময় কাটালে মন সতেজ হয়।
সামাজিক সংযোগ ও সম্প্রদায়ের ভূমিকা: একাকীত্ব নয়, সম্প্রীতিই সুস্থতার চাবি
মানুষ সামাজিক প্রাণী। শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন ও সম্প্রদায়ের সাথে সংযোগ সুস্থ থাকার সহজ উপায় এর একটি অত্যন্ত শক্তিশালী কিন্তু প্রায়ই উপেক্ষিত দিক। গবেষণায় দেখা গেছে, দৃঢ় সামাজিক সম্পর্ক দীর্ঘায়ু বাড়ায়, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ায়।
পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটান: ব্যস্ততার মাঝেও পরিবারের সদস্যদের সাথে একসাথে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। এই সময়ে মোবাইল ফোন দূরে রাখুন। প্রকৃত কথোপকথন করুন। সপ্তাহান্তে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন, একসাথে হাঁটতে যান কিংবা পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করুন। এই সহজ সামাজিক মিথস্ক্রিয়া আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অমূল্য ভিটামিনের মতো কাজ করে।
সম্প্রদায়ের সাথে যুক্ত হোন: আপনার আশেপাশের স্থানীয় কমিউনিটির কার্যক্রমে অংশ নিন। মসজিদ/মন্দির/গীর্জা/প্যাগোডার অনুষ্ঠান, স্থানীয় ক্রীড়া ক্লাব, সাংস্কৃতিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম – যেকোনো কিছুতে অংশগ্রহণ করুন। এটি আপনাকে বৃহত্তর লক্ষ্যের সাথে যুক্ত করবে, একাকীত্ব দূর করবে এবং আত্মমূল্যবোধ বাড়াবে। বাংলাদেশে অনেক এলাকায় ইয়োগা গ্রুপ, ওয়াকিং ক্লাব গড়ে উঠছে – এগুলোতে যোগ দিন।
দয়া ও কৃতজ্ঞতার অভ্যাস: প্রতিদিন ছোট ছোট কাজে অন্যদের সাহায্য করুন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। সকালে উঠে বা রাতে ঘুমানোর আগে ৩টি জিনিসের কথা ভাবুন যার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ (যেমন: সুস্থ শরীর, প্রিয়জনের ভালোবাসা, সুন্দর সকাল)। এই কৃতজ্ঞতার অনুশীলন মনকে ইতিবাচক রাখে, হতাশা কমায় এবং সামগ্রিক সুখবোধ বাড়ায়।
প্রযুক্তির সাহায্য নিন: আপনার পকেটেই স্বাস্থ্য কোচ
এই ডিজিটাল যুগে সুস্থ থাকার সহজ উপায় আরও সহজ হয়েছে স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে। অনেক ভালো মানের অ্যাপ আছে যা আপনাকে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।
- ফিটনেস ট্র্যাকার: Google Fit, Samsung Health বা Fitbit অ্যাপ আপনার হাঁটার পদক্ষেপ, দূরত্ব, ক্যালোরি বার্ন এবং ঘুমের ধরণ ট্র্যাক করতে পারে। এটি আপনাকে লক্ষ্য স্থির করতে এবং অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে সাহায্য করে।
- মেডিটেশন অ্যাপ: Headspace, Calm, বা Insight Timer-এর মতো অ্যাপ গাইডেড মেডিটেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং ঘুমের সাহায্য প্রদান করে। এগুলো ব্যবহার শুরু করা সহজ করে তোলে।
- হাইড্রেশন রিমাইন্ডার: Water Drink Reminder বা Daily Water Tracker এর মতো অ্যাপ আপনাকে নিয়মিত বিরতিতে পানি পান করার জন্য মনে করিয়ে দেবে।
- খাদ্য ডায়েরি অ্যাপ: MyFitnessPal বা FatSecret এর মতো অ্যাপে আপনি যা খাচ্ছেন তা লগ করতে পারেন, ক্যালোরি ট্র্যাক করতে পারেন এবং পুষ্টির ভারসাম্য বোঝার চেষ্টা করতে পারেন।
সতর্কতা: অ্যাপগুলো সাহায্যকারী, তবে একমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস নয়। কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শই সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, স্বাস্থ্য বাতায়ন (https://sheba.gov.bd/) অথবা জাতীয় পুষ্টি পরিষেবা (National Nutrition Services) এর ওয়েবসাইটে নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়।
আপনার রোজকার জীবনের এই ছোট ছোট স্মার্ট টিপস গুলোই ধীরে ধীরে গড়ে তুলবে একটি মজবুত, রোগমুক্ত ও প্রাণবন্ত জীবনের ভিত্তি। মনে রাখবেন, একদিনে সব বদলানোর চেষ্টা নয়, ছোট ছোট ধাপে শুরু করুন। আজ থেকে একটি অভ্যাস বেছে নিন – হতে পারে সেটা সকালে এক গ্লাস পানি পান করা, কিংবা ১০ মিনিট হাঁটা, কিংবা ৫ মিনিট গভীর শ্বাস নেওয়া। ধারাবাহিকতাই সাফল্যের চাবিকাঠি।
জেনে রাখুন –
১। সুস্থ থাকার সবচেয়ে সহজ উপায় কি কি?
সুস্থ থাকার সহজ উপায়ের মধ্যে অন্যতম হলো দৈনন্দিন ছোট অভ্যাসে বদল আনা। নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পানি পান করা, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা শারীরিক পরিশ্রম করা, তাজা ও মৌসুমী ফল-শাকসবজি খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুমানো (৭-৮ ঘণ্টা) এবং মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করা (যেমন: গভীর শ্বাস নেওয়া, শখের কাজ করা)। এই মৌলিক বিষয়গুলো নিয়মিত চর্চা করেই বড় ধরনের উন্নতি দেখা যায়।
২। ওজন কমানোর জন্য কি খুব কঠিন ডায়েট মেনে চলতে হয়?
মোটেও না। কঠোর ডায়েট প্রায়ই টেকসই হয় না। বরং সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলাই উত্তম। ভাত/রুটির পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে প্লেটের অর্ধেক শাকসবজি, এক-চতুর্থাংশ প্রোটিন (মাছ/মাংস/ডাল/ডিম) এবং বাকি অংশে কার্বোহাইড্রেট রাখুন। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত তেল-চিনি-লবণ এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত হাঁটাচলা ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার (শাকসবজি, ফল, ডাল) খাওয়াই ওজন নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি।
৩। মানসিক চাপ কমাতে ঘরোয়া উপায় কি?
মানসিক চাপ কমাতে বেশ কিছু ঘরোয়া ও সহজ পদ্ধতি কার্যকর। প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট গভীর শ্বাসের ব্যায়াম (প্রাণায়াম) বা মেডিটেশন করুন। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন (হাঁটা, যোগব্যায়াম ইত্যাদি)। পছন্দের গান শুনুন বা শখের কাজে সময় দিন। তুলসি পাতা বা গ্রিন টি পান করুন। প্রিয়জনের সাথে খোলামেলা কথা বলুন। প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটানোর চেষ্টা করুন।
৪। অফিসে বসে কাজ করি, সুস্থ থাকব কিভাবে?
ডেস্ক জবেও সুস্থ থাকা সম্ভব কিছু সচেতনতায়। প্রতি ৩০-৪৫ মিনিট পর পর ৫ মিনিট হাঁটুন বা স্ট্রেচ করুন। বসার পোস্টার ঠিক রাখুন – পিঠ সোজা, পা সমতলে। ডেস্কে পানি রাখুন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন। লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। দুপুরের খাবারে ভারী ভাত-রুটির বদলে সালাদ, সবজি, ডাল, পাতলা ঝোল রাখুন। চোখের বিরতি নিন – প্রতি ২০ মিনিট কম্পিউটারে কাজ করার পর ২০ সেকেন্ড দূরে (২০ ফুট দূরত্বে) তাকান।
৫। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সুস্থ থাকার উপায় কি আলাদা?
বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিছু বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হয়। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার (দুধ, দই, ছোট মাছ, ডিম) বেশি খান হাড় মজবুত রাখতে। প্রোটিনের পরিমাণ ঠিক রাখুন পেশী ক্ষয় রোধে। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে রুটিন চেকআপ করান (রক্তচাপ, রক্তে শর্করা, কোলেস্টেরল ইত্যাদি)। হাঁটা, সাঁতার বা হালকা যোগব্যায়াম চালিয়ে যান। সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকুন এবং মানসিকভাবে সতেজ থাকার চেষ্টা করুন।
৬। রোজকার জীবনে সুস্থ থাকার জন্য কোন অভ্যাসগুলো সবচেয়ে জরুরি?
রোজকার জীবনে সুস্থ থাকার জন্য পাঁচটি অভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
১. পর্যাপ্ত পানি পান: সারাদিনে ৮-১০ গ্লাস।
২. নিয়মিত চলাফেরা: দিনে কমপক্ষে ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা।
৩. সুষম ও তাজা খাবার: ভাত-রুটি, শাকসবজি, ফল, প্রোটিনের ভারসাম্য।
৪. গুণগত ঘুম: রাতে ৭-৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম।
৫. মানসিক যত্ন: চাপ কমানোর কৌশল (শ্বাস ব্যায়াম, শখ) চর্চা এবং সামাজিক সম্পর্কে যত্ন নেওয়া।
সুস্থ থাকার এই সহজ পথচলায় আজই প্রথম পদক্ষেপটি নিন – হয়তো সকালের এক গ্লাস পানি দিয়ে, কিংবা অফিসে লিফটের বদলে সিঁড়ি বেয়ে উঠে। মনে রাখবেন, প্রতিটি ছোট সিদ্ধান্তই আপনাকে নিয়ে যাবে বড় এক সুস্থ জীবনের দিকে। আপনার শরীর ও মনই আপনার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ; এর যত্ন নেওয়াই জীবনের সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। এই রোজকার জীবনের স্মার্ট টিপস গুলোকে সঙ্গী করে, নিজের জন্য একটু সময় বের করুন, একটু সচেতন হোন। কারণ, সুস্থ থাকার সহজ উপায় আসলে আপনার দৈনন্দিন জীবনযাপনের মধ্যেই নিহিত। শুরু করুন আজই, আপনার সুস্থ ভবিষ্যতের পথে এই যাত্রায় আমরা আপনার সাথেই আছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।